পোল্ট্রি নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাইলেন

ডিম ও মুরগির দাম সহনীয় রাখতে আমদানি শুল্ক, আয়কর ও এআইটি প্রত্যাহারের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) নেতারা।
বুধবার পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট সাত অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) নিকেতনস্থ কার্যালয়ে এক বিশেষ সভায় এ দাবি জানানো হয়। সভায় পোল্ট্রি নেতৃবৃন্দ এ শিল্পের অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং চলমান পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নেতারা বলেন, পোল্ট্রি শিল্পের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে চলতি অর্থ বছর থেকে নতুন করে আমদানি শুল্ক, অগ্রিম আয়কর ও কাস্টমস ডিউটি আরোপের ফলে পোল্ট্রি ফিড, একদিন বয়সী বাচ্চা, ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
এর ফলে খুব স্বাভাবিক কারণেই বেড়েছে মুরগির ডিমের দাম। মাছ এবং গরু ও খাসির মাংসের দাম যেহেতু আগে থেকেই বেশি ছিল তাই শেষ ভরসার মুরগির ডিম ও মাংসের দামও যখন বাড়তির দিকে তখন সাধারন ভোক্তাদের মাঝে আরও কম মাংস খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ফলে উৎপাদন ও চাহিদার সঙ্গে ভারসাম্যহীনতা এবং পোল্ট্রি শিল্পের ভবিষ্যত বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত খামারি এবং উদ্যোক্তারা।
তারা বলেন, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে সারাদেশে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে আরও কয়েক হাজার খামার বন্ধ হওয়ার পথে। এ অবস্থার উন্নতি না হলে কোরবানীর ঈদের পর ডিম ও মুরগির দাম আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশংকা তাদের। ১৬ কোটি মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ এবং বিদ্যমান অপুষ্টির হার কমানোর স্বার্থে পোল্ট্রি শিল্পের জন্য কর অব্যাহতি সুবিধা আরও অন্তত ১০ বছর বর্ধিত করার দাবি জানান পোল্ট্রি নেতৃবৃন্দ।
বিপিআইসিসি’র আহ্বায়ক এবং ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘পোল্ট্রি শিল্পের জন্য কর অব্যাহতির মেয়াদ কেন বাড়ানো প্রয়োজন এবং হঠাৎ করে এ সুবিধা বন্ধ করে দিলে গ্রামীণ অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, উৎপাদন, চাহিদা, বিনিয়োগ সর্বোপরি ডিম ও মাংসের বাজারে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকদের বোঝাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপই পারে এ শিল্পকে সম্ভাব্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে।
তিনি বলেন, পোল্ট্রি শিল্পের আয়ের ওপর করের হার ‘শূন্য’ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ, হ্যাচারির আয়ের ওপর কর ‘শূন্য’ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এবং পোল্ট্রি ফিডের আয়ের উপর কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) মহসচিব ডা. এম.এম.খান বলেন, আয়করের পাশাপাশি পোল্ট্রি শিল্পের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ভুট্টা, সয়ামিল, অয়েল কেক, ডিএল মিথিওনিন, এল-লাইসিন, ডাইক্যালসিয়াম ফসফেট, মনো-ক্যালসিয়াম ফসফেট, কোলিন ক্লোরাইড, ভেজিটেবল ফ্যাট এবং এল-থ্রিওনিন এর আমদানি শুল্ক হার ‘শূন্য’ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় উল্লেখিত সবগুলো কাঁচামালসহ ফিস অয়েল এবং লাইমস্টোন আমদানির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইমপোর্টার্স এন্ড সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফিটা) সভাপতি সুধীর চৌধুরী বলেন, শুধু ফিড মিলগুলোই নয় আমদানিকারকরাও বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন।
তিনি বলেন, আমদানি শুল্ক ও কাস্টমস ডিউটি ছাড়াও চট্টগ্রাম কাস্টমসে মাল খালাসে জটিলতার কারণে আমদানিকৃত কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে খরচ। পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের দাম বৃদ্ধির এটি একটি অন্যতম কারণ।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) সভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, ‘এভাবে হঠাৎ করে আয়কর, আমদানি শুল্ক, কাস্টমস ডিউটি এবং এআইটি আরোপ হবে, তা আমাদের ধারণাতেও ছিল না।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প অনেক কম সময়ে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতার কারণেই।’
তবে এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে কর অব্যাহতি সুবিধা আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন শাহরিয়ার।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সভাপতি সামছুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, কর আরোপের সিদ্ধান্ত ধাপে ধাপে গ্রহণ করলে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
তিনি বলেন, পোল্ট্রি শিল্পদোক্তারা লাভের টাকা পুনঃবিনিয়োগ করেছেন বলেই এ শিল্প স্বল্পতম সময়ে এত দ্রুত বিকাশ লাভ করতে পেরেছে।
অঞ্জন বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্পমূল্যে প্রাণিজ আমিষের যোগান নিশ্চিত করতে হলে উৎপাদন খরচ নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতেই হবে। সেজন্য বাড়তি কোন খরচের বোঝা পোল্ট্রি উৎপাদকদের ওপর না চাপিয়ে বরং ভুট্টা ও সয়াবিনের উৎপাদন এবং সয়ামিলের প্রসেসিং প্ল্যান্ট আরও অনেক বাড়াতে হবে, পোল্ট্রি প্রসেসিং ও ফারদার প্রসেসিংকে উৎসাহ দিতে হবে।
উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।
পোল্ট্রি নেতারা বলেন, সরকার যদি বেসরকারি উদ্যোক্তা ও খামারিদের সাথে বসে এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত না নেয় তবে আগামী দিনগুলোতে ডিম ও মুরগীর মাংসের দাম আরও বাড়বে এবং ২৫ হাজার কোটি টাকার পোল্ট্রি শিল্প চরম হুমকীর মুখে পড়বে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর