গাজীপুর সিটি নির্বাচন শেষ পর্যন্ত সেই জাহাঙ্গীরই পাচ্ছেন নৌকার টিকেট

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গাজীপুরের সেই তরুণ নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমই শেষ পর্যন্ত নৌকার টিকেটে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলে জাহাঙ্গীর আলমকে এমনই আভাস দেন দলের হাইকমান্ড। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার জাহাঙ্গীরকে মাঠ গোছাতে বলেন এবং স্থানীয় ভোটারদের পাশে থাকতে বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম হাওর বার্তাকে  বলেন, আমি গণভবনে গিয়েছিলাম, নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি মাঠে কাজ করতে বলেছেন। মানুষের পাশে থাকতে বলেছেন। এর বেশি কিছু এখন বলতে চাই না।

তবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাজীপুর থেকে নৌকার টিকেট জাহাঙ্গীরই পাচ্ছেন, এমনই আভাস দেওয়া হয়েছে তাকে। আমাদের নেত্রী যাকে গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদটি নিজে দিয়েছেন। মহানগরের যার রয়েছে বিশাল জনপ্রিয়তা সেই জাহাঙ্গীরই শেষ নৌকার পাচ্ছেন এমনই আভাস দিয়েছেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাকে নেত্রী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন, নেত্রীর নিদেশে ইতিমধ্যে ওয়ার্ড, প্রস্তাবিত থানা এবং মহানগর কমিটিকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করে যাচ্ছি। দলের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও আমার ভালো যোগাযোগ আছে। বিগত দিনের যে কোন সময়ের তুলনায় দল এখন অনেক শক্তিশালী এবং চাঙ্গা।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মহানগরের যানজট একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা দূরিকরণে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে মহানগরের তিন শতাধিক ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দিয়েছি। যারা নগরের যানজট নিরসনে কাজ করছে। এছাড়া শিক্ষাবৃত্তিসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। নগরের মানুষ মুখিয়ে আছে। নৌকার টিকেট পেলে বিজয় সময়ের ব্যাপার। বিজয়ী হয়েই নেত্রীর বিশ্বাসের মর্যাদা আমি রক্ষা করবো।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোয়ন দেয়নি তৃণমূল আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলীয় সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সবাইকে চমকে দিয়ে ভোটের মাঠের ষ্ট্রাইকার হিসেবে বেছে নেন সেই উপেক্ষিত আইভীকেই। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সেই বিশ্বাস এবং আস্থার পূর্ণ মর্যাদা বিজয়ের মাধ্যমেই রক্ষা করেছিলেন নারায়নগঞ্জের অগ্নিকন্যা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সেই আইভী।

গাজীপুর মহানগরের আওয়ামী লীগের নেতারাও মনে করছেন, নারায়ণগঞ্জের মতো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর কন্যার চমক জাহাঙ্গীর আলম। ভোটের মাঠের ষ্ট্রাইকার হিসেবে জনপ্রিয় এবং তরুণ নেতা জাহাঙ্গীরকেই বেছে নিবেন। মহানগরের একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, গত সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পেলে জাহাঙ্গীর বিজয়ী হতো, সেই নির্বাচনের পর নেত্রী বিষয়টি বুঝতে পেওে তাকে মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ পদটিও দিয়েছেন। আগামী মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখেই দলের সভানেত্রী জাহাঙ্গীরকে পদটি দিয়েছিলেন। দিনের আলোর মতোই পরিস্কার জাহাঙ্গীরই পাচ্ছেন নৌকার টিকেট। শুনেছি দলের হাইকমান্ড ইতিমধ্যে মাঠে নেমে ভোটারদেও কাছে যেতে বলেছেন জাহাঙ্গীরকে।

মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জিসিসির প্রথম নির্বাচনে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে মেয়র পদে দলীয় সমর্থন চেয়েছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। যিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। সেই জাহাঙ্গীর ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে নির্বাচনের মাঠে নামলে দল তাকে সমর্থন দেয়নি। সেই নির্বাচনে দল থেকে সমর্থন পেয়েছিলেন সাবেক টঙ্গীর পৌর মেয়র ও তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমতউল্লা খান। তাকে সমর্থন দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে মহানগরের অধিকাংশ নেতাকর্মী ও দলীয় সমর্থকরা। জাহাঙ্গীরকে নির্বাচনের মাঠে রাখার দাবিতে ওই সময় মাঠে নামেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষুব্ধরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পাশপাশি বন্ধ করে দেয় ট্রেন চলাচলও। কাফনের কাপড় পড়ে রাস্তায় শুয়ে পড়ে হাজারো সাধারণ জনতা।

মহানগরে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নজর পড়ে প্রধানমন্ত্রীর। জাহাঙ্গীরকে ঢাকায় তলব করে নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মায়ের মতো ও দলে নিজের অভিভাবক শেখ হাসিনার নির্দেশ ফেলতে পারেননি জাহাঙ্গীর। সিটি নির্বাচনের সকল প্রস্ততি থাকা সত্ত্বেও শুধু প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন জাহাঙ্গীর। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় প্রার্থী আজমতউল্লার পক্ষে মাঠে নামেন। কিন্তু তৃমূলের সাথে আজমত উল্লার ভালো সম্পর্ক না থাকায় বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নানের কাছে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন আজমতউল্লা। সিটি নির্বাচনের বছরখানেক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্তত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বটি দেন জাহাঙ্গীর আলমকে। এমনকি সেই সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে আগামী নির্বাচনের জন্য মাঠ গোছানোর জন্যেও নির্দেশেনা দিয়েছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর