সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের প্রয়োজন আ. লীগের আসল প্রতিপক্ষ কে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৬ এপ্রিল গিয়েছিলেন দিল্লি। সেখানে আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনূস সেন্টার উদ্বোধন করেন তিনি। এটা ছিল প্রকাশ্য ঘটনা। কিন্তু তিন দিনের দিল্লি সফরে ড. ইউনূস বিজেপি সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশের রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে। কথা বলেন ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গেও। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিজেপি নেতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ড. ইউনূস বলেছেন, ‘বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হলে, সে নির্বাচন অর্থবহ হবে না। অর্থবহ নির্বাচনের জন্য সকল দলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’ এজন্য ড. ইউনূস ভারতকে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বলেন।

প্রায় কাছাকাছি সময়ে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন গিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি পেট্রোলিয়াম সংক্রান্ত এক সেমিনারে অংশ নেন। প্রকাশ্য এই কর্মসূচির বাইরে গণফোরামের এই নেতা ১২জন সিনেটের এবং কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে এক নৈশভোজে মিলিত হন। ওই নৈশভোজের আয়োজক ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা একটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে ড. কামাল মার্কিন কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের বাংলাদেশ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। যে ব্যাখ্যার পুরোটাই ছিল বর্তমান সরকারের সমালোচনা। ড. কামাল হোসেনও বাংলাদেশে অর্থবহ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাব করেন। ড. কামাল হোসেন মন্তব্য করেন, এছাড়া ‘জনরায়’ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একাধিক দেশের কূটনীতিকদের বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়েছেন। ওই মতামতে তিনি বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নিয়ে এখনো সংকট কাটেনি বলে মন্তব্য করেছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আগামী নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কয়েকটি দাতা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই সব বৈঠকে সুজনের পক্ষ থেকে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই।

এই চারটি ঘটনাই প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন বিএনপি নয় বরং সুশীল সমাজ। বিএনপি এখন প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করছে কিন্তু ওই সমালোচনা সাধারণ মানুষের কাছে কোনো আবেদন রাখতে পারছে না। কিন্তু সুশীল সমাজ কৌশলগত স্থানগুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য উপাত্ত দিচ্ছে। আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক ভাবে নি:সঙ্গ এবং সমালোচিত করাই এখন সুশীল সমাজের প্রধান লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সুশীলদের গোপন তৎপরতাগুলো নজরে আনছে না বা উপেক্ষা করছে। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছে, সুশীলরা এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে যাতে, আন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়।

স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠতেই পারে, আওয়ামী লীগের আসল শত্রু কে? বিএনপি, জামাত না সুশীল সমাজ?

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর