রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ ভেঙে দেয়ার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘রংপুরের সফল নির্বাচনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সুজন নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানান।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে এবং নির্বাচনকালীন সরকার ও সংসদ ভেঙে দেয়া সম্পর্কে একটি ঐকমত্যে না পৌঁছলে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে তার নিশ্চয়তা কোনোভাবেই দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, সকল পর্যবেক্ষকের মতেই সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ তথা গ্রহণযোগ্য হয়েছে। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিই ছিল মোটামুটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য।
রংপুরের নির্বাচনকে তাই, আন্তর্জাতিক আইনের ভাষায়, ‘জেনুইন ইলেকশন’ বা সঠিক নির্বাচন বলা চলে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রংপুরে সাত মণ ঘি জুটেছে, তাই রাধাও নেচেছে। অন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি করা গেলেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না, যদিও এর জন্য কমিশনের ভূমিকাই সর্বাধিক। বস্তুত, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা, নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলেও তা যথেষ্ট নয়। আরো সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে, সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে না, যদি না সরকার ও রাজনৈতিক দল সদিচ্ছা প্রদর্শন এবং দায়িত্বশীল আচরণ না করে। তাই রংপুরের নির্বাচন মানুষের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি করলেও, তা থেকে আগামী নির্বাচনগুলো, কেমন হবে তার কোনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে না।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয় না। পক্ষান্তরে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদল হয়। তাই জাতীয় নির্বাচনের সমীকরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর আমাদের দেশের ‘বিজয়ীদের সবকিছু করায়ত্তের সংস্কৃতিতে যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে জেতার এক অশুভ প্রতিযোগিতা বিরাজমান। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল মরণপণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলে আমরা আশ্চর্যান্বিত হবো না। তাই ঢাকাসহ আগামী ছয়টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলেও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে তা কোনোভাবেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুজন নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এই নির্বাচন কমিশন রংপুরের নির্বাচনের আগে কুমিল্লায় একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছে তা ভুলে গেলে চলবে না। রংপুরের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে পাঁচ হাজার সদস্য কাজ করেছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করার জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, আমরা সর্বজনীন ভোটাধিকার ব্যবস্থাকে মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি, তা আমাদের পুনরুদ্ধার করতে হবে। এক্ষেত্রে সুজন-এর সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দলসহ সকলকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব শফিউল আলম বলেন, আমরা নৈরাশ্যবাদী হতে চাই না। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রত্যাশা ও আন্তরিকতা থাকলে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। একজন নাগরিক হিসেবে আমি আশা করি, রংপুরের নির্বাচনের ধারাবাহিকতা আগামী নির্বাচনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।

গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সুজন সীমিত সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার জন্য নির্বাচনকেন্দ্রিক যেসব কাজ করছে তাতে আমরা আশাবাদী হতে পারি।

তিনি বলেন, রংপুরের নির্বাচন নিয়ে আমরা খুব একটা আশাবাদী হতে পারি না। কেননা, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক হয় তাহলে সরকারের যত খারাপ দুরভিসন্ধি থাকুক না কেন, তাতে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা সহজ হয় না।

আলোচনায় আরো অংশ নেন রাজনীতিবিদ হুমায়ুন কবীর হিরু, সুজন ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক আবুল হাসনাত, ক্যামেলিয়া চৌধুরী, মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর