সবাই একত্র হলে পা রাখার জায়গা পাবে না জঙ্গিরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জঙ্গি দমনে সামাজিক সম্পৃক্ততার কোনো বিকল্প নেই। সবাই একত্র হলে পা রাখার জায়গা পাবে না জঙ্গিরা। এই স্ট্র্যাটেজির প্রতি লক্ষ রেখেই বর্তমান সরকার জনগণকে সম্পৃক্ত করার প্রয়াস নিয়েছে। সবাইকে জঙ্গিবাদ রুখতে সম্পৃক্ত করতে চাই। তাহলে কেউ এক ইঞ্চি মাটিও ব্যবহার করার সুযোগ পাবে না। বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা, বাংলাদেশে কোথায় আইএস আছে প্রকাশ্যে বলবে তারা। জঙ্গিরা ভুল পথ থেকে ফিরে এসে আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে তাদের সব ধরনের সহায়তা করা হবে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে র‌্যাব আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি তত্পর। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এখনো কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। কারো ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জঙ্গিবিরোধী অ্যাপস ‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’-এ ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছে না। গত ৫ মার্চ নিজ দপ্তরে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি মূলত জঙ্গিবাদ নিয়েই কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সরোয়ার আলম

কালের কণ্ঠ : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গত মাসে ‘আইএস বাংলাদেশ’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠনকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। আপনি কি মনে করেন, ‘আইএস বাংলাদেশ’ নামে কোনো গোষ্ঠী বাংলাদেশে তত্পর আছে?

বেনজীর আহমেদ : আমরা এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো গোষ্ঠীর তত্পরতার অস্তিত্ব আমাদের দেশে খুঁজে পাইনি। এ দেশে কিছু লোক আছে সন্ত্রাসী, জঙ্গি; তারা বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি কার্যক্রম করে। আমরা জানি, যারা মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি কার্যক্রম করেছে; আইএস বা আল-কায়েদা, তারা প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালায় এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন দেশে এই ঘটনা ঘটে। কয়েক দিন আগেও বাংলাদেশের একটি মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে হামলা করেছে। সে নিজে স্বীকার করেছে, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কাজ করেছে। এখন তাকে যদি কেউ আইএস বলে তাহলে আমি মনে করি এটা সংগত হবে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডেও অনেকে ইন্টারনেটে আইএস প্রচারণা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী লোকজন যুক্তরাষ্ট্রেই হামলা করেছে। তাতে কি আমরা ধরে নেব যুক্তরাষ্ট্রে আইএস রয়েছে? আমি জানি না, এর ভিত্তি কী? আমার প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে যদি আইএস থাকে তার প্রধান কে? আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র যাদের তালিকাভুক্ত করেছে, খুব শিগগির প্রকাশ্যে আমাদেরসহ সবাইকে জানাবে প্রধান কে, তার সঙ্গে অন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারা? প্রকাশ্যে তারা যেভাবে এটাকে নিষিদ্ধ করেছে সেভাবে প্রকাশ্যে তারা আমাদের বলবে।

কালের কণ্ঠ : জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় র‌্যাবের ভূমিকা কী রকম?

বেনজীর আহমেদ : র‌্যাব সৃষ্টিই হয়েছে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করার জন্য। ২০০৪ সালে র‌্যাব সৃষ্টি হয়। আপনারা জানেন, তখন জেএমবির বিভিন্ন ধরনের হামলায় দেশ ক্ষতবিক্ষত ছিল। সেই প্রেক্ষাপটেই সৃষ্টি হয় র‌্যাবের; তখন থেকে র‌্যাব গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদবিরোধী কাজে নিয়োজিত আছে। ৯০ দশকের শেষের দিকে ও ২০০০ সালের প্রথম দিকে জঙ্গিবাদের যে উত্থান আমাদের দেশে ছিল সেটি কিন্তু নিশ্চিহ্ন করেছে র‌্যাব। তারপর প্রতিনিয়তই বিভিন্ন জঙ্গিবাদী সংগঠন যেখানে যখন তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন করে আসছে র‌্যাব। র‌্যাবের এক নম্বর প্রায়রিটি হচ্ছে জঙ্গি দমন। পরবর্তী সময় হলি আর্টিজান অ্যাটাক প্রতিরোধেও র‌্যাব সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। জেএমবির যে অংশটা সারোয়ারের নেতৃত্বে আলাদা হয়েছিল এবং পরবর্তী সময় তামিম বিদেশ থেকে এসে ওই সংগঠনে জয়েন করেছিল; এই গ্রুপটাকে নিশ্চিহ্ন করার ক্ষেত্রেও কিন্তু র‌্যাব প্রধান নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। এ গ্রুপের প্রধান সারোয়ার কিন্তু র‌্যাবের অপারেশনের সময় পালাতে গিয়ে নিহত হয়েছে। গুলশান হামলার পর আমরা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ৪০৫ জন সক্রিয় জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। তার মধ্যে জেএমবিরই ৩২৯ জন। এ ছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বা আনসার আল ইসলামের ৪০ জন, হুজির ১৭ জন, হিযবুত তাহ্রীরের ১৮ জন এবং শহীদ হামজা ব্রিগেডের একজন সদস্য রয়েছে। বিভিন্ন  অপারেশনের সময় ২১ জঙ্গি নিহত হয়েছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অপারেশনের ক্ষেত্রে গণমানুষের আস্থা র‌্যাবের ওপর অনেক বেশি। আমি বলব, জঙ্গি দমনে সার্বিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা। রাষ্ট্রের বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান, সেই সঙ্গে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিরবচ্ছিন্ন তত্ত্বাবধান এবং এই দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের জঙ্গিবাদবিরোধী মনোভাব। এটাই মূলত আমাদের চালিকাশক্তি।

কালের কণ্ঠ : জঙ্গি দমনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কথা প্রায়ই বলা হয়। জনসম্পৃক্ততার ক্ষেত্র, পরিধি ও কৌশল নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে কি?

বেনজীর আহমেদ : জঙ্গি দমনে সামাজিক সম্পৃক্ততার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশের মানুষ, রাষ্ট্র, সমাজ, জনগণ, জাতি যত বেশি ব্যাপকভাবে জঙ্গি দমনে সম্পৃক্ত হবে ততই আমাদের সাফল্যের হার বেড়ে যাবে। আমরা এ মুহূর্তে যদি আরো বেশি করে একত্র হতে পারি তাহলে এখানে জঙ্গিরা পা রাখার জায়গা পাবে না। আমরা কিন্তু শুরু থেকেই জঙ্গি দমনে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি। ১ জুলাইয়ের হলি আর্টিজান অ্যাটাকের ১১ দিনের মাথায় রিপোর্ট টু র‌্যাব নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করি। ফলে আমরা হাজার হাজার ইনফরমেশন পেয়েছি রিপোর্ট টু র‌্যাবের মাধ্যমে। আমরা লাখ লাখ লিফলেট, পোস্টার বিতরণ করেছি। আমরা উত্তরাঞ্চলকে প্রাধান্য দিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী ৭২০টি স্থায়ী বিলবোর্ড স্থাপন করেছি। কারণ আমরা দেখেছি, উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি জঙ্গিদের তত্পরতা দেখা যায়। সেই কারণে উত্তরাঞ্চলকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন, বাসস্টেশন, এয়ারপোর্টসহ যেখানে মানুষের জনসমাগম হয় সেসব স্থানেই আমরা স্থায়ী বিলবোর্ড স্থাপন করেছি। আমরা জঙ্গিবাদবিরোধী টিভি স্পট তৈরি করেছি, যা টেলিভিশনে, কেবল টিভিতে ও সিনেমা হলে প্রচারের ব্যবস্থা করেছি। উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণকে সচেতন করা। দেশে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র আমরাই জঙ্গিদের ধর্মীয় অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘কাউন্টার ন্যারাটিভ’ তৈরি এবং ব্যাপকভাবে বিতরণ করেছি। আমাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক আইডিতে এর সফট কপি আপলোড করা আছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আমরা গেছি, সভা-সমিতি করেছি। এর যে তাত্ক্ষণিক ফল তা খুব ইউনিক, তাত্পর্যপূর্ণ, আমি বলব অভূতপূর্ব। এতে করে কেউ জঙ্গিবাদের জন্য এক ইঞ্চি মাটিও ব্যবহার করার সুযোগ পাবে না। মসজিদ, মাদরাসা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। জুমার খুত্বার আগে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বয়ান করেন ইমাম সাহেব। তা ছাড়া মাদকের বিরুদ্ধেও কথা বলা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ রয়েছে। মসজিদ, মাদরাসাগুলোতে বয়ান করা হয় কি না তাও মনিটরিং করা হচ্ছে। বাংলাদেশেই সর্বপ্রথম জঙ্গিরা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে র‌্যাবের মাধ্যমে। এর কারণ হচ্ছে র‌্যাবের শুধু রোবাস্ট আইন প্রয়োগের কৌশল নয়, পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ও মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে আমরা একটি সামাজিক আন্দোলন তৈরি করার চেষ্টা করেছি।

কালের কণ্ঠ : অতীতে দেখা গেছে জঙ্গিদের অনেকেই যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। র‌্যাবের বর্তমান প্রশিক্ষণ জঙ্গিদের মোকাবেলায় যথেষ্ট কি?

বেনজীর আহমেদ : বাংলাদেশি জঙ্গিদের সামর্থ্য সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। বিভিন্ন হামলায় তারা যে বোমাগুলো ব্যবহার করেছে তা বানানো হয়েছে দেশীয় পদ্ধতিতে। মার্কেটে সহজলভ্য ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ওই বোমাগুলো বানানো হয়েছে। ব্যবহূত অস্ত্রও দেশীয় পদ্ধতিতে বানানো। এদের যে খুব একটা হাই লেভেল ক্যাপাসিটি আছে এখন পর্যন্ত সেটা আমি মনে করি না। তাদের এ ধরনের দেশীয় অস্ত্র বা আইডি কিন্তু খুন, জখম কিংবা ব্যাপক ধ্বংস সাধন করতে পারে। আমরা সব সময় তাদের ক্যাপাসিটি এবং দক্ষতার ধরন বিশ্লেষণ করি। আমাদেরও যে দক্ষতা বা ক্যাপাসিটি বা প্রশিক্ষণ আছে প্রতিনিয়ত আমরা তা পরিবর্তন করি; আপডেট করি। যেমন ১ জুলাইয়ের হলি আর্টিজান অ্যাটাকের পর আমরা কিন্তু একটি বিশেষ কমান্ডো গ্রুপ তৈরি করেছি এবং সেই কমান্ডো গ্রুপের জন্য তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদেশ থেকে স্পেশাল ইকুইপমেন্ট নিয়ে এসেছি। বর্তমানে তাদের যে বডি আর্মার আছে সেই আর্মারগুলো ব্যবহার করে তারা যেকোনো টেররিস্টের কাছে হেঁটে সামনে চলে যেতে পারবে। তাদের কাছে যে ধরনের অস্ত্র আছে, সেটি প্রতিরোধ করতে ওই আর্মার সক্ষম। তার মানে ভবিষ্যতে যদি কেউ এ রকম দুঃসাহস দেখায় বাংলাদেশে আপনারা দেখবেন ক্ষেত্রবিশেষে র‌্যাবের কমান্ডোরা হেঁটে হেঁটে অকুস্থলের ভেতরে গিয়ে তাদের মোকাবেলা করবে। সেই ক্যাপাসিটি আমরা ডেভেলপ করেছি। সেই কমান্ডো গ্রুপের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। এদের জন্য আরো আধুনিক ইকুইপমেন্ট সংযোজিত করার চেষ্টা করছি। জঙ্গিরা যখন সশস্ত্র অবস্থায় বা বোম বা এক্সপ্লোসিভ বা হাই পাওয়ার এক্সপ্লোসিভ নিয়ে বসে আছে, সেখানে সাধারণত গাড়ি নিয়ে বা খালি পায়ে হেঁটে কাছাকাছি যাওয়া সঠিক নয়। কাছে যেতে হলে একটি আর্মার্ড ভেহিকল লাগে। এই মুহূর্তে আমাদের আর্মার্ড ভেহিকল নেই। আমরা ধারণা করছি যে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে আর্মার্ড ভেহিকল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবে। সেই জুলাই মাস পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করিনি। আমরা নিজ উদ্যোগে মোটামুটি কর্মক্ষম, কার্যক্ষম ও জরুরি অবস্থায় কাজে লাগতে পারে এই রকম একটা ভেহিকল কিন্তু আমাদের নিজস্ব ওয়ার্কশপে দেশীয় ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করে ব্যবহার করছি। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই ভেহিকলটি দেখে প্রশংসা করেছেন। আমরা কিন্তু এ রকম প্রগ্রেসিভ; প্রতি মুহূর্তেই আমাদের ডেভেলপ করার বা স্কিল বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আমাদের যেখানে ঘাটতি আছে তা পূরণ করার এবং টেররিস্টরা কী করতে পারে ইনফিউচারে, সেটা চিন্তা করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ আমাদের রয়েছে। আমাদের যে ইন্টেলিজেন্স আছে সেটাকে সব সময় আপডেট বা হালনাগাদ করছি এবং আমাদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কাজে আমরা নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি।

কালের কণ্ঠ : ২০১৪ সালে গুলশান হামলাসহ বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছিল আইএস। ওই সব হামলায় অভিজাত পরিবারের সন্তানরা অংশ নিয়েছিল। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নজরদারিতে ছিল। এখন নজরদারি নেই বললেই চলে। বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

বেনজীর আহমেদ : নজরদারি নেই সেটা ঠিক নয়। তখন হৈচৈ পড়ে যায়, এ জন্য আমরা তখন নজরদারি শুরু করি। সে কারণে সর্বস্তরের সমাজে ও মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। নজরদারি এখনো আছে। হয়তো আলোচনায় আসছে না। আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতটা সচেতন ছিল না; তারাও এখন সচেতন। একটি ছেলে যখন ১৫-২০ দিন বা এক বা দেড় মাসের জন্য আকস্মিকভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় তখন তারা আমাদের জানায়। উচ্চবিত্ত পরিবারের মা-বাবাও সচেতন। আমাদের ক্যাম্পেইনের কারণে এবং সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে এখন কিন্তু প্রতিটি শিক্ষিত ফ্যামিলি, উচ্চবিত্ত ফ্যামিলি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, এমনকি বন্ধুবান্ধবরাও সচেতন। সবাই মিলে আমরা এখন দায়িত্ব পালন করছি।

কালের কণ্ঠ : জেএমবি, জেএমজেবি, হুজি, হিযবুত তাহ্রীর ও নব্য জেএমবি এখনো সক্রিয় আছে বলে তথ্য আসছে। এ ক্ষেত্রে র‌্যাব কিভাবে ওই সব সংগঠনকে মোকাবেলা করবে?

বেনজীর আহমেদ : আমরা প্রতিনিয়ত জঙ্গিদের সস্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছি। কিছুদিন আগেও আমি বলেছি, যেকোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক না কেন র‌্যাব কখনো জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম থেকে তার দৃষ্টি সরিয়ে নেবে না। সেই কারণে আমরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তত্পর রয়েছি। আমরা নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছি। জনগণকে সম্পৃক্ত করছি। এরই মধ্যে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। যারা জেলে আছে, তাদের মনিটর করছি। এই উদ্যোগ র‌্যাবের পক্ষ থেকে জারি আছে এবং বলবৎ আছে। দেশ থেকে একেবারে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম নিমেষে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। একটি গ্রুপকে ধ্বংস করে দিলাম; তারপর আরেকটি গ্রুপ তৈরি হতে পারে। তারা সর্বাংশে নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম চলতেই থাকবে।

কালের কণ্ঠ : শিক্ষাবিদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জাফর ইকবালের হামলাকে কিভাবে দেখেন? এটি কি জঙ্গিদের কাজ?

বেনজীর আহমেদ : এটি একদম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। এটি একটি জঙ্গিবাদী হামলা হতে পারে। আমি মনে করি, এই মুহূর্তে চূড়ান্ত কোনো মন্তব্যে যাওয়া ঠিক হবে না। তবে জঙ্গিবাদী হামলা এটি হতে পারে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করেই আমরা আমাদের তদন্ত করছি। যদিও মূল তদন্ত করছে পুলিশ। কিন্তু র‌্যাব ফোর্সেস পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছে। এটি একটি জঙ্গিবাদী হামলা হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি; কারণ আগে থেকেই তাঁকে থ্রেট দেওয়া হয়েছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম তাঁকে হুমকি দিয়েছিল বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো সামনে রেখেই আমরা ছায়া তদন্ত করছি। আরো কয়েক দিন গেলে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হবে।

কালের কণ্ঠ : অভিযোগ আছে, জঙ্গি সংগঠনগুলোর ব্যানারে ইসলামী ছাত্রশিবির জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত। অভিযোগটি কি সত্য?

বেনজীর আহমেদ : আমরা জঙ্গিবাদে জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে বা মারা গেছে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে তাদের অনেকেই কোনো না কোনো সময় ছাত্রশিবির বা জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।

কালের কণ্ঠ : জঙ্গিদের অর্থায়ন বন্ধের ব্যাপারে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?

বেনজীর আহমেদ : মানি লন্ডারিং বিভিন্নভাবে হতে পারে। হুন্ডি বা অন্য কোনোভাবে যাতে মানি লন্ডারিং না হয় সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাও জঙ্গি অর্থায়নকারীদের গ্রেপ্তার করছি। তবে এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, বেশির ভাগ অর্থের উৎস কিন্তু তাদের নিজস্ব তহবিল। তারা ইয়ানতের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে। এটা তাদের একটা বড় সোর্স। জঙ্গিবাদের পেছনে বিদেশি অর্থ বা বড় দাতার অর্থ কিন্তু বেশির ভাগ নয়। এখানে বিরাট অংশ আসে নিজস্ব ইয়ানত থেকে। স্পেনের সঙ্গে অর্থ লেনদেন হওয়ায় আমরা সম্প্রতি কয়েকজন জঙ্গি অর্থায়নকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। বিদেশ থেকে যারা অর্থ নিয়ে আসছে তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। কোনো হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের জানায়। আমরা তদন্ত করে দেখি। আর ৯০ দশকে (নাইন-ইলেভেনের আগে) এনজিওর মাধ্যমে যেভাবে জঙ্গি অর্থ লেনদেন করা হতো সেটি এখন বন্ধ। যুক্তরাষ্ট্র যেসব এনজিওকে জঙ্গি অর্থায়নের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছিল তার মধ্যে কয়েকটি বাংলাদেশেও কাজ করেছিল। ওই পদ্ধতিতে এখন অর্থ লেনদেন করা কঠিন।

কালের কণ্ঠ : জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করার ব্যাপারে আপনার পরামর্শ আছে কি?

বেনজীর আহমেদ : ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম মানেই শান্তির ধর্ম। জঙ্গিবাদ ইসলামের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। ইসলামবিরোধী লোকজন মুসলমান নামধারী নির্বোধ কিছু লোককে প্রলুব্ধ করে জঙ্গিবাদে নিয়ে আসছে। উদ্দেশ্য, এ ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করা। ইসলাম ধর্মকে খাটো করা। কিছু নিরীহ বা নির্বোধ মুসলমান না বুঝে জঙ্গিবাদে জড়িত হচ্ছে। সত্যিকারের মুসলমান হলে তাদের সবাইকে এখান থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। যেসব জঙ্গি আত্মসমর্পণ করতে চায়, ভুল পথ থেকে ফিরে আসতে চায় তাদের সব সময় আমরা ওয়েলকাম জানাই। তবে কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে সেটি হবে আবার ভিন্ন। তার পরও আমাদের তরফ থেকে তাদের জন্য ফিরে আসার দরজা খোলা।

কালের কণ্ঠ : সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

বেনজীর আহমেদ : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর