হাওরে সবুজ ধানের ফসল, আকাশে মেঘ দেখলেই কৃষকেরা আতংকে থাকে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার হাওরের মাঠ গুলোতে যেদিকে তাকাই শুধু সবুজ আর সবুজ এ যেন সবুজের সমারোহ। মাঠে মাঠে এখন ইরি-বোরো ধানের গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে, আর কৃষকের মনে দোলা দিচ্ছে নানান স্বপ্ন। ‘মানুষ বাচেঁ আশায় আর দেশ বাচেঁ ভালোবাসায়” তাই তো মানূষ প্রতি নিয়ত আশায় বুক বাধে হয়তো এ কারনেই মনে মনে আশা আর স্বপ্নের জাল বনছেন উপজেলার কৃষান-কৃষানীরা। সুষ্ঠ মতো ইরি-বোরো ধান ঘরে আসলেই পুরন হবে অনেক স্বপ্ন, কেউ মেয়ের বিয়ে দিবেন, কেউ ছেলের বিয়ে দিবেন, কেউ নিজই বিয়ে করবেন, কেউ ইটের বাড়ী দিবেন, কেউ ব্যাংক লোন পরিশোধ করবেন, কেউ হালের বলদ কিনবেন কেহ নব বধুকে গহনা বানিয়ে দিবেন, ইত্যাদি নানান সপ্নে দিন গুনছেন কৃষকেরা।

গত বছরের ২৯ মার্চ শুরু হয়েছিল ঝড় বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল। সঙ্গে শিলাবৃষ্টির তাব। এবারও ৩১ মার্চ বিকেলে শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি ও ঝড়। তখনই কৃষকের মনের আকাশে শঙ্কার কালো মেঘ উঁকি দেয়। হাওরের বুকে সবুজ ফসলের ঢেউ দেখে যে কৃষকের মন খুশিতে দোলছিল গত দুই দিনের ঝড় বৃষ্টি তা-বে ঝলমলে সেই মুখে ভর করেছে বিষাদ।
মিঠামইন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে মিঠামইনে ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক হাওর রয়েছে। ছোট হাওরগুলো বড় হাওরের অংশভুক্ত হলেও আলাদা নামে অভিহিত হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগের মতে, মিঠামইনে এ বছর ১৫ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গতবার ১৫ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল।

যার ৭৫ ভাগই তলিয়ে গিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকার গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে প্রতি মাসে এক বছরের জন্য ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকা প্রদান করছে। মৌসুমে বোরো চাষের জন্য সরকার বিনামূল্যে ১৬ হাজার ৫০০ চাষীকে সার, বীজ ও নগদ এক হাজার টাকা প্রদান সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। এই অপর্যাপ্ত সহায়তা নিয়েই হাওরে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশায় নানা সীমাবদ্ধতা ও সংকটের মধ্যে চাষ করছেন কৃষক। এবার মৌসুমে সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে গত বছরের ন্যায় এ বছরও রোদ্র প্রকৃতি বৈরি আচরণ শুনু করায় কৃষকরা আশঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন কিছু এলাকায় অল্প দেশি ধান কাটছেন কৃষকরা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশিধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে উফসী ধানও কাটা শুরু হবে। দিনক্ষণ ভালো থাকলে এবার ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকরা যে কোনো উপায়ে ধান কেটে গোলায় তোলার চেষ্টা করবেন। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সদর উপজেলার বানিয়াহাটি গ্রামের কৃষক শুক্কুর মাহমুদকে দেখা যায় জমির আইলে দাঁড়িয়ে হাওর দেখছেন। বিষাদমাখা দৃষ্টি হাওরের ফসলের দিকে। মাঝে মধ্যে সেই উদাস দৃষ্টি আকাশের দিকে তুলে হয়তো বিপদের আঁচ করছিলেন।

আব্দুল্লাপুর গ্রামের আক্কাছ আলী, বাবুল মিয়া বলেন, এবার ফসল মাইর গেলে আমরা আর উবাই (উপাই) পারতামনা (থাকতোনা)। এলাকার কৃষকের যে কিতা অইব একমাত্র আল্লাহ ছাড়া খেউ খইতো পারতোনা।  বিশোরকোনা গ্রামের কৃষক ছোট মিয়া বলেন, এবার তুফান-মেঘ আমরার ডর লাগে আল্লা মাবুদ কিতা করব কে জানে। গত বছর যে দিনে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল এবার দুই দিন পর থেকে বৈরি প্রকৃতি বৈরি আচরণ শুরু করেছে। যা দেখে অনেক কৃষকই আতঙ্কিত।

তিনি বলেন, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। এবার যদি কোন কারণে ফসল মার খায় তাহলে হাওরের লাখ লাখ কৃষকের দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। জাতীয় ভাবেও খাদ্য উৎপাদনে বিরাট চাপ পড়বে।

গত বছর ২৯ মার্চ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পুরো বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবারও ৩১ মার্চ ঝড় বৃষ্টি কারণে কৃষকরা কিছুটা আতঙ্কিত। তবে এখন পর্যন্ত শিলায় নিকলীর কোন হাওরের ফসলের ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় দেশি ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে দেশি ধান এবং ১৫-২০ দিন পরে উফসী ধান কাটা শুরু হবে। এবার তীব্র শীতের কারণে বোরো রোপণ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক গুন বেশী ধান অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তিনি বলেন ধানের দাম ভাল, তাছাড়া কৃষকের উৎপাদিত ধান-চালের ন্যায্যমুল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল থাকলে কৃষকেরা এবার লাভবান হবে ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর