১০ টাকা কেজির চালে সরকারের ভর্তুকি ৩৭ টাকা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিগত সময়ে ওএমএস’র চালের মান খারাপ হওয়ায় টার্গেটের তুলনায় কম বিক্রি হচ্ছিল। পরে চালের দাম ২০ টাকা থেকে কমিয়ে করা হয় ১৫ টাকা। তারপরও ডিলাররা চাল বিক্রি করতে পারেনি। সাড়া মেলেনি ক্রেতাদের। এ বছর চালের দাম আরও কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ১০ টাকা। মান কেমন হবে ১০ টাকা কেজি চালের? এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বিতরণ বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকারী সচিব মোঃ নুরুল ইসলাম শেখ বলেন, দেখুন আমরা যে চাল বিক্রি করি তা দেশি চাল। দেশি মিল থেকে সংগ্রহ করা হয়। আর মানুষের দেশি চালের প্রতি আগ্রহ বেশি। আশা করি এবার চালের মান ভাল হবে।

প্রতি কেজি চালে কত টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রতি কেজি চাল মিল মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করি ৩৯ টাকা দরে। এর সাথে যোগ হয় মেইনটেইনেন্স খরচ। তাতে প্রতি কেজি চালের দাম দাঁড়ায় প্রায় ৪৩ থেকে ৪৪ টাকায়। এছাড়াও ডিলারদের প্রতি কেজি চালের উপর দেড় টাকা করে আমরা কমিশন প্রদান করি। আর সেই চাল মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি করতে সরকারের প্রায় ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি যাবে। এভাবে দেড় লাখ টন চাল আমরা প্রদান করবো।

বিগত সময়ে দেখা গেছে, গোডাউন খালি করতেই ওএমএস পদ্ধতিতে এভাবে কম দামে চাল বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ‘মান’ এ খারাপ ওই চাল নিয়ে পরে ডিলারদের বিপাকে পড়তেও দেখা গেছে। এবার এমন ঘটনা ঘটবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গোডাউনে থাকা চাল খালি করতে না পারলে নতুন চাল সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণে সমস্যা দেখা দেবে। তবে চালের মান খারাপ কিনা তা আপনারা ডিলারদের সাথে কথা বললে জানতে পারবেন।

এদিকে খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, আগামী মে থেকে বোরো ধানের চাল সংগ্রহ শুরু করবে সরকার। যার পরিমাণ হবে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ টন। তাই আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ১০ থেকে ১২ লাখ টন চাল বা গম গুদাম থেকে সরাতে না পারলে নতুন ধান ও চাল সংগ্রহে জটিলতা দেখা দেবে। কারণ সরকারি গুদামগুলোর মোট ধারণক্ষমতা প্রায় ১৭ লাখ টন। নতুন বোরো সংগ্রহ না করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া বাজারে ধান ও চালের দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গুদাম খালি করতে না পারলে বোরো সংগ্রহে লক্ষ্য অর্জন ৫-৬ লাখ টনের বেশি হবে না। এজন্য খাদ্য অধিদফতরের দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা সহকারী সচিব মোঃ নুরুল ইসলাম শেখ বলেন, সারাদেশে প্রতিটি ইউনিয়নে জনসংখ্যার ভিত্তিতে গত ২০১৬ সালের শুরুর দিকে দুই বা তিনজন করে ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই আমরা এ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালনা করবো। যদিও আমরা গত বছর চাল সংকটের কারণে এ কর্মসূচি পালন করতে পারিনি।

সরকারের এ কর্মসূচি নতুন কিছু? নাকি আগে থেকেই চালু আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা নতুন কিছু নয়। আমাদের এ কর্মসূচি ২০১৬ সাল থেকেই চালু রয়েছে। মাঝে ২০১৭ সালে দেশের হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যার ফলে চাল সংকট সৃষ্টি হয়। তাই আমরা গতবছর এ কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। তবে ২০১৬ সালে এ কর্মসূচি আমরা সফলভাবে পালন করতে পেরেছি।

তবে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ বদরুল হাসান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, চালের মান ভাল। আমরা প্রথম শ্রেণীর চাল মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি করবো। এটা ৫ লাখ পরিবার পাবে। মূলত এটা সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আমরা করছি। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে বছরের যে ৫ মাসে মানুষের কাজ কম থাকে সেই সময়ে এ ধরনের সহযোগিতা করবে সরকার।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নিয়োগ পাওয়া নওগাঁর আতরাই থানার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের ডিলার মোঃ শাহিন মিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা শুধু মিডিয়ায় শুনছি। এর কোনো তৎপরতা এখনও দেখছি না। তবে আমরা শুনেছি এবার প্রথম শ্রেণির চাল দেবে সরকার।

তিনি আরো বলেন, এর আগে ওএমএস’র মাধ্যমে যে চাল সরকার বিক্রি করেছে তা মানে খারাপ ছিল। প্রথমে প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি না হওয়ায় দাম কমে ১৫ টাকা করা হয়। এবার আমরা চাল এখনো হাতে পাইনি ফলে চালের মান নিয়ে কিছু বলা মুশকিল।

বছরের প্রথম দফায় মার্চ ও এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফায় সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে মোট দেড় লাখ টন চাল বিক্রয় করবে খাদ্য অধিদফতর।

দশ টাকা কেজি এ চাল দেশের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ থেকেই বিক্রয় করা যাবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ বিভাগের দায়িত্বে থাকা সহকারী সচিব মোঃ নুরুল ইসলাম শেখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর