বোরো ধানের খেতে নিম্নশ্রেণির ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করেছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিরাজগঞ্জের মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত রায়গঞ্জ-তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বোরো ধানের খেতে নিম্নশ্রেণির ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করেছে। এতে কৃষকরা ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে এ নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে গবেষণা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮১০ হেক্টর।

বোরো মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা আট ঘাট বেঁধে মাঠে নেমে পড়ে বোরো ধান আবাদ করার জন্য। শুরুতেই কৃষকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় লাল ও সবুজ রঙের অ্যাজোলা ক্ষুদ্র পানা নিম্ন শ্রেণির ব্যাকটেরিয়া নিয়ে। গত দুই মাস আগে রোপণ করা ধান খেত ব্যাকটেরিয়ায় ভরে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না ধানের চারা। খুব দ্রুত এই ব্যাকটেরিয়া বংশ বিস্তার করার কারণে বিভিন্ন ধরনের বিষ প্রয়োগ করেও খেত থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর করতে পারছেন না কৃষকেরা।

খেতের সার খেয়ে ফেলছে ব্যাকটেরিয়া। দিন দিন ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে। শত চেষ্টা করেও এই ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না কৃষকরা। তাই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত জমির ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা। পানার কারণে জমিতে দেয়া সার ধানের চারার গোড়ায় পৌঁছাতে পারছে না। সার ব্যাকটেরিয়া খেয়ে ফেলায় ধানের চারা বেড়ে উঠতে পারছে না। অনেক কৃষক খেতের ধান রক্ষার চেষ্টায় বিষ প্রয়োগ করেও তেমন একটা ভালো ফল পাচ্ছে না। অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে পানাগুলো অন্যত্র সরিয়ে ফেললেও রাতের মধ্যে তা আবার ভরে উঠছে। এই অবস্থা জেলার রায়গঞ্জ, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার প্রায় ৩০ ভাগ জমিতে। রোগ বালাইয়ের আক্রমণে চাষীদের হতাশা দিনদিন বেড়েই চলছে। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি ও ওষুধ কিনতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

Related image

সলঙ্গার গোজা ব্রিজ এলাকার কৃষক হায়দার আলী মন্ডল ও কালু মন্ডল বলেন, চলতি বছর প্রচণ্ড শীতের কারণে বোরো ধানের বীজতলা তৈরিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরপর চারা রোপণের পর থেকে জমিতে সবুজ রংয়ের পানায় নিম্ন শ্রেণির উদ্ভিদে ভরে যায়। এগুলো পরিষ্কার করলেও রাতের মধ্যে আবারও ভরে যায়। জমিতে সার দিতে পারছি না। পানার জন্য সার চারার নিচে পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণে চারা বড় হতে পারছে না। এ সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় দেখছি না।

কৃষক সোলায়মান হোসেন, মজিবুর রহমান সেখ ও ইউনুস আলী বলেন, পানার কারণে জমি রক্ষা করা যাচ্ছে না। গত দুই মাস আগে জমিতে বোরো ধানের চারা লাগিয়েছি কিন্তু বড় হচ্ছে না। কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন কোম্পানির লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু তারা সঠিক ওষুধ দিতে পারছেন না। তাদের কথা মতো জমিতে বিষ প্রয়োগ করেছি তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। একদিকে খরচ বাড়ছে অন্যদিকে সমাধানের রাস্তা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার লোকসান গুনতে হবে।

এ বিষয়ে সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান সরকার বলেন, ধানখেতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা হতাশগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী জানান, এই রোগটি এ বছরই প্রথম দেখা গেল। আমরা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের আক্রান্ত ধানখেত সরেজমিনে দেখাব। তারা যে নির্দেশনা দেবেন সেই মোতাবেক কাজ করা হবে। তবে এসিআই কোম্পানির জাম্প নামক ওষুধ ব্যবহার ও জমি থেকে পানি শুকিয়ে তারপর জমি খনন করে চারা রোপণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে কিছুটা ফলও পাচ্ছেন কৃষকরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর