ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও জমা রাখা যাবে সরকারি টাকা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও (লিজিং কোম্পানি) সরকারি বা আধা সরকারি সংস্থাগুলোর তহবিল জমা রাখা যাবে। তবে সব লিজিং কোম্পানিতে নয়, যেসব কোম্পানির আর্থিক সূচক ভাল, শুধুমাত্র সে সব কোম্পানিতেই রাখা যাবে এ তহবিল।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। লিজিং কোম্পানিগুলোকে এ সুযোগ দিয়ে দুই বছর আগে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, এবারের প্রজ্ঞাপনটি তারই ধারাবাহিকতার অংশ।

ইতোপূর্বে ১৩টি লিজিং কোম্পানিতে টাকা রাখার সুযোগ দেয়া হলেও এবার একটি কোম্পানি বাড়িয়ে ১৪টি করা হয়েছে। এবং পূর্বের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ৩টি কোম্পানিকে। আর নতুন করে যুক্ত হয়েছে ৪টি কোম্পানি। আগের প্রজ্ঞাপন দুই বছরের জন্য হলেও এবারেরটি করা হয়েছে এক বছরের জন্য। সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো সব সময় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে তাদের তহবিল জমা রেখে আসছিল।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আর্থিক সূচকের চিত্র নেয়ার পরই সরকারি, আধা সরকারি সংস্থার টাকা রাখার জন্য লিজিং কোম্পানি চিহ্নিত করা হয়েছে। সূচকের মধ্যে বিবেচনা করা হয়েছে, খেলাপি ঋণের হার কম থাকা, আয় প্রবৃদ্ধি বা মূলধনের পর্যাপ্ততা, শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ইত্যাদি।

সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো তাদের নিজস্ব তহবিলের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থ বেসরকারি ব্যাংক বা লিজিং কোম্পানি অথবা উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে রাখতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

এসব সংস্থা তাদের নিজস্ব তহবিল ও এডিপি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে কত অংশ জমা রাখতে পারবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির অংশ বাদ দিয়ে যা বাকি থাকবে, তা তারা জমা রাখবে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে। সে হিসেবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ভাগে পড়বে সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিলের ৭৫ শতাংশ এবং এডিপি তহবিলের ৮০ শতাংশ।

দেশে বর্তমানে ৩২টি লিজিং কোম্পানি রয়েছে। ব্যাংকের মতো এই কোম্পানিগুলোরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি আমানত জমা রাখার জন্য এবারও লিজিং কোম্পানিকে বিবেচনা করায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)। তবে সমিতিটি নতুন দাবিও তুলেছে।

যোগাযোগ করলে বিএলএফসিএ চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম সব লিজিং কোম্পানির জন্যই নিয়মটি প্রযোজ্য হোক। অর্থ মন্ত্রণালয়কে আমাদের দাবির কথা জানিয়েছি। বলেছি, সব ব্যাংক আমানত পেলে লিজিং কোম্পানি কেন পাবে না?’

আমানত রাখার জন্য যে ১৪টি লিজিং কোম্পানি চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, মাইডাস ফাইন্যান্সিং, ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

পূর্বের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফাইন্যান্স এবং ন্যাশনাল ফিন্যান্সকে। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে মাইডাস ফাইন্যান্সিং, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স এবং মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে।

বিশ্লেষকেরা জানান, যেসব সূচক বিবেচনার কথা বলে লিজিং কোম্পানি চিহ্নিত করা হয়েছে, তা যথাযথ নয়। এ ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব বা তদবির কাজ করেছে। মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট নামক দুটি কোম্পানির দুই বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর