নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চিন্তা ভাবনা করছে দুই জোটে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নানা চিন্তা চলছে প্রধান দুই জোটে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও নির্বাচনে দুই জোট থেকে একক প্রার্থী দেয়া হচ্ছে এটি প্রায় নিশ্চিত। এজন্য জোট নেতাদের মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয় এই মুহূর্তে সবচেয়ে আগ্রহের বিষয় এটি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ইতিমধ্যে চিন্তা ভাবনা করছেন দলের হাইকমান্ড। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা হবে। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল নির্বাচনে অংশ নেবে এমনটা নিশ্চিত ধরেই প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী দিলে অন্যদলগুলো সমর্থন দেবে। জোটের অন্য দলের কেউ এখন পর্যন্ত প্রার্থী হতে সরাসরি আগ্রহ দেখাননি।

যদিও ভেতরে ভেতরে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে গতবারের মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে এবারো মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং সার্বিক নির্বাচনী পরিবেশ দেখে দল এবং জোটের পক্ষ থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। সিটি নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠকে বসবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে দলীয় প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর জোট নেতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে বিএনপির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে নতুন করে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের বিষয়ে কিছু জটিলতা থাকায় নির্বাচন নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

যদিও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এটি বড় কোনো সমস্যা নয়। মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে গত ৪ঠা ডিসেম্বর মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। ১লা ডিসেম্বর থেকে শূন্য হওয়া এ সিটি করপোরেশনে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে জটিলতা হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন। এই ১৮ ওয়ার্ডসহ নির্বাচন হলে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদকাল কতদিন হবে এ প্রশ্ন সামনে এসেছে।

নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু অর্ধ মেয়াদে উপনির্বাচন হচ্ছে তাই নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলররা বাকি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিষয়টি সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সুরাহা করতে পারলে নির্বাচন করতে আর কোনো জটিলতা থাকবে না। এদিকে শূন্য ঘোষণা করায় মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি শুরু করেছে। আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর চলতি মাসের শেষ দিকে বা আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের কম সময় আগে গুরুত্বপূর্ণ এ সিটিতে মেয়র পদে নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনের ভোটের ফলকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনও সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ জন্য প্রার্থী নিয়েও নানা হিসাবনিকাশ চলছে। দলের মনোনয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট নেতারা মনে করছেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক তার ইতিবাচক কর্মকাণ্ড ও উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষের মাঝে যে প্রত্যাশা তৈরি করেছেন তা পূরণ করতে তার মতোই গ্রহণযোগ্য কাউকে মনোনয়ন দিতে হবে।

দলের নেতাদের মধ্যে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কারও প্রতি দুর্বলতা নেই দলীয় হাইকমান্ডের। প্রয়াত আনিসুল হকের পরিবারের কেউ প্রার্থী হচ্ছেন কিনা এটি নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে। তবে মেয়র পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো এমন আগ্রহ প্রকাশ করা হয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন নেতা জানিয়েছেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো যথেষ্ট যোগ্য। তিনি যদি আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে দল গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। মনোনয়ন বোর্ডে তার নামটিও উপস্থাপন করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নেতা জানান, প্রার্থী হতে যাদের নাম আসছে তাদের বিষয়েও পর্যালোচনা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাওর বার্তাকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচন বিষয়ে আগামী সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে আমরা কথা বলবো। সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, যোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এমন কয়েকজনের নাম ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছে। তাদের মধ্যে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমত উল্লাহ, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচবিএম ইকবাল, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তারা প্রত্যেকে নির্বাচনে লড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু না বলা হলেও গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া তাবিথ আউয়ালই মনোনয়ন পাবেন বলে আলোচনা চলছে। প্রার্থী নিয়ে আগে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর জোটের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বিএনপি’র নীতিনির্ধারকরা। বিএনপি সূত্র বলছে, জোটের পক্ষ থেকে একক প্রার্থীই নির্বাচনে লড়বেন।

২০ দলের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে পার্থ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার বিষয় পুরোটি নির্ভর করছে বিএনপির ওপর। বিএনপি যদি জোটের শরিক দল থেকে প্রার্থী দিতে চায় তাহলে পার্থের নাম আসতেই পারে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন যাকে জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেবেন আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। এদিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে আলোচনা থাকলেও নির্বাচন নিয়ে তিনি এখনো অবস্থান পরিষ্কার করেননি।

পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া নির্বাচন হচ্ছে কিনা এটি এখনো পরিষ্কার নয়। সম্প্রতি বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট নামে যে নতুন রাজনৈতিক জোট হয়েছে এ জোটে রয়েছে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জোটের পক্ষ থেকেও ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মান্না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর