দেশ এখন কারা চালায়

দেশ পরিচালনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোনো ‘নিয়ন্ত্রণ’ নেই বলে দাবি করেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, দেশ এখন কারা চালায়? বর্তমানে সরকার হচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। দল বা অঙ্গসংগঠনের ওপর আওয়ামী লীগের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আওয়ামী লীগ বা ১৪ দল হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়ক শক্তি। এটি গণতন্ত্রের জন্য অশুভ লক্ষণ।’ একান্ত আলাপচারিতায় এ মন্তব্য করেন বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। আওয়ামী যুবলীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ সংগঠনটির এখন আর চেইন অব কমান্ড বলতে কিছু নেই। নিজের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশপ্রধানকে চিঠি দেওয়ায় বোঝা যায়, নেতা-কর্মীদের ওপর সংগঠনের কোনো আস্থা নেই। নিজেরা কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তাই পুলিশপ্রধানকে শাস্তি দিতে বলছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যুবলীগের অফিস ভাঙচুর করল জাসদ নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর, এমনকি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও ভাঙচুর করা হলো। কই, যুবলীগ তো কিছুই করতে পারল না! আইসিটি অ্যাক্টে ভাঙচুরকারীদের কেন বিচার হলো না?’

যুবদল সভাপতি আলাল বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদ আলম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভুয়া ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালালেন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটু কথা বললে জেল হয়, কিন্তু দলের নেতা-কর্মীরা আইসিটি আইন ভঙ্গ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মাকসুদের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? এতেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে। দায়সারাভাবে যেমন চলছে সরকার, তেমনই দায়সারাভাবে চলছে যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এ ক্ষেত্রে ১৪ দলের কোনো ভূমিকা নেই।’ তিনি বলেন, ‘সরকার অনৈতিকভাবে শিক্ষায় সাড়ে ৭ ভাগ ভ্যাট বসিয়ে এ দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে নামাল। শুধু তা-ই নয়, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালাল ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কারও কোনো প্রতিবাদ করারও এখন সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুধু পারে, বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে। ক্ষমতাসীন দলে খুনোখুনিসহ কোনো অপকর্মে জড়ালেও তাদের শাস্তি হয় না।’ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘দেশে হায় হায় অবস্থা চলছে। বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করা হলো। শিক্ষায় ভ্যাট বসানো হলো। শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হলো। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আরও বাড়াল সরকার। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখন অসহায়। জীবন যেন আর চলছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কশাঘাতে তারা আজ ক্ষতবিক্ষত। সরকারের জবাবদিহি না থাকায় সাধারণ মানুষের ওপর এ ধরনের জুলুম-নির্যাতন বাড়ানো হয়েছে।’ যুবদলের সভাপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তাকে ছাড়া আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়। এতেই বোঝা যায়, আওয়ামী লীগের কী বেহাল দশা। গণমাধ্যমের সুবাদে জেনেছি, খাদ্যমন্ত্রী কামরুলের গম কেলেঙ্কারির পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, খাদ্যমন্ত্রীর কোনো কর্মসূচিতে যাবেন না। শিক্ষকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে সরকারও বিব্রত। এ কারণে নিজের বক্তব্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় না থাকলে যা হয়। এ জন্যই সরকারের উচিত হবে, শিগগিরই সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তারা যদি জনপ্রিয় হয়, তাহলে জনগণ তাদেরই ভোট দেবে। কিন্তু সরকার যে নির্বাচনকে ভয় পায়, তা ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনেই প্রমাণিত হয়েছে। ভোটবিহীনভাবে ক্ষমতায় আসা এ সরকারের কোনো জবাবদিহিও নেই।’ বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘সরকার সফল শুধু বিএনপি বা বিরোধী মতকে দমন করে। নিজ দলের মন্ত্রী-এমপি কিংবা নেতাদের অপকর্মের দিকে খেয়াল নেই তাদের। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। সরকার যদি নিজেদের না শুধরায় তাহলে এর খেসারত তাদের দিতেই হবে। অতীত ইতিহাস তা-ই বলে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান চালানো জরুরি। যারা শেখ মুজিবকে হত্যার পর মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করেছেন, ট্যাংকে দাঁড়িয়ে নাচানাচি করেছেন, দল থেকে তাদের বের করে দিতে হবে। নইলে এরও খেসারত আবার আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলকে দিতে হবে। সেদিন তাদের কষ্টের আর সীমা থাকবে না।’ ।বাংলাদেশ প্রতিদিন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর