ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি হস্তে দমন করা হবে : প্রধানমন্ত্রীর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিনি বলেন, ‘আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস, ভাঙচুর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না। আমরা কখনোই এ ধরনের কাজ বরদাশত করবো না। এ সময় এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক থাকতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘রাজনীতির নামে এ ধরনের জঘন্য নৃশংস কাজ যারা করবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে।’

আজ জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ-২০১৮ উপলক্ষে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের মানুষ পুড়িয়ে মারা কোন ধরনের রাজনীতি আমি জানি না।’

প্রধানমন্ত্রী স্কুলজীবন থেকে শুরু করা তার দীর্ঘ ৫০ বছরের অধিক রাজনৈতিক জীবনে সাধারণ মানুষকে গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারার এরকম রাজনীতি কখনো দেখেননি এবং এ ধরনের রাজনীতি কখনো গ্রহণযোগ্য নয় বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রাস্তা করি তারা রাস্তা কেটে দেয়। আমরা গাছ লাগাই তারা গাছ কেটে দেয়, রেলের লাইন তৈরি করি তারা উপড়ে ফেলে।

মৃতপ্রায় রেলকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তার সরকার ইঞ্জিন-বগি সব কিনে আনার পড়ে সেগুলা পোড়াচ্ছে, নতুন নতুন কেনা বাস পোড়াচ্ছে, সাধারণ মানুষ যে ব্যবসা-বাণিজ্য করে খায় তাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিচ্ছে। ট্রাক পোড়াচ্ছে, সিএনজি চালককে সিএনজির সঙ্গে বেঁধে রেখে সিএনজি পুড়িয়ে দিচ্ছে বা একজন প্রাইভেট গাড়ির চালককে নামিয়ে আগুন দিয়ে দিচ্ছে, পুলিশ হত্যা করছে।

এ সময় আন্দোলনের নামে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার (বিএনপি-জামায়াতের) কর্মসূচি রুখে দেওয়াতে পুলিশ বাহিনীর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনী সদা তৎপর। তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতাতেই তারা এই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এজন্য আপনাদের মাধ্যমে সকল পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের তিনি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে বিএনপি-জামায়াত এসে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করলেও এটা বাংলাদশের একার সমস্যা নয়, সারা বিশ্বের একটি সমস্যা এবং এ সমস্যা সমাধানে অনেক উন্নত দেশও হিমসিম খাচ্ছে। তারপরও তিনি বাংলাদেশ পুলিশকে কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করে যাওয়ায় ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব কাজ কিন্তু সব সময় এককভাবে করা যায় না। এখানে তথ্য আদান-প্রদান করে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে যদি কাজ করা যায় তবে ক্যাজুয়ালিটি কম হবে এবং কাজের সাফল্যও বেশি আসবে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হলি আর্টিজানে পরিচালিত সশস্র বাহিনীর অ্যাকশন সম্পর্কে বলেন, তখন রোজার দিনে অনেক রাত পর্যন্ত তিনি সকলকে নিয়ে গণভবনে বসে এর পরিকল্পনা ঠিক করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন বলেই মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সফলতার সঙ্গে জঙ্গি দমন এবং জিম্মি উদ্ধার সম্ভব হয়।

পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদানে সকল গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়ে একটি টিম করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে যখন যে তথ্য আসে তিনি তা অন্যদের জানানোরও নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেই সঙ্গে এই টিমের নিয়মিত বৈঠক আয়োজনে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ প্রদান করেন।

তিনি তথ্য বিনিময় ও পরিকল্পনা না করে এককভাবে শুধু ক্রেডিটের জন্য অপারেশন পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি পরামর্শ দিয়ে বলেন, এখানে একক ক্রেডিট নেওয়ার কোনো ব্যাপার নয়, কাজের ঝুঁকির কথাও চিন্তা করতে হবে। কারণ, যেখানে জীবন-মরণের প্রশ্ন সেখানে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য এবং সাহায্য নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে গণমানুষকে সরকারের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘জনগণই কিন্তু ক্ষমতার মূল উৎস। তাই আমরা যদি এসব কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারি তাহলে কাজগুলো আরো সহজ হয়ে যায়।’

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ উচ্ছেদে তার সরকারের সারা দেশের মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধিসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে গণসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারার কারণেই আমরা এই সামাজিক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। কারণ, মানুষই কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় খবর সরবরাহ করছে। যে কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ আজকে অবাকই হয়ে যায় যে, এত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আমরা কীভাবে এটাতে সফল হতে পারছি।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশীদ হোসেন, পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মুনীরুজ্জামান, রাজবাড়ি জেলার পুলিশ সুপার সালমা বেগম এবং কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আলী হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর