তারকাদের সুইসাইড নোট

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যখন কারও আত্মহত্যার খবর মেলে, প্রথমেই প্রশ্ন আসে। এটা কি আত্মহত্যা নাকি হত্যা ? পুলিশও তৎপর হয়ে উঠে এর সুরাহার। অনেক আত্মহননকারী ব্যক্তি লিখে যান সুইসাইড নোট। এসব নোটের বেশিরভাগই ভাবপূর্ণ হয়ে থাকে। বিখ্যাত ব্যক্তিরাও যে হতাশা, বিষণনতা, একাকীত্বে ভোগে তার ধারণা স্পষ্ট করে সুইসাইড নোটগুলো। তেমনই কয়েকটি সুইসাইড নোটের সার সংক্ষেপ-

সালমান শাহঃ
রাজধানীর নিউ ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে ভাড়া বাসায় পাওয়া যায় সালমান শাহর লাশ। পরে সালমানের বাবা কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছেলের অপমৃত্যুর মামলা করেন রমনা থানায়। সেই সময়ে সালমানের বাসা থেকে পুলিশ একটি সুইসাইড নোট বা আত্মহত্যার চিঠি উদ্ধার করে।

যেখানে লেখা ছিল, ‘আমি চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার, পিতা-কমর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ১৪৬/৫, গ্রিনরোড, ঢাকা-১২১৫ ওরফে সালমান শাহ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে আজ অথবা আজকের পরে যেকোনো দিন মৃত্যু হলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আমি আত্মহত্যা করছি।’

কিন্তু সুইসাইড নোটের শেষে কারও স্বাক্ষর ছিল না। পরে সিআইডির হস্ত বিশারদেরা চিঠিটা পরীক্ষা করেন এবং তারা বলেন, এটা সালমান শাহের হাতের লেখা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী। তিনি মানতে নারাজ ওটা সালমানের লেখা।

মেরিলিন মনরোঃ
অতিমাত্রায় ড্রাগ সেবন করতেন। এমনকি একটা সময় ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা অবস্থায় তাঁকে মেকআপ করা হতো। শেষদিকে একের পর এক ব্যর্থ সিনেমা।

বিষণ্ণতার কারণে চার সপ্তাহ হাসপাতালে কাটান। সহকর্মীরা কাছে ভিড়তো না। মন যখন তখন পরিবর্তন হতো। কড়া ঘুমের ওষুধ খেতেন ঘুমানোর চেষ্টায়। ১৯৬২ সালে তিনি তার বেডরুমে আত্মহত্যা করেন। তার শেষ কথা ছিল- ‘প্যাটকে বিদায় জানাও, প্রেসিডেন্টকে বিদায় জানাও এবং বিদায় জানাও নিজেকে। কারণ তুমি চমৎকার।’ তিনি তাঁর মেন্টরের কাছে একটি নোট লিখেছিলেন- ‘আমি এখন পরাজিত… কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছি না… ইচ্ছে শক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে… আমি উন্মাদের মতো বলছি, মনে হয় আমি উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি… আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই, মনোনিবেশ করতে চেষ্টা করি, কিন্তু মনঃসংযোগ ঘটাতে ব্যর্থ হচ্ছি। মনে হচ্ছে মানব প্রজাতিতে আমার কোনো অস্তিত্বই নেই।’

জিয়া খানঃ
২০১৩ সালের ৩ জুন নিজের ভারতের মুম্বাইয়ে জুহুর এলাকার নিজ ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন জিয়া খান। দীর্ঘ এক চিঠিতে তাঁর একাকীত্ব ও অসহায়ত্বের জন্য প্রেমিক সুরজকে দায়ী করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘হয়তো তুমি কখনো জানবেনা, তুমি আমার এমন গভীরে স্পর্শ করেছো যার জন্য আমি তোমার প্রেমে হারিয়ে গেছি। যদিও তুমি প্রতিদিন আমার ওপরে নির্যাতন চালাতে, তবুও। আজকাল আমি কোনো আলো দেখি না। ঘুম ভাঙ্গলেও আমি চাই না ঘুম ভাঙ্গুক। একটা সময় ছিল যখন আমি তোমার সঙ্গে জীবনযাপনের কথা ভাবতাম, ভবিষ্যতের কথা ভাবতাম।’

এক দীর্ঘ চিঠির শেষদিকে লিখেছেন, ‘আমি কেউ নই। আগে আমার সব ছিল। এখন তোমার সঙ্গে থাকলেও আমার একা লাগে। তুমি আমাকে নিঃস্ব ও অরক্ষিত করে দিয়েছ। অথচ আমি এর চেয়েও বেশিকিছু।

কার্ট কোবেইনঃ
আমেরিকান সঙ্গীতশিল্পী যিনি মূলত রক ব্যান্ড নির্ভানার মূল গায়ক, গিটারিস্ট হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।

তার সুইসাইড নোটটি ছিল , ‘তোমাদের সামাজিক স্বাধীনতা আর বন্ধনের সাথে জড়িত নৈতিকতাগুলো চিনে ওঠার পর থেকে, পাংক রক ওয়ান জিরো ওয়ান এর কোর্সের সময় অবধি যেসব সতর্কবার্তা, সাবধানবাণী পেয়েছিলাম, তার সবই ফলে গেল। বহুকাল হয়ে গেল, মিউজিকে ডুবে থাকা, মিউজিক নিয়ে পড়ে-লেখে মিউজিক করা কিংবা গান বানানোর যে উন্মাদনা ছিল তার ছিটেফোঁটাও আমি আর অনুভব করিনা। এই অনুভূতিশূন্যতা নিয়ে এক শব্দাতীত অপরাধবোধ কাজ করে আমার মধ্যে।’

ছয় পৃষ্ঠার এক লম্বা চিঠি ছিল সেটি। যার শেষ দিকে ছিল, ‘বিগত সময়ের প্রতিটা চিঠি আর ভালোবাসার জন্য তোমাদের সবাইকে আমার যন্ত্রণাবিদ্ধ নরক আর ঘিনঘিনে পাকস্থলীর গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আদতে এক লক্ষ্যভ্রষ্টবিষণ্ণ শিশু। ভেতরের সেই প্রচন্ড আগুন আর আমার নেই, আর তাই মনে রাখা দরকার, উবে যাওয়ার থেকে পুড়ে যাওয়া শ্রেয়।

১৯৯৪ সালের ৫ এপ্রিলে কোবেইন আত্মহত্যা করেন। আনুমানিক মৃত্যুর তিন দিন পর, ৮ ই এপ্রিল, কোবেইনের লেক ওয়াশিংটন বুলেভার্দের বাড়িতে মৃত দেহ পাওয়া যায়। মারা যাওয়ার আগে এই চিঠি লিখে যান তিনি।

জনপ্রিয় মেগাসিরিয়াল অভিনেত্রী কুলজিৎ রান্ধওয়াও বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। ২০০৬ সালে আতহত্যার পূর্বে এক সুইসাইড নোট লিখে যান, সেখানে উল্লেখ করেন, ‘তিনি নাকি আর জীবনের দুর্বিসহ চাপ নিতে পারছেন না’ আশা ভোঁসলের কন্যা বর্ষা ভোঁসলে লেখালেখির পাশাপাশি  হিন্দী ও ভোজপুরি গানও করতেন। ২০১২ সালে তিনিও আত্মহত্যা করেন। মৃতদেহের পাশে পাওয়া গেল সেই সুইসাইড নোট। জানা যায়, বিবাহিত জীবনে ক্লান্ত হয়েই এমন পথ বেছে নেন তিনি।

সাউথের সুন্দরি সিল্ক স্মিতা। ১৯৯৬ সালে নিজের বেডরুমে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পাশে পাওয়া সুইসাইড নোট থেকে জানা যায়, জীবন থেকে হতাশ হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

আত্মহত্যা করা মিস ইন্ডিয়া এবং ভিডিও জকি নাফিসা জোসেফ। ক্যারিয়ারে আস্তে আস্তে পারদ চড়ছিল। বিয়ের পরই যত বিপত্তি। বিয়ের পর জানতে পারলেন তার স্বামীর এটা দ্বিতীয় বিয়ে। ব্যস ! সেই চরম দুঃখে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়লেন। সুইসাইড নোটে সেটা উল্লেখ করেন।

সূত্র : র‌্যাংকার.কম, বোল্ড স্কাই, টাইমস অব ইন্ডিয়া

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর