সাভারের স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ প্রস্তুত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাঙ্গালি জাতি ভেঙে ফেলে পরাধীনতার শিকল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় লাল সবুজের পতাকা। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই দিনটি তাই প্রতিবছর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতি। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সারাদেশের স্মৃতি মিনারগুলো ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে। চিরকৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে গাইবে মুক্তির জয়গান।

জাতির ৪৬তম বিজয় দিবস উদযাপনের ঊষালগ্নে যেন চিরচেনা রূপে ফিরেছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। এই দিনটিতে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষের ঢল নামবে এখানেই। তাইতো বাহারি ফুলের রঙ্গিন আভায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে স্মৃতিসৌধ এলাকা। কৃত্রিম হ্রদে ফুটে থাকা লাল শাপলা, সবুজ ঘেরা বৃক্ষরাজির মাঝে আলোর লুকোচুরি আর পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের রক্তিম লাল আভা স্নিগ্ধতা এনে দিয়েছে স্মৃতিসৌধ চত্বরে। এ যেন বারবারই মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই রণসঙ্গীতের কথা- পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল…।

একই সঙ্গে সেজেছে প্রধান ফটক থেকে শহীদ বেদি পর্যন্ত পায়ে হাঁটার লাল ইটের হেরিংবন্ড পথ। লাল ইটের উপর সাদা শুভ্র রঙের আঁচড় পুরো হেরিংবন্ড পথকে দিয়েছে অপরূপ এক সাজ। গত তিন দিন ধরে কয়েকজন কর্মী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত করে যাচ্ছেন এই কাজ। আর হেরিংবন্ডের দুই পাশ ও সৌধ প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে সারিবদ্ধ করে বসানো হয়েছে অসংখ্য লাল টকটকে ফুলের টব।

আর টবে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সবুজ গাছ। একই সঙ্গে স্মৃতিসৌধ মিনারের সম্মুখ ভাগে হেরিংবন্ড ধরে নিচু জায়গাগুলোতে গাঢ় সবুজ ঘাসের মধ্যে শোভা পেয়েছে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনীসহ নানা রঙের ফুল গাছের চারা। যা প্রতিবারের মতো এবারো সৌধ এলাকাকে এনে দিয়েছে রঙিন ও বর্ণিল রূপ।

এছাড়াও গত নয় দিন ধরে স্মৃতিসৌধ চত্বরের প্রায় ৪০ একর এলাকাজুড়ে চলছে ধোয়ামোছা ও অন্যান্য সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। স্মৃতিসৌধ এলাকার বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে লাগানো হয়েছে আলোকবাতি। চলছে উজ্জ্বল রঙিন-বর্ণিল আলোকসজ্জার কাজ। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

স্মৃতিসৌধ এলাকাকে যারা প্রতিবছর এভাবে সাজানোর কাজ করে থাকেন তাদের মধ্যে রহমান নামে এক দিনমজুর বলেন, প্রতিবছর বিজয় দিবস আসার পনেরো দিন আগে থেকেই তারা সৌধ এলাকাকে পরিচ্ছন্ন করার কাজে নামেন। এজন্য তারা দৈনিক পারিশ্রমিকও পান। আর এই কাজ করতে তাদের অনেক ভালো লাগে।

স্মৃতিসৌধ এলাকার প্রস্তুতির ব্যাপারে সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, স্মৃতিসৌধ এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন তারা। এখন কেবল মরিচবাতিসহ আনুষাঙ্গিক কাজগুলো চলছে।

তিনি বলেন, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশি কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তা সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও কূটনৈতিকসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

পুলিশের এই কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ। পর্যবেক্ষণের জন্য সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এছাড়া গত কয়েক দিন ধরে পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর