খালেদার চিকিৎসা কোথায়, সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির দাবি অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করছে সরকার। আজ রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। মন্ত্রী যখন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন সেখানে আসেন কারা মহাপরিদর্শক ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ। তখন তাকে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই বিএনপি নেত্রীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

শনিবার ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেখে এসে তার ব্যক্তিগত চারজন চিকিৎসক জানান, গত ৫ জুন খালেদা জিয়া পড়ে গিয়েছিলেন এবং সে সময়কার কথা তার মনে নেই। তাদের ধারণা, বিএনপি নেত্রীর মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছিল এবং তাকে দ্রুত হাসপাতাল ভর্তি না করলে যেকোনো সময় বড় ধরনের স্ট্রোক হতে পারে।

এই চিকিৎসকরা হলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী, ডেল্টা মেডিকেলের নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চক্ষু বিশেষজ্ঞ আবদুল কুদ্দুস এবং কার্ডিওলজিস্ট মোহাম্মদ মামুন।

এদের মধ্যে গত ২৮ এপ্রিল বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ওয়াহিদুর জানিয়েছিলেন, কারাগারে থাকলে খালেদা জিয়া প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন। আর কুদ্দুস জানিয়েছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। অন্য একজন বলেছিলেন, বিএনপি নেত্রীর প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে ভিন্নতা আছে। তিনি বলেন, ‘এখন ওনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত ভালো অবস্থায় আছেন। তার ব্লাড সুগার এবং শারীরিক যে অন্যান্য কন্ডিশন সেটি ভালো আছে। তার চলাচলও স্বাভাবিক।’

আবার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসকরা। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকদের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করছেন।

খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধা কোথায়- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং এখানকার যেসব যন্ত্রপাতি তাও অত্যাধুনিক এবং চিকিৎসকরাও অত্যন্ত ভালো মানের। তাদেরকে দেখাব, তারা যদি পরামর্শ দেয়, তাহলেই আমরা নেব।’

খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনার কথা বেলা সাড়ে ১১টার দিকেই জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে কখন আনা হবে সেই সময় জানাতে পারেননি তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হবে।’

‘হঠাৎ করেই খালেদা জিয়া অসুস্থতার কথা জানান। পরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক তাকে গতকাল দেখেছেন সিভিল সার্জনের সামনে। তিনি কিছু সমস্যার কথা বলেছেন এবং তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হবে।’

আইনমন্ত্রীর মতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানাতে পারেননি বিএনপি নেত্রীকে কখন আনা হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একজেক্ট টাইম বলতে পারব না, তবে যত দ্রুত সম্ভব তাকে নেয়া হবে এবং তার চিকিৎসায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।’

বেলা দুইটার দিকে আইজি প্রিজন আসেন মন্ত্রীর দপ্তরে। এ সময় তাকে উদ্দেশ্য করে কামাল বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের বলে দিয়েছি, আপনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন।’

‘ওনার (খালেদা জিয়া) ইচ্ছা অনুযায়ী করেন। কিন্তু এক্সপার্ট ওপিনিয়ন নিয়ে নেবেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ভিসি কনক কান্তি বড়ুয়া একজন ভালো সার্জন, তার পরামর্শ নিয়ে নিয়েন।’

আইজি প্রিজন বলেন, ‘মন্ত্রী বলে দিয়েছেন, আমি বলব না। তবে আমি এখন খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করব, তিনি যখন চান তখন নেব।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের পর থেকে তিনি ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। গত ২৮ মার্চ তার অসুস্থতার কথা শোনা যায় এবং ১ এপ্রিল গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড।

এর মধ্যে ২৯ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে তাদের নেত্রীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানান। এ নিয়ে পরে অন্য রাজনৈতিক গুঞ্জন ছড়ায় যে বিএনপি সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যেতে চাইছে কি না। তবে বিএনপি পরে অবস্থান পাল্টে তাদের নেত্রীকে ইউনাইটেডে ভর্তির দাবি জানায়।

গত ৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এনে বেশ কিছু এক্সরে করা হয়। তখন তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা মত দেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই বিএনপি প্রধানের।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর