ভাষা যোগ্যতায় বাংলা সব দিক থেকে উত্তীর্ণ, সেরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেইসবুক থেকে সরকারি দপ্তর-প্রাযুক্তিক—সব জায়গায় বাংলা চর্চার প্রতি জোর দিচ্ছেন। ইংরেজির আধিপত্য ও করপোরেট প্রভাবের এই সময়ে আপনি এক রকম লড়াই করে যাচ্ছেন বলা চলে। এখন পর্যন্ত কতটুকু সফল আপনি? এ ক্ষেত্রে বাংলার কেমন ভবিষ্যৎ দেখেন?

৩৫ কোটি মানুষের ভাষা পরাস্ত হতে পারে না। কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। যেমন মানুষ মাকে ভোলে না, মাতৃভূমিকে ভোলে না, তেমনি মাতৃভাষাকেও ভুলতে পারে না। এখন আমাদের বাড়তি একটি শক্তি রয়েছে—বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যদি না থাকত, তাহলে আমাদের হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়তো থাকত। পৃথিবীতে যে কয়টি ভাষা ও লিপি হারিয়েছে তার অন্যতম কারণ—ওরা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি।

বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা না দিতে পারলে আজকের বইমেলা হতো না। কারণ ডিজিটাল যুগে যখন প্রকাশনা চলে গেল, তখন তাকে ধরে রাখার জন্য আমাদের প্রযুক্তি দরকার ছিল। বিজয় কিন্তু ওই প্রযুক্তিটা দিয়েছে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা ব্যবহারের উদ্যোগ কি কখনো নেওয়া হয়েছিল?

১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু বাংলা একাডেমিতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমার সরকার যখন ক্ষমতায় যাবে তখন থেকে সব কিছু বাংলায় লেখা হবে। পরবর্তীকালে ’৭২-এ যখন তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেন, তখন থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যান্ত্রিক সুবিধা, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং প্রশাসনিক উদ্যোগ—সবটাই নিয়েছিলেন।

শহীদ মুনীর চৌধুরী ১৯৬৯ সালে টাইপরাইটার কি-বোর্ড তৈরি করেছিলেন, যার নাম মুনীর কি-বোর্ড। বঙ্গবন্ধু পূর্ব জার্মানির অপটিমা নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে এই কি-বোর্ড দিয়ে অপটিমা মুনীর নামে টাইপরাইটার তৈরি করেন। যা দিয়েই বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়। এর আগ পর্যন্ত বাংলায় অফিশিয়াল কাজ করা যায়, বাংলা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যবহৃত হতে পারে—এটি কেউ ভাবতেও পারেনি।

বঙ্গবন্ধু শুধু প্রশাসনিক কাজে বাংলাকে ব্যবহার করেছেন, তা নয়। ব্যাংক-বীমা—এই ধরনের প্রতিষ্ঠান, এমনকি সেনাবাহিনীর কমান্ড পর্যন্ত যেন বাংলায় হয়, তা তিনি করেছিলেন।

তাহলে বাংলা ব্যবহারের আজকের চিত্র কেন এত হতাশাজনক?

পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে পটপরিবর্তনে আমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ইংরেজি হচ্ছে আন্তর্জাতিক ভাষা। ইংরেজি না জানলে পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবেন না, দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। এটি অমূলক ধারণা, যা আমাদের ঔপনিবেশিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সাধারণভাবে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তার অনেকগুলোতেই ঘাটতি আছে। আমরা যখন রাষ্ট্রব্যবস্থায় ডিজিটাল হতে শুরু করলাম, তখন কোথাও কোথাও ডিজিটালের নামে বাংলা ভাষাকে নেওয়া হচ্ছিল না। যেমন—বাংলা হরফে বাংলাদেশে কোনো কম্পানির নাম নিবন্ধন করা যায় না। জয়েন্ট স্টক কম্পানিতে অটোমেশন হয়েছে, কিন্তু সেখানে বাংলা হরফ লেখার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আমাদের ই-টেন্ডার আছে, সেখানে বাংলা হরফ প্রবেশ করানোর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমনকি যেসব ব্যাংক একসময় বাংলায় গ্রাহককে স্টেটমেন্ট দিত অথবা বাংলায় সব লেনদেন করত, সেখানেও দিন দিন রোমান হরফ প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। আমরা বাংলা লেখা শুরু করছি রোমান হরফ দিয়ে, রোমান হরফে ভুলভাবে বাংলা লেখার প্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছি।

পৃথিবীর অনেক দেশ রয়েছে, যারা ইংরেজি ব্যবহার করে না, ইংরেজি জানলেও কথা বলে না। জার্মানি, ফরাসি, জাপান, কোরীয়রা—এমন অনেক দেশই আছে। এসব দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলে তাদের ভাষা শিখে তারপর যেতে হয়। তারা কিন্তু পিছিয়ে পড়েনি! বরং বৈশ্বিক শিল্পবিপ্লবে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।

ভাষা যোগ্যতায় বাংলা সব দিক থেকে উত্তীর্ণ, সেরা। আসলে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে, সত্যিকারভাবে বাংলাকে ভালোবাসতে হবে।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডটবাংলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, যা দিয়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় বাংলা ভাষার পথচলার সুযোগ তৈরি হয়। ইন্টারনেটে রাষ্ট্রীয় ভাষার এই ব্যবহার বিশ্বজুড়ে জাতীয় পরিচয়েরও স্বীকৃতি। ডটবাংলা চালুর কার্যক্রমে গতি আনার ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকাও আছে। প্রায় এক বছর পরও এই ডটবাংলার প্রচলন খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। কেন?

ডটবাংলা নিবন্ধনের জন্য প্রথমত, কোনো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ছিল না। দ্বিতীয়ত, ডটবাংলা করতে গেলেই দুই শব্দের কোনো কোনো ডোমেইন নেইমকে ১০ হাজার, তিন শব্দের ডোমেইন নেইমকে ১৫ হাজার মাসুল দিতে হতো। যেখানে সাধারণ কোনো ডোমেইন নেওয়ার জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বেশি খরচ হয় না। এসব করে যেন বাংলা ডোমেইন না নেওয়া হয়, সে রকম একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

আমি এর মধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছি, সাধারণভাবে ডটবিডির জন্য যে খরচ হয়, ডটবাংলার ক্ষেত্রেও খরচ একই যেন থাকে। কারো ট্রেডমার্ক থাকলে বিষয়টিকে মেধাস্বত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এসব নিয়ে নির্দেশনামা দ্রুতই জারি করা হবে।

তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার বাড়ানো, বাংলা কম্পিউটিংয়ের নতুন নতুন উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে ১৫৯ কোটি চার লাখ টাকার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ নামের এই প্রকল্পে  তৈরি করার কথা ১৬টি সফটওয়্যার। ২০১৯ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। আড়াই বছর সময়ের এই প্রকল্পে এরই মধ্যে এক বছর শেষ। অগ্রগতি কতখানি?

এই প্রথমবার বাংলা ভাষাকে তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার জন্য সরকার এত বড় একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলা ভাষাকে শুধু ঐতিহ্যগত নয়, প্রযুক্তিগত মানদণ্ডেও সবার ওপরে দেখতে পাব। প্রকল্পে বিশ্বের সব ভাষার যত প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন আছে, বাংলা ভাষার জন্য সেগুলো উদ্ভাবন করা হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।

১৯৮৮ সালে আসা বিজয় বাংলা কি-বোর্ড প্রথম বাংলা কি-বোর্ড। ২০১৫ সালের  ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লেস্টোরে আসে বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যানড্রয়েড সংস্করণ। সেই তখন থেকে এখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে বিজয়ের অবদান ঐতিহাসিক। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া অভ্র বিতর্কে এখনো আপনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। আমরা দেখেছি, আইনগতভাবে এর কপিরাইটে আপনার দাবিই সঠিক। তাহলে এখনো এই বিতর্ক কতখানি যৌক্তিক? সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনা, আপনি মন্ত্রী হয়েছেন, তাই এখন রিদ্মিক-ইউনিবিজয়-অভ্র সব বন্ধ করে দেবেন!

বিজয়ের সঙ্গে অভ্রের কোনো বিরোধ নেই। অথবা কে কোন সফটওয়্যার বানিয়েছে বা বানাবে, সেটার সঙ্গেও বিজয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকেই জানে না বিজয়ের জন্ম তারিখ পর্যন্ত, সে কারণে অনেকের ধারণা, কোনো এক বালক এক দিনে এসে বিজয়ের সফটওয়্যার তৈরি করে ফেলেছে।

বিজয়ের জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আমি বরাবর বলে থাকি, বিজয় যখন কি-বোর্ড আকারে প্রকাশ করা হয়, তখন এর প্রগ্রামিং করেছিল ভারতের দেবেন্দ্র যোশি নামে একজন। তিনি ম্যাকিন্টোশের জন্য একটি সফটওয়্যার বানিয়ে দিয়েছিলেন। আমি আমার ঘরে সফটওয়্যার বানিয়েছি, যা ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশ করা। ফলে ইতিহাস বিকৃত করার কোনো সুযোগ, কারণ কিছুই নেই।

কি-বোর্ড লেআউট, সফটওয়্যারে লেখার পদ্ধতি, ফন্ট—এমন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে জড়িত। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে কি-বোর্ড লেআউটটা শতভাগ আমার করা, আমি তৈরি করেছি এবং আমি এটা প্রয়োগ করেছি। সফটওয়্যারের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোককে নিয়োজিত করেছি, যারা কাজ করেছে। আমি কখনো দাবি করি না, আমি প্রগ্রামার। আমি প্রগ্রামার না এবং হওয়ার কোনো ইচ্ছাও আমার নেই। তাই প্রগ্রামারদের দিয়ে আমি কাজ করিয়েছি আমার কি-বোর্ড কেমন করে বাস্তবায়ন করতে হয়। ফন্টগুলো আমার হাতে তৈরি করা, অলমোস্ট এভরিথিং। অভ্রের সঙ্গে বিরোধটা দেখা দেয় তখন, যখন অভ্র বিজয় কি-বোর্ড আমার অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করে। পরবর্তীকালে অভ্র এটা মেনে নিয়ে আমার সঙ্গে চুক্তি করে তাদের সফটওয়্যার থেকে বিজয়কে বাদ দিয়ে অভ্র নতুন করে ব্যবহার হচ্ছে। এখন অপপ্রচারের কথা যদি বলা হয়, তাহলে তা বেশিদিন থাকবে না, সত্য মানুষ জানবেই। কারো প্রতি আমার কোনো ক্ষোভ বা বেদনা কিছু নেই। আমি শুধু তাদের বলব, ইতিহাস পাঠ করা উচিত। আর কাউকে নিষিদ্ধ করার কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো সফটওয়্যার নিষিদ্ধ হয় না।

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের আলোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা বিলুপ্তি রেখে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করা হলেও এ ধারার অনুরূপ বেশ কিছু বিধান ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়ায় রয়েছে, যা উদ্বেগের। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের খসড়া প্রস্তুত কমিটির সদস্য আপনি। সাইবার সিকিউরিটি থেকে ডিজিটাল সিকিউরিটি নামটিও আপনার দেওয়া। এই আইনটি নিয়ে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের উদ্বেগের বিষয়ে কী বলবেন?

আইনটি আমাদের সুধীসমাজ ও সাংবাদিকদের কাছে সুবিচার পায়নি। ঢালাওভাবে সব ধরনের অপরাধকে ৫৭ ধারায় ফেলে অপপ্রয়োগের সুযোগটা ছিল। নতুন আইনে অপরাধগুলোকে বিন্যস্ত করা হয়েছে। চারটি ধারা করার মানে হচ্ছে—অপরাধ চার ভাগে বিভক্ত হয়েছে, শাস্তিগুলো চার ভাগে বিভক্ত হয়েছে, এখানে সংজ্ঞাগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে।

আমাদের বোঝা দরকার, আমরা সাংবাদিক হলেও আমাদের সংবিধান সবার ওপরে। সংবিধান আমাকে বাকস্বাধীনতা দিয়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছে। সংবিধান সঙ্গে কিছু শর্তও দিয়েছে। এই শর্ত হচ্ছে, আমি এমন কিছু করতে পারব না, যেটি দিয়ে অন্যের স্বাধীনতা হরণ হয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতি নষ্ট হয়, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে কেউ যেতে পারে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সংবিধানের ওই বিষয়গুলো রক্ষা করা।

৩২ ধারাটি দিয়ে এক ধরনের নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে। তা হলো, আপনি যা খুশি তা করতে পারেন না। আমি আমার ঘরে খালি গায়ে বসে আছি, আপনি এসে সেটি ক্যামেরা দিয়ে তুলে পত্রিকায় ছেপে দিলেন!  আপনার স্বাধীনতা থাকলেও আমার গোপনীয়তা রক্ষা করাটা বেশি জরুরি।

কোথায় যদি দেখেন অন্যায় হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই যা যা করা দরকার তা করবেন। শব্দটি ওখানে বলা আছে—‘গোপনীয়’। গোপনীয় মানে কী? আমার এমন কিছু তথ্য আছে, যা আমাকে গোপন রাখতে হয়। আমি আমার রাষ্ট্রের সব তথ্য প্রকাশ করতে পারি না। আমার গোপনীয় তথ্য যদি ছবি তুলে নিয়ে যান, সেটা হবে গুপ্তচরবৃত্তি। এতে আমার ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র—সবাই বিপন্ন হতে পারে।

সাংবাদিকরা গুপ্তচর নন, সাংবাদিকরা নিজেরা গুপ্তচর হবেন—এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও এটিকে প্রতিবন্ধকতা মনে করি না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর