মুরাদ-সাঈদ দ্বন্দ্ব অবসানের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনর মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের দ্বন্দ্ব অবসান করতে প্রাথমিক উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

আজ সন্ধ্যায় আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে দলের সাংগঠনিক আলোচনায় হাজির করা হয় শাহে আলম মুরাদ ও সাঈদ খোকনকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের মুরাদ ও সাঈদ খোকনকে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দলের স্বার্থে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় উভয় পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিতে চাইলে ওবায়দুল কাদের থামিয়ে দেন এবং পরোক্ষ বক্তব্যে সতর্ক করে দেন। নিজ উদ্যোগে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে মেয়র হানিফের স্মরণানুষ্ঠন সফল করার তাগিদ দেন।

এ সময় ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি।

দীপু মনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এটা আমাদের সাংগঠনিক আলোচনা ছিল। এতে অন্যান্য আলোচনার পাশাপাশি আগামী ২৮ নভেম্বর মেয়র হানিফের স্মরণানুষ্ঠানের প্রস্তুতির বিষয়েও কথা হয়।’

সাঈদ খোকনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- এ বিষয়ে মুরাদ হাওর বার্তাকে অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে আমার সঙ্গে কারো দ্বন্দ্ব নেই। যা হয়েছে সেটা আমার কারণে হয়নি। আমি দ্বন্দ্বে বিশ্বাস করি না। অন্য কারো ক্ষেত্রে থাকতে পারে। সে কারণ আমি জানি না। আর আজকের আলোচনা ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র হানিফের স্মরণসভা নিয়ে। আমাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি সেখানে যাব।’

বৈঠকের বিষয়ে জানতে সাঈদ খোকনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এর আগে সাঈদ খোকন ও শাহে আলম মুরাদের দ্বন্দ্বের আমলনামা জমা হয় গণভবনে। এই দুই পক্ষের নেতারা স্বপক্ষের যুক্তি তুলে ধরে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগও দিয়েছে। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই পক্ষের অভিযোগ শুনেছেন বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এনটিভি অনলাইনকে এটি নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই নেতাদের ভাষ্য, নেত্রী গুরুত্বের সঙ্গে অভিযোগ নিয়েছেন। সে অনুযায়ী তিনি দ্বন্দ্বের অবসান করবেন। তবে, আপাতত দৃশ্যমান শাস্তি স্থি কাউকে দিবেন না। দলের মধ্যে বিভেদ নয় বরং দলের হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি এ ধরনের দৃষ্টিকটু দৃশ্য আর দেখতে চান না বলেও নেত্রী হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগে এক সময় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, হাজী সেলিম ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের আধিপত্য ছিল। বর্তমানে সেটা অনেকাংশেই দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র সাঈদ খোকনের নিয়ন্ত্রতাক । প্রকাশিতব্য যে চূড়ান্ত কমিটি রয়েছে সেখানে মায়া, হাজী সেলিম, জালাল ও সাঈদ খোকনের লোকদের জায়গা না দেওয়ায় বিভেদ চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়।

মায়া, সেলিম, জালাল সরাসরি সাঈদ খোকনের পক্ষে না থাকলেও শাহে আলম মুরাদের বিপক্ষে থাকায় মহানগর আওয়ামী লীগে একটা বিরাট অংশ মিলে এরই মধ্যে মুরাদের বিপক্ষে চলে গেছে। এমনকি দক্ষিণের সভাপতি হাজি আবুল হাসনাত নিজেও মুরাদের বিপক্ষে রয়েছেন। যে কারণে সাঈদ খোকনের লোকদের সভা-সমাবেশে গণ্ডগোল ও বাধা দেওয়ায় সাহস পায় বলে জানা গেছে।

মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে হাওর বার্তা  অনলাইনকে বলেন, ‘১/১১ সময় সাঈদ খোকন কিংস পার্টি করতেন। সে সময় শাহে আলম মুরাদ ২৫ হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেই থেকে বিভেদ দেখা দেয় মুরাদ ও সাঈদ খোকনের মধ্যে।’

‘মেয়র হওয়ার পর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের মুরাদ পক্ষের নেতাদের দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব আয়োজন থেকে বঞ্চিত করা হয় বলে জানান এই নেতা।

গত ১৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টায় আজিমপুর পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে নাগরিক সমাবেশকে সফল করার লক্ষে ও নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ একটি বর্ধিত সভা আয়োজন করে। সভায় বাধা দিতে সামনের রাস্তায় সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলে সভা ভণ্ডল করার চেষ্টা করে। পরে দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ময়লার স্তুপ কিছুটা সরিয়ে ওই কমিউনিটি সেন্টারে প্রবেশ করে সভা চালাতে থাকে।

মুরাদের দাবি ছিল, এটি সাঈদ খোকন গ্রুপের কাজ।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পরিস্থিতি দেখে তিনি চলে যান। বিশেষ অতিথি হিসেবে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এরপর দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শাহে আলম মুরাদের কর্মীদের সঙ্গে সাঈদ খোকনের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় অনেক মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ উভয়পক্ষের আটজনকে আটক করে।

এর আগে গত মাসে মগবাজার ফ্লাইওভার উদ্বোধনের দিন মুরাদের লোকজন সাঈদ খোকনের লোকদের মঞ্চে উঠতে দেয়নি। এ নিয়েও হাতাহাতি হয়েছে। এরপর জেল হত্যাদিবস উদযাপনের প্রস্তুতি সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের উপস্থিতিতে শাহে আলমের ওপর চড়াও হয় সাঈদ খোকনের লোকজন। এ সময় সাঈদ খোকনকে পুলিশি নিরাপত্তায় ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর