৬ দিনে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৮৪৩ জন হজযাত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এ বছর বেসকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন ১ লাখ ২০ হাজার জন। কিন্তু সোমবার বিকেল পর্যন্ত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আইটি বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৮৪৩ জন হজযাত্রী। শতকরা হিসাবে যা এক ভাগেরও কম। এ নিয়ে হজ ব্যবস্থাপনায় অনিশ্চিয়তা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত দুই বছর ধরে হজে যেতে হাজিদের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়া হয়েছে চূড়ান্ত নিবন্ধন পদ্ধতির। এ বছর এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে। চলবে ১৮ মার্চ পর্যন্ত। সেই হিসাবে হাতে সময় রয়েছে আর মাত্র ৬ দিন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য যদি কেউ টাকা জমা না দেন তাহলে তো আর হজে যেতে পারবেন না। কেউ যদি টাকা জমা দিতে বিলম্ব করেন সেক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কিছু করার নেই। তবে এজেন্সিগুলোর সাথে হজযাত্রীর কোনো জটিলতা তৈরি হলে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমরা নিব।’

তিনি বলেন, তবে শেষ সময়ে সবাই এক সাথে নিবন্ধন করতে চাইলে সার্ভারেও চাপ পড়তে পারে। তাতে অনেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন। তবে আমাদের দেশের মানুষের সব কাজ দেরিতে করার একটা ন্যাচার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হজ অফিস বলছে, এ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের নিবন্ধন হয়েছে ৪ হাজার ২৯২ জনের। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৮৪৩ জনের। এ পর্যন্ত এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে ২৮০টি হজ এজেন্সি।

সামগ্রিক হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোঃ হাফিজ উদ্দিন বলেন, এখানে এজেন্সিগুলো হাজিদের নিতে সমন্বয় করে। আর হাজিদের সাথে এজেন্সিগুলোর পাওনাদি পরিশোধ সাপেক্ষ রেজিস্ট্রেশন করে থাকে। পাওনা না মিটিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে দিলে পরে এজেন্সিগুলো বিপদে পড়বে। তাই হয়তো নিবন্ধনে দেরি হচ্ছে।

গত বছর একই সময়ে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক হাজি রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, কিন্তু এ বছর এতো কম কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের এ কর্মকর্তা বলেন, হ্যাঁ, এবার এই সংখ্যা কম। তবে এটা রিকভারি হয়ে যাবে।
আর মাত্র ৬ দিনের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রীর নিবন্ধন কিভাবে সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে মোঃ হাফিজ উদ্দিন বলেন, এটা হয়তো হয়ে যাবে। এখনও ৬ দিন সময় আমাদের হাতে আছে। আশা করছি, আমদের টার্গেট পূরণ হবে।

এ কর্মকর্তা বলেন, হাজিদের সাথে এজেন্সিগুলোর কোনো ঝামেলা থাকতে পারে। সেজন্যও হয়তো এতো কম সংখ্যক রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। তবে এমন কিছু হলেও তা সমাধান হবে। এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আপনারাও বোঝেন, কিছু হাজি তো যাবে না। তবে যারা যাবেন তাদের যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। হয়তো কিছু আছে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করেছে কিন্তু ইন্তেকাল করেছেন। সেখানে একটা সংখ্যা কমে যাবে।

এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কাছে হজযাত্রীরা কোন অভিযোগ করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, না, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি কেউ।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, হাজিদের সংগ্রহের কাজ করে এজেন্সিগুলো। কতজন লোক হজে যাবেন তা নির্ভর করে তাদের ওপর। তারা কিভাবে হাজিদের বিষয়ে সমন্বয় করে তা বুঝবে এজেন্সিগুলো। তবে এজেন্সিগুলো সব সময়ই তাদের স্বার্থের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এজেন্সিগুলো দির্ঘদিন ধরে সৌদিতে হাজি আনা-নেয়ার কাজ করছে। তাদের দ্বারা কেউ প্রতারণার শিকার হবে কিনা এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শাস্তি হওয়া এসব হজ এজেন্সির তালিকা আমরা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি। ১০টির ওপর পত্রিকায় তাদের এ তালিকা ছাপা হয়েছে, ফলে এখান থেকে প্রতারণার আশঙ্কা নেই।

এদিকে, মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৯১২টি হজ এজেন্সির মধ্যে ৩৫২টি এখনো হাজি পাঠানোর কোনো চুক্তিই করেনি সরকারের সাথে। যারা নিবন্ধন করেছে তাদের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে মাত্র ২৮০টি এজেন্সি। এ কারণে প্রথম ৬ দিনে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ৮৪৩ জনের।

হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাবের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হাবের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদৎ হোসাইন তসলিম বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু জটিলতা আছে। এজেন্সিগুলোকে পাসওয়ার্ড সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে তাদের সিস্টেম খুলে দিতে হয়। এ বিষয়ে আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি। এসব জটিলতা দূর হলে দ্রুতই সমাধান সম্ভব হবে।

শাস্তি হওয়া এজেন্সিগুলোতে যেসব হাজি প্রি-রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের বিষয়ে কোন জটিলতা তৈরি হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা সর্বশেষ রিভিউতেও হাজি নিতে অনুমতি পাবে না, তারা অন্য এজেন্সির কাছে এসব হজ যাত্রীদের হস্তান্তর করবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা মতে, এ বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কমন খরচ হিসেবে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সাথে অন্যান্য খরচ যোগ করে হজ এজেন্সিগুলো প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ-১ এ সর্বোচ্চ মোট খরচ ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা। প্যাজেট-২ এ ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নিবন্ধিত কোন হজযাত্রী অন্য কোন যাত্রী দিয়ে রিপ্লেস করতে পারবে না। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির কাছে আবেদন সাপেক্ষ তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিবেচনায় কেবল প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্য হতে প্রতিস্থাপিত করা যাবে বলে নিয়ম আছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পাস হওয়া মন্ত্রিপরিষদ সভার হজ নীতিমালায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন অবস্থাতেই একটি হজ এজেন্সির মোট হজযাত্রীর শতকরা ৪ শতাংশের বেশি প্রতিস্থাপিত করা যাবে না। ১০ সাওয়াল মাসের মধ্যে হজযাত্রীর প্রতিস্থাপন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক হজ এজেন্সি সর্বনিম্ন ১৫০ জনকে এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জনকে নিতে পারবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর