নির্বাচনে জয় চায় আওয়ামী লীগ, বিএনপির ভরসা জোটের ভোট

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আবারও জয় চাইছেন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। অন্যদিকে দলীয় কর্মী-সমর্থক ছাড়াও বিএনপি ভোটের জন্য ভরসা করতে চাইছে জোটভুক্ত দল জামায়াতের ওপর। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থিতার সুযোগ নিতে চাইছে দুই দলই। এদিকে বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে এবং বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগে সোনালী ব্যাংকের আবেদনের আপিল শুনানির নিষ্পত্তি হবে আজ। নাগরিকদের অভিযোগ, সড়কের বেহাল দশা, বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ সুবিধার অভাব, যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, সড়কের ফুটপাত দখলসহ রয়েছে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এদিকেই প্রার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছেন। প্রার্থী পছন্দ করার ক্ষেত্রে নানা চুলচেরা বিশ্লেষণও করছেন সাধারণ ভোটাররা।

সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সময় ৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রংপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ড ছিল। এখন সিটি করপোরেশন হিসেবে এর আয়তন হয়েছে ২০৩ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড হয়েছে ৩৩টি। এর মধ্যে ১ থেকে ৬নং ওয়ার্ড এবং ২৮ থেকে ৩৩নং ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই করুণ। যে ৭টি ইউনিয়ন এবং দুটি ইউনিয়নের আংশিক সিটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেসব এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। বর্ধিত অংশে এখনো রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম। অথচ তারা সিটিতে বসবাস করেন। ফলে তাদের বিদ্যুৎ বিলে ইউনিটপ্রতি ৩৪ পয়সা বেশি দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া সিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ভিজিএফ, ভিজিডিসহ সরকারি নানা সাহায্য থেকে সেখানকার নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ কর বেড়েছে কয়েকগুণ। এ ছাড়া নগরীর অধিকাংশ এলাকার সড়ক কাঁচা।

এ ব্যাপারে সাবেক রসিক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, তার আমলে রংপুর মহানগরের ২৯৩ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। নগরের রাস্তা, ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণসহ নানা উন্নয়নকাজ নগরবাসীকে স্বস্তি এনে দিয়েছে। যেসব এলাকায় উন্নয়ন হয়নি, সেসব এলাকায় কর বৃদ্ধি করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। উন্নয়নের চেষ্টা হয়তো শতভাগ সফল হতে পারিনি। আগামীতে নির্বাচিত হলে সবগুলো ওয়ার্ডের উন্নয়ন করা হবে। এত বড় সিটির উন্নয়ন পাঁচ বছরে সম্ভব নয়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে নগরবাসী তাকেই নির্বাচিত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া যারা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর পক্ষে প্রচারণা করছেন তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে। নগরের উন্নয়ন করতে হলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন আছে। সাবেক মেয়র যেহেতু আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী, সেহেতু উন্নয়নের স্বার্থে তাকেই নির্বাচিত করা উচিত।

এদিকে নির্বাচনে জিততে নানামুখী কৌশল নিয়েছে বিএনপি। তারা দলীয় ও ব্যক্তিগত সমর্থক ছাড়াও যেসব দলের প্রার্থী নেই তাদের ভোট টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ২০ দলীয় জোটের শরিকরা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে। বিশেষত জামায়াতের ভোট পক্ষে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে দল দুটির মধ্যে আলোচনাও হচ্ছে বলে জানা গেছে। জামায়াত নেতারাও বলেছেন, তাদের ভোট বিএনপির প্রার্থী পাবেন। গত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছাড়াই নির্বাচন করে বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। এবারে দলীয় প্রতীকে ভোট করার কারণে এই ভোট অনেক বাড়বে বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা। ফলে ২০ দলীয় জোটের সম্মিলিত ভোটে তিনিই জয়ী হবেন বলে আশা করছেন।

আপিল শুনানি শেষে নিষ্পত্তি আজ : 

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ছয় মেয়র, চার সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং আট সাধারণ কাউন্সিলরের প্রার্থিতা আপিল শুনানি শেষে নিপত্তি হবে আজ। আজ সকালে বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান এসব আপিল শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করবেন। গত সোম ও মঙ্গলবার মনোনয়ন দাখিলকারীদের মধ্যে উল্লেখিত প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেন। এ ছাড়া ৪০ কোটি টাকার ঋণখেলাপির অভিযোগে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী কাওছার জামান বাবলার মনোনয়নপত্র বাতিলের আবেদন জানিয়ে গত মঙ্গলবার সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেছে। আজ দুপুরে বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান এসব আপিল শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর