গ্রামে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন নারীরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোদাল দিয়ে কুপিয়ে জমি তৈরি করা থেকে শুরু করে খেতে পানি দেওয়া, চারা বোনা, আগাছা পরিষ্কার, ফসল তোলাসহ সব কাজ করেন নারীরা। তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় ফলছে ফুল-বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, আলু, শিম, বরবটি, ক্ষীরা, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, শালগম, লালশাক-পালংশাকসহ শীতের নানা সবজি।

এভাবে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৩৬টি গ্রামে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন নারীরা। গ্রামগুলোর প্রায় ৫ হাজার পরিবার শীতকালীন সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এসব পরিবারের নারীরাই মাঠে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

কীত্তিপাশা ভীমরুলি গ্রামের সবিতা রানী হালদার বলেন, একসময় গ্রামগুলোয় নারীরা এত কাজ করতেন না। তখন পেয়ারা, নারকেল, সুপারি আর সামান্য ধান হতো। সে সময় প্রায় ঘরেই অভাব ছিল। কিন্তু এখন নারীরা মাঠে কাজ করেন। এ কারণে প্রায় ১২ মাস গ্রামগুলোয় সবজির চাষ হয়। অভাবও ঘুচে গেছে।

এলাকার পুরুষ সদস্যরা বলেন, কিষানিরা খেত সামলে আবার সংসারের রান্নাবান্নাসহ ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার দায়িত্বও পালন করেন। অনেক সময় নৌকা বেয়ে সবজি বাজারে নিয়ে বিক্রিও করেন তাঁরা। এত সব কাজে পুরুষেরা পাশে থেকে সাহায্য করেন। পেয়ারা, আমড়াসহ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা।

গ্রামগুলো হলো ভীমরুলি, ডুমুরিয়া, বেশাইনখান, গোপীনাথকাঠি, শংকরধবল, খেজুরা, স্থানসিংহপুর, বেউখির, পাঁঞ্জিপুথিপাড়া, পূর্ব বাউকাঠি, মিরাকাঠি, বহারামপুর, দিয়াকুল, আতাকাঠি, পশ্চিম ভাওতিতা, দেউড়ি, রাজাপুর, নাগপাড়া, গৈয়া, জগদীশপুর, হিমান্দকাঠি, দাঁড়িয়াপুর, শিমুলেশ্বর, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, বিকনা, কাপড়কাঠি, আতা, আটঘর, কাঁচাবালিয়া, রমজানকাঠি, দোগলচিড়া, বেতরা, বালিগোনা, শাখাকাঠি ও গাবখান।

রাজাপুর গ্রামের মাহিনুর বেগম বলেন, ‘এক একর জমিতে প্রায় ৪০ মেট্রিক টন ক্ষীরা পেয়েছি। তা পাইকারি বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা পেয়েছি।’

স্থানীয় লোকজন বলেন, গ্রামগুলোর উৎপাদিত শাকসবজি জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকা ও বরিশালে চালান হচ্ছে। গ্রাম ঘুরে ঘুরে পাইকারেরা খেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে চালান করেন বড় বাজারে। পরিমাণে অল্প হলে হাটে সবজি বিক্রি করতে নিয়ে যান নারীরা।

সদর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় এ মৌসুমে ১ হাজার ৪২ হেক্টর জমিতে শাকসবজির চাষ হয়েছে। ওই ৩৬ গ্রাম জেলায় সবজি উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এখানে মাঠ থেকে উৎপাদিত সবজি সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রির জন্য ব্যবস্থাও রয়েছে। সদরে কৃষি কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বাজার সংগঠন প্রকল্পের (আইএফএমসি) পাঁচটি স্কুল আছে। স্কুলের প্রতিটি দলে ২৫ জন পুরুষ ও ২৫ জন নারী সদস্য রয়েছেন। দলের উৎপাদিত সবজি সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রি হয়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তানজিলা আহম্মেদ বলেন, নারীরা কৃষি বিভাগ থেকে বাজার সংগঠন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে কীভাবে উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করতে হবে, তা শিখছেন। কৃষিতে এখানকার নারীরা পুরুষদের সহায়তা করে সার্বিক অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনছেন।

সম্প্রতি কীত্তিপাশা, পোনাবালিয়া, ভীমরুলি, ডুমুরিয়া, পশ্চিম ভাওতিতা, বাউকাঠি ও শতদশকাঠিসহ ১৫টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সবজির খেত প্রায় পুরুষশূন্য। মাঠে নারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ সবজি তুলছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউ কোদাল দিয়ে জমি ঠিক করছেন।

জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গ্রামগুলোয় প্রণোদনা ও পরামর্শ দেওয়াসহ
নানাভাবে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করে আসছে। কৃষিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অর্থনীতির অবস্থা মজবুত করছে।

মাহমুদুর রহমান

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর