রমজান মাসের শেষ দিনগুলোর ভাবনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রমজানের যে মুহূর্তগুলো এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, অযথা গল্পগুজব আর হাটবাজারে সময় নষ্ট না করে জিকির, তেলাওয়াত, দরুদ এবং ইস্তেগফারসহ নানামুখী আমলের মাধ্যমে সময়গুলো কাজে লাগাতে হবে

এই তো সেদিন রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের বার্তা নিয়ে আগমন হলো পবিত্র মাহে রমজানের। অথচ এরই মধ্যে মহিমান্বিত সেই মাসটির বিদায়ের ঘণ্টা বেজে উঠেছে। অনেক বিষয় ভাবনার সময় এখন। হ্যাঁ, ভাবনার এই সময়ে রমজান এবং ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার লাভের পরিমাণ নিয়ে ভাবছেন। কর্মজীবী এবং চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাসের অর্থ কীভাবে সঠিক কাজে লাগাবেন, এ নিয়ে ভাবছেন। সবাই নিজ নিজ বৈষয়িক হিসাব কষেই চলেছেন। কিন্তু প্রকৃত মোমিন মুসলমানদের জন্য এই মুহূর্তে সেইসব ভাবনা এবং হিসাব-নিকাশের অনেক ঊর্ধ্বে গিয়ে আরও কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।

যে মহান মাসটি আমরা অতিক্রম করতে যাচ্ছি, সে মাসের নাম উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদে এরশাদ করেছেন, ‘রমজান তো সেই মহান মাস, যে মাসে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন, যা অবতীর্ণ হয়েছে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ, আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী হিসেবে। সুতরাং যে এই মাসকে পাবে, সে যেন রোজা রাখে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এখন আমাদের ভাবনার বিষয় হলো, কোরআন নাজিলের এই সুমহান মাসে আমরা নিজেদের কতটা কোরআনের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি? কোরআনের হেদায়েতের বাণীগুলো অনুধাবন করে আমরা নিজেদের কতটা শুধরাতে সক্ষম হয়েছি?

মোমিন ও মুসলমান হিসেবে আমাদের এই মাসের সর্বপ্রধান আমল ছিল সিয়াম তথা রোজা পালন করা। এই রোজার বিধান ব্যক্ত করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মোত্তাকি হতে পারো।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)। এখন ভাবার সময় এসেছে, দয়াময়ের হুকুম অনুযায়ী আমরা কি পেরেছি যথাযথভাবে রোজাগুলো পালন করতে?

আমাদের রোজাগুলো কি সেই মানে উত্তীর্ণ ছিল, যে মানের একেকটি রোজা আমাদের মোত্তাকি পরহেজগার হওয়ার ক্ষেত্রে এবং দয়াময় প্রভুর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হওয়ার পথে একেকটি শক্তিশালী ধাপ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে? নাকি আমাদের উদাসীনতা, অবহেলা এবং পাপাচারের কারণে রোজাগুলো ছিল শুধুই উপবাস থাকা? যে বিষয়ে প্রিয়নবী (সা.) সতর্ক করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা আচার ছাড়তে পারল না, তার (রোজা রেখে) খানাপিনা ছেড়ে দেওয়াতে আল্লাহর কোনোই কাজ নেই। (বোখারি : ১৯০৩)।

মাসটি ছিল ধৈর্য ও সহমর্মিতার মাস। আমাদের ভাবতে হবে, সবর এবং সহমর্মিতায় আমরা কতটা অগ্রসর হতে পেরেছি? অধিক হারে আন্তরিকতাপূর্ণ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাব্বুল আলামিনের নৈকট্যশীল হওয়ার বিরাট সুযোগ ছিল এই মাসে। আমরা কি আমাদের সময়গুলো ইবাদতের মাধ্যমে মূল্যবান করতে পেরেছি? রাব্বুল আলামিনের নৈকট্যশীল হওয়ার জন্য যে মানের ইবাদত করা প্রয়োজন ছিল, আমাদের ইবাদতগুলো কি সেই মানের কিংবা তার কাছাকাছি মানের হয়েছে? সময় আমাদের হাতে বেশি বাকি নেই।

মহিমান্বিত রমজান মাস কিন্তু বিদায় নিয়েই যাচ্ছে। এখনই আমাদের ভাবতে হবে, হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে দেখতে হবে। হিসাবের খাতা যদি কিছুটাও আশাব্যঞ্জক হয়, তার জন্য আল্লাহর শুকুর আদায় করব। আর যদি দেখা যায় হিসাবের খাতা একেবারেই হতাশাজনক, তবে অনুশোচনাগ্রস্ত হয়ে তওবা ও ইস্তেগফারে পরিপূর্ণ আত্মনিয়োগ করার এখনই সময়।

রমজানের যে মুহূর্তগুলো এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, অযথা গল্পগুজব আর হাটবাজারে সময় নষ্ট না করে, জিকির, তেলাওয়াত, দরুদ এবং ইস্তেগফারসহ নানামুখী আমলের মাধ্যমে সময়গুলো কাজে লাগাতে হবে। সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, যেন আমরা নবী আকরাম (সা.) এর নিম্নোক্ত হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।

নবীজি এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি তোমদের জন্য তারাবি নামাজকে সুন্নত করে দিয়েছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে সওয়াবের আশায় এই মাসের রোজা পালন করবে এবং তারাবি নামাজ আদায় করবে, সে আপন গোনাহগুলো থেকে ঠিক সেই দিনের মতোই পবিত্র হয়ে যাবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।’ (নাসায়ি : ২২১০)।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর