মুগ ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গবেষণা বলছে এক কাপ রান্না করা মুগ ডালে রয়েছে কম করে ২১২ ক্যালরি, ১৪ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম ফাইবার, ১ গ্রাম ফ্যাট, ৪ গ্রাম শর্করা, ৩২১ মাইক্রোগ্রাম ফলেট, ৯৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ০.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১ এবং ৯৭ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ।

এখানেই শেষ নয়, আরও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই ডালটি। এতে রয়েছে ভিটামিন ব৫, ভিটামিন বি৬ এবং প্রচুর মাত্রা ক্যালসিয়াম। কী বুঝলেন! এতসব উপকারি উপাদান যে খাবারে রয়েছে, সেটি খারাপ কিভাবে হতে পারে বলুন! বরং একাধিক গবেষণা বলছে নিয়মিত মুগ ডাল খেলে একাধিক শারীরিক উপকার মেলে। যেমন ধরুন…

১. চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: মুগ ডালে উপস্থিত কপার যে শুধু ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, এমন নয়। সেই সঙ্গে স্কাল্পের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে একদিকে যেমন চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি হেয়ার ফল কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে কীভাবে কাজে লাগাতে হবে মুড ডালকে? এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো মুগ ডালের গুঁড়ো নিয়ে তার সঙ্গে গ্রিন টি মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল এবং বাদাম তেল মেশাতে হবে। এরপর সেই পেস্টটা স্কাল্পে লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: এই ডলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ, যা একদিকে যেমন ইউমিউনিটি বাড়ায়, তেমনি নানাবিধ সংক্রমণের আশঙ্কাও কমায়।

৩. খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে: রক্তে যত খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়তে থাকে, তত হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এক সময়ে গিয়ে হার্টের কাজ করার ক্ষমতা একেবারে কমে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। সেই কারণেই তো কোলেস্টেরল লেভেল বাড়ছে, না স্বাভাবিক রয়েছে, সে বিষযে নজর রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে মুগডাল দারুন কাজে আসতে পারে। ২০১১ সালে জার্নাল অব হিউম্যান অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল টেকনোলজিতে প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে মুগডালে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে জমতে থাকা এল ডি এল বা খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্লাড ভেসেলের ক্ষত সরিয়ে সারা শরীরে রক্তের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৪. শরীর এবং ত্বকের বয়স কমে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মুগ ডালে উপস্থিত কপার, দেহের অন্দরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে শরীরে বয়স কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত মুগ ডাল দিয়ে বানানো পেস্ট যদি মুখে লাগানো যায়, তাহলে বলিরেখা তো কমেই, সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো মুগ ডালের গুঁড়ো নিয়ে তার সঙ্গে হলকা গরম জল মিলিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তা মুখে লাগাতে হবে। কিছু দিন এমনটা করলেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করবে।

৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে: কী মশাই বাবা অথবা মার দিকে থেকে কারও প্রেসারের অসুখ আছে নাকি? আছে! তাহলে তো মুগ ডালের সঙ্গে আজই চুক্তিটা সেরে ফেলুন। না হলে কিন্তু কম বয়সেই অক্কা যাওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। আসলে মুগ ডালে থাকা একাধিক পুষ্টিকর উপাদান রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৬. প্রোটিনের ঘাটতি মেটে: যেমনটা আগও আলোচনা করা হয়েছে, মুগ ডালে উপস্থিত ১৪ গ্রাম প্রোটিন দিনের চাহিদার অনেকটাই পূরণ করতে পারে। ফলে দেহে এই পুষ্টিকর উপাদানটির ঘাটতি হওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। প্রসঙ্গত, মুগ ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের এসেনসিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিডও রয়েছে, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।

৭. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে থাকে: মুগ ডালে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই দুটি উপাদান শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে কোষেদের বিভাজন ঠিক মতো হতে থাকে। ফলে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। শুধু তাই নয়, ম্যালিগনেন্ট টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা কমাতেও এই ডালটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. ওজন কমে: নিশ্চয় ভাবছেন কিভাবে অতিরিক্ত মেদ ঝরাবেন, তাই তো? সব ভাবনা ছেড়ে মুগ ডাল খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে এতে উপস্থিত ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বেশি বেশি করে খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। আর এমনটা হওয়ার কারণে অতিরিক্ত ফ্যাট জমার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেও মেদ কমতে শুরু করে।

৯. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে: আজকের ডেটে সারা বিশ্বের মধ্যে এদেশেই সবথেকে বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। শুধু তাই নয়, সংখ্যাটা আরও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মুগ জাল কিন্তু রক্ষাকবছ হয়ে উঠতে পারে। ২০০৮ সালে চিনের ইনস্টিটিউট অব কর্প সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। তাতে দেখা গেছে নিয়মিত মুগ ডাল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কম হতে থাকে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। ফলে ডায়াবেটিস রোগ শরীরে বাসা বাঁধার কোনও সুযোগই পায় না।

সূত্র: বোল্ডস্কাই

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর