নবীজির ১২টি প্রিয় খাবার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমরা অনেক ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করি। রেস্টুরেন্ট, বাসা ও মেহমানখানায় পরিবেশিত হয় মনোলোভা হরেক রকম বাহারি খাবার। কিন্তু আমরা নবীর আশেকে উম্মত হিসেবে ক’জনই বা জানি নবীর কোন কোন খাবার প্রিয় ছিল। শুধু যে তাঁর কাছে মিষ্টিই প্রিয় ছিল, তা নয়। বরং নবীজির কাছে আরও ১২টি এমন খাবার প্রিয় ছিল যেগুলো আমাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াবি অনেক লাভ, আছে উপকারও। ভাজাভুজা আর চটপটি খেতে আমরা খুবই চটপটে। এগুলো মুখের স্বাদ ছাড়া কোনো উপকারই করে না বলা যায়।

খাওয়ার ক্ষেত্রে নবীজির বিশেষ শিক্ষণীয় একটি গুণ এই ছিল যে, তাঁর সামনে কোনো খাবার এলে পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে খেতেন না। তবে খাওয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের দোষ তালাশ করতেন না। নবীজির প্রিয় ১২টি খাবার হলো তরমুজ, আঙুর, খেজুর, বার্লি-জাউ, মধু, দুধ, মাশরুম, অলিভ অয়েল, ডালিম-বেদানা, ভিনেগার, ডুমুর, খাবার পানি। এই খাবারগুলোর মাঝে প্রচ্ছন্ন আছে সীমাহীন পুষ্টি ও উপকারে ভরপুর। এতদিন পর বিজ্ঞান গবেষণা করে দেখেছে, এ খাদ্যগুলোর গুণাগুণ ও উপাদান যথাযথ ও বেশ উপকারী।

১. তরমুজ
তরমুজ এটি গ্রীষ্মকালীন ফল। উপরে সবুজ ভেতরে টকটকে লাল। যখন প্রচ- তাপপ্রবাহে তনুমন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে যায় ঠিক সে মুহূর্তে একচিলতে তরমুজ উদরে ফিরিয়ে দেবে সজীবতা ও সুস্থতা। দূর করে দেবে ক্লান্তি অবসাদ। সর্বজনবিদিত এই তরমুজে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি, খাদ্য ও ভেষজগুণ। এতে আছে বিটাকেরোটিন ও ভিটামিন-এ, যা চোখের ছানি বা এ জাতীয় অসুখ নিরাময় করে। তরমুজ শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

২. আঙুর
প্রিয় নবীর প্রিয় দেশের রসালো এই ফলে আছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। আঙুরে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো কঠিন রোগ প্রতিরোধে অসামান্য ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে আঙুর কিডনির জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। মার্বেল আকৃতির এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিজ্ঞান নতুন করে তথ্য-ব্যাখ্যা দিচ্ছে, অথচ এর গুণাগুণ আর উপকারিতা সম্পর্কে অনেক আগেই আমাদের প্রিয়নবী আমাদের উদ্দীপ্ত করেছেন। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

৩. খেজুর
খেজুর ছাড়া রমজানে ইফতারে ভীষণ শূন্যতা অনুভব হয়। আরব দেশের এই ফলে আছে প্রচুর কিলোক্যালরি। খেজুর পেটের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। অত্যন্ত ক্যালরিবহুল এই ফলে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেলস। সারাদিনে একটি খেজুর আমাদের চোখের সুস্থতা দান করে। নবীজি প্রসূতি মাকে খেজুর খেতে পরামর্শ দিতেন এবং বলতেন, যে বাড়িতে খেজুর নেই সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই। নবীজির এই বাণীতে আমাদের জন্য ভাবার আছে অনেক নিদর্শন। এসব বাণী থেকেই বিজ্ঞান সম্ভাবনার নব নব দিগন্ত দেখতে পায়। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

৪. বার্লি-জাউ
বার্লি-জাউ হজম ও শরীরে পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে। জ্বরের জন্য এবং পেটের পীড়ার জন্য অত্যন্ত উপকারী। বলা যায়, মুমূর্ষু রোগীর জন্য সবচেয়ে উপজীব্য খাদ্য এটি। জাউ পেটের গ্যাস প্রতিরোধ করে রোগীকে করে প্রাণময় সুস্থ। যাদের গলায় বা জিহ্বায় ঘা আছে তাদের জন্য জাউ এক বিশেষ টনিক। ক্ষুধাও নিবারণ হয় কষ্টও অপ্রতুল। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

৫. মধু
পানীয় এই তরল খাদ্যে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ ও ভেষজ গুণ। এর অসাধারণ ঔষধি গুণের কারণে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই মধু। মধু বহু রোগের জন্য উপকারী একটি পানীয় বস্তু। হালকা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে ডায়রিয়ার জন্য ভালো উপকার হয়। মধু পাকস্থলীর সমস্যা, খাবারে অরুচি, হেয়ার কন্ডিশনার ও মাউথ ওয়াশ হিসেবেও বেশ উপকারী। তাই আমরা যখনই তা পান করব, সুন্নত মনে করে পান করব।

৬. দুধ
দেড় হাজার বছর আগে মহানবী (সা.) দুধ সম্পর্কে বলেন, দুধ হার্টের জন্য ভালো। দুধ পানে মেরুদ- সবল হয়। মস্তিষ্ক সুগঠিত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি প্রখর করে। আজকের বিজ্ঞানও দুধকে আদর্শ খাবার হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তাই আমরা যখনই তা পান করব, সুন্নত মনে করে পান করব।

৭. মাশরুম
মাশরুম দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতো হলেও এটি একটি উদ্ভিদ শস্য। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিবায়োটিক। নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ নিরাময়সহ ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে বেশ উপযোগী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাশরুম জন্ডিস, আমাশয় নিরাময় করে। মাশরুম নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। বৈজ্ঞানিকভাবে নতুন করে মাশরুমের বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ বের করা হচ্ছে। অথচ দেড় হাজার বছর আগেই আমাদের প্রিয়নবী এর উপকারিতা ও গুণাগুণের তথ্য দিয়ে গেছেন। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

৮. অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল হলো জলপাইয়ের তেল। এর খাদ্য ও পুষ্টিগুণ প্রচুর। ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী, যা গবেষণায় দেখা গেছে। এই তেল মাথার খুশকি দূর করে, চুল করে ঘন কালো লম্বা। অলিভ অয়েল আমাদের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রলম্বিত করে। তাই আমরা যখনই তা পান করব বা ব্যবহার করব সুন্নত মনে করে করব।

৯. ডুমুর
ডুমুর বা আঞ্জিরে অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ভেষজ গুণ রয়েছে। এটা পাইলস ও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য প্রচুর উপকারী একটি খাবার। কোরআনে আল্লাহ ডুমুর ও জয়তুনের কসম করেছেন। যে কারণে তার গুরুত্ব ও উপকারিতা বহুভাবে আমাদের কাছে উন্মুক্ত। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

১০. ডালিম-বেদানা
ডালিম বা বেদানা চমৎকার একটি ফল। তা সাস্থ্য সুরক্ষা করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, বদহজম দূর করে। আয়রন-ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এ ফলটি খুব উপকারী। খুবই জনপ্রিয় ও দেখতে সুন্দর এই ফলটি ভুলে যাওয়া স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অত্যন্ত সহায়ক। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

১১. ভিনেগার বা সিরকা
এটি আচার, চাটনি, সালাদ ইত্যাদিতে ব্যবহার করলে রুচিবর্ধক হয় এবং এটি নষ্ট হওয়া যে কোনো খাদ্যকে রক্ষা করে। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অনেকভাবে এই ভিনেগার ব্যবহার হয়ে থাকে। নবীজি অলিভ অয়েলের সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। আজকের বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্যের যুগে বিশ্বের বড় বড় নামি-দামি রেস্টুরেন্টেও পরিবেশিত হচ্ছে এই ভিনেগার। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

১২. পানি
আমরা জানি পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া আমাদের জীবন বলা যায় একেবারেই অচল। পানি আমাদের অনেক প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। মূলত সুদূর আকাশ থেকে পাহাড় বেয়ে ঝরনা হয়ে, নদ-নদী দিয়ে, খাল-বিল পেরিয়ে পানি আসে আমাদের হাতের কাছে। মাটির তলদেশ থেকে পান করি আমরা সুমিষ্ট পানি। এই পানি যদি তিতা হয়ে যায় তবে সে পানি হয়ে যাবে খাবার অযোগ্য। যেমন সূরা ওয়াকিয়ার ৬৮-৭০ আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমরা যে পানি পান করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না। তাই আমরা যখনই তা খাব, সুন্নত মনে করে খাব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর