বাংলাদেশে কৃষিবিদদের জন্য রয়েছে নানারকম কাজের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে কৃষিবিদদের জন্য রয়েছে নানারকম কাজের সুযোগ-সুবিধা। এনজিও এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিক্ষেত্রে কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলোতে রয়েছে কৃষিবিদদের যথেষ্ট চাহিদা। এছাড়া রয়েছে বেসরকারি পেস্টিসাইড ও ইনসেক্টিসাইড কোম্পানিগুলোতে কৃষিবিদদের কাজের ক্ষেত্র।

নয়নাভিরাম শেকৃবি ক্যাম্পাস কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন মঈন-উস-সালাম। ভর্তি হলেন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজে, ক্লাসও করলেন। কিন্তু হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন মেডিক্যাল ছেড়ে ভর্তি হবেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিদ্ধান্তটা অনেকের কাছেই নিছক ছেলেমানুষি মনে হলেও তার বর্তমান ক্যারিয়ার পুরোটাই স্বপ্নিল। তিনি এখন কৃষিবিজ্ঞানী ড. মঈন-উস-সালাম।

কৃষি দিয়ে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে। এমন একটা সময় ছিল যখন কৃষিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ ছিল খুবই কম। তাছাড়া কৃষিতে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া এবং কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া ছিল অকল্পনীয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি কৃষিকে নিয়ে ভাবছে স্বয়ং সরকারই। তাই কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা। সবমিলিয়ে বর্তমানে কৃষি খাতে রয়েছে স্বপ্নিল ক্যারিয়ারের হাতছানি।

কৃষিবিদদের সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্র কৃষিতে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে বাংলাদেশ কর্মকমিশনের (বিসিএস) সাধারণ ক্যাডারে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কৃষি ক্যাডারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা পদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরিতে ঢোকার সুবিধা রয়েছে।

এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষিবিদ নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা কৃষিবিদদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে কৃষিবিদদের জন্য রয়েছে নানারকমের কাজের সুযোগ-সুবিধা। এনজিও এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিক্ষেত্রে কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি বীজ কোম্পানিগুলোতে রয়েছে কৃষিবিদদের যথেষ্ট চাহিদা।

এছাড়া রয়েছে বেসরকারি পেস্টিসাইড ও ইনসেক্টিসাইড কোম্পানিগুলোতে কৃষিবিদদের কাজের ক্ষেত্র। বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্র, পাট গবেষণা কেন্দ্র, ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র, চা গবেষণা কেন্দ্র, মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র, বন গবেষণা কেন্দ্র, রেশম উন্নয়ন বোর্ডসহ মসলা গবেষণা কেন্দ্রগুলোয় রয়েছে কৃষিবিদদের কাজের সুবিধা।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বিএডিসিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে কাজের সুযোগ। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউএসএইড, ডিএফআইডি, ড্যানিডা, সিডা, উইনরক, ইরি, আাইএফডিসি ও অক্সফাম জিবির মতো প্রতিষ্ঠান। ব্র্যাক, স্কয়ার, অ্যাগ্রোভেট, লালতীর, ন্যাশনাল অ্যাগ্রোফেয়ার, প্রশিকা, আশা, এসিআই, কৃষিবিদ গ্রুপ, অ্যাকশন এইডের মতো বাংলাদেশি এসব প্রতিষ্ঠানেও উচ্চবেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে শুধু কৃষিবিদদের জন্য।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেশ ছাড়াও বিদেশে রয়েছে উচ্চশিক্ষার বিশাল সুযোগ কৃষিবিদদের। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, জার্মান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারতে প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী গমন করে থাকে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর শাদাত উল্লা বলেন, কৃষিতে দেশ-বিদেশে বিপ্লব ঘটায় কৃষিবিদদের ভবিষ্যৎ দিনে দিনে উজ্জ্বলতর হচ্ছে।

কোথায় পড়বেন কৃষিবিদ হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা করতে হবে। পরে কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়গুলোর নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কৃষি অনুষদের ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি (অনার্স) ইনএজি (অ্যাগ্রিকালচার) কোর্স বেছে নিতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি এজি (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ; সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যায়, সিলেট; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল।

এছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এ ডিগ্রি নেয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর