ফরিদপুর ১ সংসদীয় আসন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফরিদপুর ১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি  জুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রচার-প্রচারণাও চলছে সমানে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সত্তরের নির্বাচন থেকে শুরু করে এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এবারো সেই ধারাবাহিকতা রাখতে চায় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আর আওয়ামী লীগের এ দুর্গে হানা দিয়ে বিজয়ী হতে চায় বিএনপি। তবে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, আগামী নির্বাচনে ফরিদপুর ১ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন ফ্যাক্টর হবে। নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ভর করবে অনেকটাই প্রার্থী মনোনয়নের ওপর।

এ বছরের শেষ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে এখন থেকেই দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়ে বিলবোর্ড ও ফেস্টুনসহ প্রচার ও প্রচারণাসহ চলছে সমানে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান আগামীতে নৌকার টিকিট চান। তার অনুগামী-অনুসারীরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন।

যদিও স্থানীয়রা বলছেন, গত আট বছরে এলাকার রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে আব্দুর রহমানের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। যদিও বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আব্দুর রহমান তার বলয়ের বাইরে কাউবে খুব একটা পাত্তা দেন না। দলীয় নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ  তার কাছে  যাওয়ার সুযোগ পান না।

গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। বোয়ালমারী পৌরসভার নির্বাচনে তৃতীয় হয়েছিলেন এমপির সমর্থিত শাহজাহান মীরদাহ পিকুল। ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনেও এমপি সমর্থিত পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে জয়ী হয়েছে একজন। অন্যরা বিদ্রোহী প্রার্থী।

সবকিছুর পরও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে আব্দুর রহমানকে এগিয়ে রাখছেন তার সমর্থকরা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, আগামীতে নৌকার মাঝি মনোনয়নে দলের সিদ্ধান্ত সর্তকতার সঙ্গে নিতে হবে।  তা না হলে নৌকার বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।

এই আসনে আওয়ামী লীগের নতুন সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বেশ আলোচনায় রয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আরিফুর রহমান দোলন। ইতিমধ্যে এলাকার অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষার উন্নয়নে তিনি কাজ শুরু করেছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছেন। আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলাতে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। প্রচার-প্রচারণায় নতুন হিসেবে আরিফুর রহমান দোলন আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলির সদস্য, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক কাজী সিরাজুল ইসলাম খুব করে চাইছেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে। প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন জোরে-শোরে। তবে বিগত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ২০০৫ সালের ৪ জুন দল ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছিলেন।

বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি পুলিশ পাহারায় এলাকায় গেলে সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়েন। এ সময় তার গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। বিএনপি ছেড়ে আবারো  আওয়ামী লীগে এলেও ওইসব নেতাকর্মীরা এখনো তাকে সহজভাবে নিতে পারেনি। স্থানীয়রা জানিয়েছে, কাজী সিরাজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তির পাশাপাশি তার বয়সের বিষয়টিও মানুষের বিবেচনায় আসছে।

এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান বোয়ালমারী উপজেলার  চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মুশা। বোয়ালমারী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে বলে মনে করেন তার অনুসারীরা। এ ছাড়া নিজ উপজেলার উন্নয়নেও তিনি কাজ করেছেন। সেই বিচারে আগামী নির্বাচনে তিনি নৌকার টিকিট চান। এ জন্য প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি লায়ন মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাক।

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফরিদপুর ১ আসনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও তিনজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকবার সাবেক সাংসদ  মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফর, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ  নির্বাচনে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ফরিদপুর জেলা ওলামা দলের সভাপতি মোঃ শরীফুল ইসলাম নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

আগামী নির্বাচনে শাহ মোঃ আবু জাফরকে সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী ধরে নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে বিএনপি। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গণসংযোগ করছেন। পাশাপাশি সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামও চাইছেন ধানের শীষের প্রার্থী হতে। তিনিও এলাকায় যাচ্ছেন। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন। যদিও কেন্দ্র থেকে এখনো  মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে আর কোনো দল বা কোনো প্রার্থীও দৃশ্যমান কোনো প্রচারণা চোখে পড়েনি ফরিদপুর ১ আসনের নির্বাচনী এলাকার তিন উপজেলায়।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর