রোহিঙ্গারা যে কারণে ফিরতে চান না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সন্ত্রাস দমনের নামে রাখাইন রাজ্যে হিংস্র অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানে নির্যাতন, বাড়িঘরে আগুন ও গণধর্ষণের মুখে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেন। এ অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও আসছেন। তাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তি স্বাক্ষরের পরও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা।

এ ছাড়া মিয়ানমারে ফিরে যেতে আপত্তিও তুলছেন রোহিঙ্গারা। ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে গেল  গত শুক্রবার বিক্ষোভও করেছেন শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী বিক্ষোভ। রাখাইনে ফিরতে আপত্তির কারণ হিসেবে রোহিঙ্গারা যা বলছেন তার সারমর্ম হলো- নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও ক্ষতিপূরণ দেয়া না হলে রাখাইনে ফিরবেন না তারা।

কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সাহারা খাতুন নামে এক নারীর সঙ্গে কথা হয়েছে বিবিসি বাংলার। বিবিসি বাংলার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নব্বইয়ের দশকে মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে যখন প্রথমবার তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন, সেবার তাকে এখানে থাকতে হয় এক যুগ। ২০০৩ সালে দেশে ফিরেছিলেন তিনি।

সাহারা বলছেন, দেশে ফেরার কিছুদিন পরই তার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। পুনর্বাসনের জন্য যে টাকা তিনি পেয়েছিলেন সেটি কেড়ে নেয়া হয়। এরপর গতবছর আবার তিনি পালিয়ে এসেছেন।

এবার পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরও ফেরত পাঠাতে যে চুক্তি হয়েছে সেটি শুনেছেন তিনি। তবে দেশে ফিরতে চান কি না- এমন প্রশ্নে রীতিমতো আঁতকে ওঠেন তিনি।

‘না, না বাবা, আমরা আর ফিরতে চাই না। ওরা যতোই চুক্তি করুক, ওরা আমাদের নির্যাতন করবেই। মরলে আমরা বাংলাদেশেই মরতে চাই। এখানে তো অন্তত দুইবেলা খাবার খেয়ে শান্তিতে থাকতে পারি।’

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সাম্প্রতিক চুক্তিতে বাড়ি-ঘর পুনর্নির্মাণ ও রিসেপশন ক্যাম্প থেকে তাদের পুনর্বাসনের যে কথা বলা হয়েছে সেটি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে রয়েছে নিরাপত্তা সঙ্কট আর নাগরিকত্বের বিষয়টি।

আরও একজন রোহিঙ্গাও বলেছেন নিজের ফিরতে না চাওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের ওরা অনেক চালবাজ। চুক্তি করেছে, কিন্তু এর কোনো বিশ্বাস নেই। সেখানে যদি আমাদের নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো বাহিনী মোতায়েন না থাকে তাহলে আমরা যাব না।’

আরেকজন বলেছেন, ‘প্রথমেই আমাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে, চলাফেরার অধিকার দিতে হবে, আমাদের জায়গা-জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু ওরা তো আমাদের নাগরিকত্বই দিচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে ফেরার পর মিয়ানমারে আমাদেরকে ওরা কতদিন ক্যাম্পে রাখবে সেটাও তো জানি না। ওরা তো আমাদের অনেকদিন ধরেও আটকে রাখতে পারে।’

মূলত পূর্বঅভিজ্ঞতা থেকে এবার দেশে ফিরতে এত আপত্তি তুলছেন রোহিঙ্গারা। আর এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা যদি শেষ পর্যন্তও ফিরতে না চায় তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

অবশ্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেন শান্তিতে থাকতে পারে চুক্তিতে সেরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর