যক্ষ্মা প্রবণ এলাকা ভৈরব উপজেলা বিশেষায়িত হাসপাতালের দাবি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির জরিপে দেশের যেসব এলাকাগুলিকে যক্ষ্মার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা এর মাঝে অন্যতম। এখানে জুতা, পাটসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানায় বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের গাদাগাদি কাজ ও বসবাস করা। এবং নদীবন্দর ও বাণিজ্যনগরী হওয়ায় প্রতিদিন বাইরের এলাকার বিভিন্ন শ্রমজীবীদের অবাধ আসা-যাওয়া, বস্তি এলাকা গড়ে ওঠা-সর্বোপরি ঘনবসতি এবং জনসচেতনতার অভাবে এখানে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু দ্রুত ছড়াচ্ছে।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভৈরবে এক সময় যক্ষ্মা ভয়াবহরূপ ধারণ করবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তাই এখানে দ্রুত একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের দাবি তাদের। টিউর্বাকিউলোসিস বা টিবি। যা যক্ষ্মা নামে পরিচিত। এক সময় বলা হতো-যার হয় যক্ষ্মা, তার নাই রক্ষা। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে যক্ষ্মা এখন নিরাময়যোগ্য রোগ। তবে রোগী সনাক্তকরণ ও নিয়মিত ওষুধ সেবন রক্ষা পাবার প্রথম ও প্রধান শর্ত। আর এ রোগের সবচেয়ে ভয়ংকর বৈশিষ্ট্য হলো-এটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ।

একজন আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে খুব সহজে তার চারপাশের সুস্থ্য মানুষের মাঝে এর জীবাণু ছড়িয়ে দিতে পারে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি জনসচেতনতা এ রোগ নিরাময়ের অন্যতম পথ। আর এই কারণেই ঘনবসতি, দরিদ্র ও নিম্নশ্রেণির শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং চারপাশের লোকজনকে সহজে সংক্রমিত করে। যক্ষ্মারোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ১৯৯৭ সাল থেকে বেলজিয়াম ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন ভৈরবে যক্ষ্মা নিরাময়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি প্রধান কেন্দ্র, ইউনিয়ন পর্যায়ে দুইটি উপ-কেন্দ্র এবং আরও দুইটি কফ সংগ্রহ কেন্দ্রের মাধ্যমে সংস্থাটি চিকিৎসা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কেন্দ্রের ডেমিয়েন ফাউন্ডেশনের কেন্দ্র ইনচার্জ মোঃ সালাহ উদ্দিন জানান, এই কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০জন যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। আর আক্রান্তদের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে শতকরা ৬০জন পুরুষ আর নারী ৪০ ভাগ।

ভৈরবের যক্ষ্মারোগীদের ভয়াবহ দিক হলো-এখানে এমডিআর (মাল্টি ড্রাগস রেজিস্টেন্স) বা ঔষধ প্রতিরোধী রোগীর সংখ্যা বেশী। আর এই রোগীর বৈশিষ্ট্য হলো-সে দ্রুত রোগ ছড়ায় এবং একজন এমডিআর রোগীর জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিও এমডিআর রোগী হিসেবে সনাক্ত হন। এমন রোগীকে এইচআইভি পজেটিভ রোগীর চেয়ে ভয়ংকর হিসেবে আখ্যা দিয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও ডিজিজ কন্ট্রোলার ডা. মোঃ নবী হোসেন জানান, চিকিৎসকের সান্নিধ্যে থেকে নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং জনসচেতনতাই রক্ষা করবে এমন রোগী এবং তার চারপাশের লোকজনকে।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জালাল উদ্দিন জানান, ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৬৪৮জন সন্দেহভাজন লোককে পরীক্ষা করে ৫১০জন যক্ষ্মা আক্রান্ত সনাক্ত হয়। এর মধ্যে এমডিআর (মাল্টি ড্রাগস রেজিস্টেন্স) বা ঔষধ প্রতিরোধী রোগীর সংখ্যা ৬ জন। এরমধ্যে দুইজনকে ময়মনসিংহ যক্ষ্মা হাসপাতালে ভর্তি রেখে এবং ৪জনকে নিজ নিজ বাড়িতে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ভৈরবের সঙ্গে পাশের তিন জেলার লোকজনের সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা এবং হাওরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে এখানে এই রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধ ও আক্রান্ত রোগীরদের আরও ভালো চিকিৎসা সেবার জন্য একটি বিশেষায়িত চিকিৎসালয়ের দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর