নূর হোসেনকেও হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চাকরিচ্যুত মেজর (অব:) আরিফ হোসেন তার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, সাত জনকে হত্যার পর কোনো সাক্ষী না থাকে সেজন্য নূর হোসেনকে হত্যা করতে তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি নূর হোসেনকে হত্যা করেননি।
মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ২০ পাতার মধ্যে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৪ সালের ৪ জুন জবানবন্দিটি রেকর্ড করেন নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিন।
আলোচিত সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথম দায় স্বীকার করেন অপহরণ, হত্যা ও গুমের মিশনে নেতৃত্ব দেয়া মেজর (অব:) আরিফ। ২০১৪ সালের ১৭ মে ভোরে ঢাকা সেনানিবাসের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় আরিফ হোসেনকে। পরে কয়েক দফা রিমান্ডে নেয়ার পর আরিফ স্বীকারোক্তি দেন।
জবানবন্দিতে আরিফ হোসেন জানান, অপহৃত সাতজনকে হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে ফেরত আসার সময় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি অপস) কর্নেল জিয়াউল আহসান স্যার আমাকে মোবাইলে ফোন করেন। ঐসময় আমি ফোন না ধরে বিষয়টি তারেক স্যারকে জানাই। তিনি পরে জানান জিয়াউল স্যার আমাকে ও তাকে তার অফিসে যেতে বলেছেন। পরে তিনি শুধু আমাকে ও আমার টিমের সদস্যদেরকে তার অফিসে যেতে বলেছেন। রাত অনুমান সাড়ে তিনটার দিকে ট্রলারে করে নারায়ণগঞ্জ ঘাটে এসে তারকে স্যারকে দেখতে পাই। আনুমানিক রাত চারটার দিকে আমি জিয়াউল স্যারের কাছে গেলে তিনি জিজ্ঞাস করেন, নজরুল কোথায়? তিনি আবারো আমাকে একই প্রশ্ন করেন। পরে তারেক স্যার ফোন করে আমাকে সব বলতে বললে আমি সব জানাই।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২৮ এপ্রিল আবার আমি ও তারেক স্যার জিয়াউল স্যারের কাছে যাই। জিয়াউল স্যার নূর হোসেনের বিষয়ে তথ্য নেন। এরপর তিনি জানান, আজকের মধ্যে নূর হোসেনকে মেরে ফেলতে হবে। তখন আমি বলি যে, নজরুলের কারণে নারায়ণগঞ্জ গরম হয়ে আছে। এ অবস্থায় নূর হোসেনকে হত্যা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
তিনি জানান, জিয়াউল স্যার পরে তারেক স্যারকে বলেন যে, এটা তোমাকে করতে হবে। তারপর আমি ও সিও স্যার নারায়ণগঞ্জে চলে আসি।
আরিফ হোসেন বলেন, ঐদিনই বিকালে অফিসে যাওয়ার পর আমরা জানতে পারি যে আমাদেরকে র‌্যাব হেডকোয়ার্টার ক্লোজ করেছে। ঐদিন রাতেই মুভ অর্ডার নিয়ে রাতেই মাতৃবাহিনীতে যোগদান করি। পরেরদিন সপরিবারে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা সেনানিবাস চলে যাই।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন। এর তিনদিন পর তাদের লাশ শীতলক্ষ্য নদীতে ভেসে ওঠে।
সাত খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানা ছাড়াও আরো ১৪ জন র‌্যাব সদস্যসহ মোট ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৭ জন র‌্যাব সদস্যসহ ২১জন আসামী হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আর ১২ জন র‌্যাব সদস্যসহ মোট ১৭ জন আদালতে সাক্ষী হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর