মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক অঙ্গভঙ্গিমায় নম্র ভাষায় ভিক্ষুকের মতো হাত বাড়িয়ে দেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘স্যার আমাকে ১০টি টাকা দেন। রুটি খাবো। খুব খিদে পেয়েছে। কদিন ধরে খায়নি কিছু’। সামনে কোনো ভদ্রলোক পেলে স্যালুট দিয়ে সৈনিকের অঙ্গভঙ্গিমায় নম্র ভাষায় ভিক্ষুকের মতো হাত বাড়িয়ে দেন। এমন এক পাগলবেশী মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে হালুয়াঘাট উপজেলার উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামে।

নাম তার আনোয়ার হোসেন। পিতা মৃত আমিন উদ্দিন সিকদার। ভিক্ষাবৃত্তিই তার একমাত্র পেশা। কারও মন চাইলে টাকা দেন, আবার কেউ মুখ ফিরিয়ে নেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতার দাবি জানিয়ে আসছেন। যেই লোকটির জন্ম হয়েছিল ১৯৫২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭০ সালের ২রা মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (আর্মি সিরিয়াল নং ১০৩৩৮৩৭)তে যোগ দিয়েছিলেন।

প্রথম ট্রেনিং নেন চিটাগাং। তারপর চলে যান পাকিস্তানের করাচিতে। তিনি জানান, তখন তার সঙ্গে ছিলেন মেজর মোজাম্মেল, মেজর বর্ধন, নায়ক সুবেদার খলিলুর রহমান, হাবিলদার হাছেন আলীসহ অনেকেই। একপর্যায়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে করাচির ডিআই খান সেন্ট্রাল জেলে তাদের বন্দি করে রাখা হয়। একই জেলে ২৫শে মার্চ কালো রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকেও আটক করে রেখেছিলেন বলে সৈনিক আনোয়ার হোসেন জানান। অবশেষে দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর দেশে ফেরার সুযোগ পান। এরপর পুনরায় বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে মনোনিবেশ দেন।

যশোহর ক্যান্টনমেন্টে চাকরি করাবস্থায় চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর থেকে উল্টা দিকে ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। নিয়তির কাছে হার মেনে জীবিন-সংগ্রামে এক দুর্বিসহ জীবন এসে তাকে গ্রাস করে। ভিক্ষাবৃত্তির মতো একটা পেশাকে আঁকড়ে ধরে পাগলবেশে চলে তার জীবন। আনোয়ার বলেন, স্যার আমার একটাই দাবি, সরকার যেন আমার ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়। আমিও তো যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম। আমাকে যদি বন্ধি করে না রাখা হতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধে আমিও তো ঝাঁপিয়ে পড়তাম। লক্ষ্মীকুড়া গ্রামের মতিন বলেন, আর্মি থাকাবস্থায় আনোয়ার আর আমি একই অবস্থায় পাকিস্তানে বন্দি ছিলাম। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে কোনো স্বীকৃতি আজও মিলেনি। তিনি বলেন, আমাদের একটাই দাবি- সরকার যেন আমাদের ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়।

সূত্র: মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর