ষড়ঋতুর রঙ্গমঞ্চ বাংলাদেশ। বাংলার প্রকৃতি কখনও প্রাণোচ্ছ্বল চঞ্চলা-চপলা, কখনও ক্রন্দনরতা অভিমানিনী। কখনওবা জীর্ণ-নিষ্প্রভ। আবার কখনও স্নিগ্ধতার আবেশ। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় শ্রাবণের অঝোরধারার পর আসে শরৎ।
শরৎ মানেই আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। চারদিকে শান্ত, সমাহিত ভাব। নদীর তীরে, বনের প্রান্তে শুভ্র কাশফুলের রাশি। মৃদু বাতাসে বিলের পানিতে কাঁপন। সাদা কাশফুল, শিউলি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, আর দিনভর আলোছায়ার খেলা এসব মিলেই তো শরৎ! শুভ্রতার প্রতীক শরৎ!
চারদিকে মেঘ, বৃষ্টি আর রোদের খেলা। নেই মলিনতা। চারপাশে যেন নির্মল আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। প্রকৃতিতে চলে অনাবিল রঙের আনাগোনা।
ঋতু পরিক্রমায় বাংলা ভাদ্র আর আশ্বিন- এ দুই মাস মিলেই শরৎকাল। নীল আকাশে বাঁধনহারা সাদা মেঘের পদসঞ্চার জানান দিয়ে দেয় স্নিগ্ধ শরৎ এসেছে। নির্মল আকাশে শুভ্র মেঘের উড়োউড়ি সত্যিই মধুর। জীবনানন্দের রূপসী বাংলায় যেন নতুন প্রাণের ছোঁয়া লাগে। নব যৌবন বিকশিত হয় শরতের আকাশে।
সাদা মেঘের ভেলায় শুভ্র শরৎশরতের প্রধান আকর্ষণ কাশফুল! নদীর তীরে বনের প্রান্তে কাশফুলের রাশি অপরূপ শোভা ছড়ায়। এ অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। গাছে গাছে শিউলির মন ভোলানো সুবাস। প্রাণে প্রাণে অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। মেঘহীন আকাশে গুচ্ছ কাশফুলের মতো সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় মন। চারপাশের শুভ্রতার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি যেন আনন্দের বারতা নিয়ে আসে। দিগন্তজুড়ে সাতরঙা হাসিতে ফুটে ওঠে রংধনু।
প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ এ ঋতুর সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রিয়তমাকে। অনেকের মতে, শরৎকালে নাকি মনটা নেচে ওঠে অনেকটা উৎসবের নেশায়!