হাওর বার্তা ডেস্কঃ অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও খাল-জলাশয়ের মুখ ভরাটের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও সলঙ্গায় হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে রয়েছে। রবি ফসল সরিষা চাষ করতে না পারায় কৃষকেরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তাই দ্রুত পানি নিস্কাশনের জন্য খাল-জলাশয় সচল রাখার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা। তা না হলে আগামীতে ধান আবাদও হুমকির মুখে পড়বে বলে তারা জানিয়েছেন।
জানা যায়, শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও সলঙ্গা। ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ার অজুহাতে গত কয়েক বছর যাবত কতিপয় কৃষক কৃষি জমি কেটে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করেছে। আবার প্রভাবশালী ব্যক্তি খাল-জলাশয়-নয়নজুলি দখল করে বসতভিটা নির্মাণ করছে। এছাড়াও উজানে নাটোরের সিংড়া ও ভাটিতে পাবনার চাটমোহরে সুতিজাল দিয়ে পানি প্রবাহের গতি রোধ করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় এবার পরপর দুবারের বন্যা ও অতিবৃষ্টি হওয়ায় সময়মত জমি থেকে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় তাড়াশ ও সলঙ্গার হাজার হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। একারণে জমিতে রবিশস্য সরিষা আবাদ করতে না পারায় কৃষকেরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। সামনে ধান চাষাবাদ, জমিতে এখনো পানি থাকায় শঙ্কিত রয়েছে কৃষকরা।
কৃষক মুনজুর হাজী জানান, যত্রতত্র জমির মধ্যে পুকুর কেটে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আগে যে সমস্ত খাল দিয়ে পানি নিস্কাশন হতো সব খাল দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে জমি থেকে পানি বের হতে পারছে না। এ অবস্থায় সরিষা আবাদ তো দুরের কথা আগামীতে ধান চাষ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছি।
কৃষক জুলমাত আলী জানান, প্রতিবছর সরিষা আবাদ করে সেই ফসল বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে ধান লাগানো হয়। কিন্তু এবার জলাবদ্ধতার কারণে সরিষা আবাদ করা সম্ভব হয়নি। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এখন চরা সুদে ঋণ নিয়ে ধান রোপন করতে হবে। দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে আগামীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, অপরিকল্পিত পুকুর খনন, খাল-জলাশয় ভরাট ও সুতিজাল দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধের কারণে সরিষা আবাদে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। এ বছর অর্ধেক জমিতে সরিষা আবাদ না হওয়া কৃষকের বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। এগুলো নিরসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। মাঝে-মধ্যে পুলিশ নিয়ে গিয়ে খালের ভরাটমুখ খুলে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া পুকুর খনন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পানি নিষ্কাশনে যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় এজন্য প্রশাসনের পাশাপাশি জমির মালিকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।