জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে ক্ষমতার পথে এগিয়ে দেবে আওয়ামী লীগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে সেটা ভোটের আগেই বিএনপির হার বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে আওয়ামীলীগও যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের দাবি মেনে নেবে এমন সম্ভাবনা নেই। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এটা স্পষ্ট, বিয়টি নিয়ে সরকার কোনো আলোচনার গুরুত্বও দেখছে না। আর রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেও সরকারকে বাধ্য করা যাবে না। কারণ এর আগে বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন মানুষ ভালোভাবে নেই নি। সেই পথে আবারো হাটতে গেলে তা হবে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী।

বিএনপি হয়তো ভেবেছিলো জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন বিষয়ে আলোচনার ইঙ্গিত দেবেন। কিন্তু না, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টই বলেছেন, সংবিধানে যে ভাবে বলা আছে সেভাবেই নির্বাচন হবে অর্থাৎ নির্বাচন কালীন সরকারের অধিনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এ অবস্থায় বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনে যেতে হবে আর নির্বাচনে যেতে হলে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে অর্থাৎ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়েই ক্ষমতায় যাওয়ার পথ তৈরি করতে হবে দলটিকে।

স্বভাবগতভাবে মানুষ সবচেয়ে শক্তিশালীকে পছন্দ করে এবং শক্তিশালী গোষ্ঠির পেছনে অবস্থান নেয়। বর্তমানে সেই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপির মধ্যেও রয়েছে সে শক্তির অবস্থান। তাদের সেই শক্তির ধারক হচ্ছেন দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কেননা তারুণ্যের রাজনীতিতে তারেক রহমানের সমকক্ষ কেউ নেই, তার এই শক্তিকে কাজে লাগানো ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো পথ খোলা নেই। নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ে যদি তারেক রহমানকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় তবে বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়েও ক্ষমতায় যেতে পারে।

সাধারণ চোখে বিএনপি যদি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয় তবে সেটা আত্মঘাতী হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা হাসিনার অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার কাছে হেরে গেছেন এই রব উঠে যবে। যার রেশ স্পষ্ট হবে ভোটগ্রহণে। সেইসাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিগত দিনের আন্দোলনে দেশের সম্পদ ও জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার দ্বায়ও নিতে হবে বেগম খালেদা জিয়াকে।

তবে হ্যা, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর সে আলোচনাকে যদি অন্যকোনো ইস্যু দিয়ে একবারে ঢেকে দেয়া যায় তবে চিত্রপট অন্যরকম হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই ইস্যুটা হতে পারেন তারেক রহমান।

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর তারেক রহমানকে দেশে আনার ঘোষণা দিলে মানুষের আলোচনার ইস্যু পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং সেটা বিএনপির পক্ষেই যাবে।

প্রশ্ন হতে পারে, তারেক রহমান দেশে আসলেই কী বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। না, বিএনপি ক্ষমতায় তখনই যেতে পারবে যখন তারা মানুষের আবেগে এবং আলোচনায় ঠাই করে নিবেন। কেননা শক্তির দিক দিয়ে আওয়ামীলীগ এগিয়ে কিন্তু মানুষের আবেগের দিকটায় বিএনপিকে এগিয়ে থাকতে হবে। আর মানুষের মনে বিএনপির প্রতি আবেগের জায়গাটা আওয়ামী লীগই তৈরী করে দেবে।

নির্বাচনের পূর্ব মূহুর্তে তারেক রহমান দেশে ফেরার ঘোষণা দিলে স্বাভাবিকভাবেই তাকে বাধা দিবে আওয়ামীলীগ। এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু ভুলে গিয়ে মানুষের মনে স্থান করে নেবে তারেক ইস্যু। অন্যদিকে বিএনপির তরুন প্রজন্ম ধারুনভাবে উজ্জিবীত হবে তারেক রহমানকে ঘিরে। এতে করে তারুন্যের শক্তির প্রকাশ ঘটবে, বিএনপিতে যেটার বড়ই অভাব।

তারেক রহমান দেশে আসার ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগ হয়তো তাকে আইনগত ভাবে মোকাবেলার চেষ্টা করবে। এজন্য তার বিরুদ্ধে চলমান মামলা এবং আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা গুলোকে কাজে লাগাবে। কিন্তু তার পরেও নির্বচন পূর্ববর্তী সময়ে তারেক রহমানকে গ্রেফতারের সাহস হয়তো আওয়ামী লীগ দেখাবে না। আর যদি গ্রেফতার করেই ফেলে তবে বিএনপিকে ক্ষমতার পথে আরো একধাপ এগিয়ে দেবে খোদ আওয়ামী লীগই।

আমরা হয়তো ভাবছি, আওয়ামী লীগ তো চাচ্ছে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে তেমনই মনে হচ্ছে। কিন্তু বক্তব্যে চাওয়া আর পরিকল্পনায় চাওয়া এক নয়। আওয়ামী লীগ কখনোই চাইবে না নির্বাচন পূর্ব সময়ে বিএনপি কেন্দ্রিক কোনো আলোচনা মানুষের মনে স্থান করে নিক। এজন্য আওয়ামী লীগ চাইবে অত্যন্ত নীরবে তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঠেকাতে। কিন্তু বিএনপিকে সেই নিরবতা ভাঙ্গতে হবে। তারেক রহমানকে দেশের মাটিতে আনতে হবে। বাকি দায়িত্ব পালন করবে দলের সাধারণ কর্মীরা এবং জনগণ।

মোট কথা সাধারণ মানুষের যান মালের ক্ষতি না করে বৈধপন্থায় বিএনপিকে তারেক ইস্যু নিয়ে নির্বাচন পূর্ববর্তী মাঠ গরম করে রাখতে হবে। কেননা শেষ মুহুর্তে যারা মানুষের মনে পজিটিভলি স্থান করে নিতে পারবেন তারাই চূড়ান্ত লক্ষে পৌঁছবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর