তারেকের হাতে আমলনামা : শিগগিরই শুদ্ধি অভিযান

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া লন্ডনে তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে দলকে পুনর্গঠনের একটা নতুন উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিএনপিতে সাংগঠনিক সংকট চলছে বহুদিন ধরে এবং সরকারের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তৃণমূল পর্যায় থেকে সমালোচনাও বাড়ছে। এই অবস্থায় লন্ডনে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার এই সাক্ষাৎ থেকে দল পুনর্গঠনে একধরণের উদ্যোগ আশা করছেন তারা। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, দল পুনর্গঠনের ব্যাপারে তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের পরামর্শ নেবেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে দুদফায় লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে ব্যর্থ হলে বিএনপির নেতা-কর্মিদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। সেই প্রেক্ষাপটে বিএনপির মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ অগ্রসর হতে পারেনি। দলটির নেতাদের অনেকে বলেছেন, তারেক রহমান লন্ডনে থাকলেও দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়াসহ সব বিষয়েই তিনি ভূমিকা রাখেন। ফলে এখন খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান মুখোমুখি আলোচনায় দল পুনর্গঠনের বিষয়েই গুরুত্ব দেবেন বলে তারা মনে করছেন।
লন্ডন থেকে বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দলীয় অগ্রাধিকারমূলক যে বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন তার পুরোভাগে থাকছে-দলে শুদ্ধিকরণ। বেগম জিয়ার সরলতার সুযোগ নিয়ে যেসব নেতা বিগত আন্দোলনে দ্বিমুখী, নিষ্ক্রিয় এবং রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেছেন তাদের একটি তালিকা রয়েছে তারেক রহমানের হাতে। এ তালিকায় বাদ নেই কেউই। আছেন সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, জেলা ও বিভাগীয় শহরের নিষ্ক্রিয় নেতারাও। কোন নেতার মুখের দিকে তাকানো হবে না।
দলকে নবধারায় সাজাতে বিএনপিতে শিগগিরই শুদ্ধি অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে কার কি ভূমিকা ছিলো-এই মাপকাঠিতে নির্দয়ভাবে অভিযান চালানো হবে। এর ভেতর দিয়ে কেন্দ্রীয় ও মহানগরসহ বিভিন্ন কমিটিতে নতুন মুখ যেমন আসবে, তেমনি কেউ কেউ পদ-পদবীও হারাবেন। এতে ডাকসাইটে অনেক নেতাই সাইড লাইনে ছিটকে পড়তে পারেন। দলীয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
দলের স্থানীয় এবং লন্ডনের সূত্রগুলো বলছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিচালনায় যেসব কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় এবং জেলা নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছিলো তাদের বেশিরভাগই ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছেন। নেতাদের খুঁজে পায়নি কর্মীরা। ফলে এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নিজেরাই বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন। এরপরও আন্দোলনের গতি ফেরাতে পারেননি।
জানা গেছে, তারেক রহমানের সঙ্গে তৃণমূলের অনেক নেতাই ফোন এবং মেইল এ যোগাযোগ রাখছেন। নেতাদের কথা- দুই দফা সরকারবিরোধী আন্দোলনে কেন্দ্রের তুলনায় বহুগুণ সক্রিয় ছিল তৃণমূল। মাঠে দেখা যায়নি দায়িত্বশীল নেতাদের। ঢাকা মহানগরও ব্যর্থতার পরিচয় দেয় শতভাগ। যে কারণে আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি। তাই নেতৃত্বের পরিবর্তন জরুরি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, দল পুনর্গঠনের জন্য শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হবে কেন্দ্র এবং ঢাকা মহানগর কমিটি থেকে। অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ত্যাগী এবং সাহসী নেতাদের। তারেক রহমানও মাঠ নেতাদের এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে, শুদ্ধি অভিযান হবে এবং যোগ্য ও সংগ্রামীরাই টিকে থাকবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে পুত্র এবং নাতনিদের সঙ্গে থাকবেন ১৫ দিন। তারেক রহমানের সঙ্গে দল পুনর্গঠন, পরবর্তী আন্দোলন ও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. ওসমান ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখ লন্ডনে এসে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর