দশমিনার কৃষকরা ভালো নেই

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিডর আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় পটুয়াখালীর দশমিনার কৃষকরা প্রায় এক যুগেও অর্থের চাকা ঘুরাতে পারেনি। ব্যাংক ঋণ হাল করতে করতে বেড়েছে কয়েকগুণ। এসব কৃষকদের স্বপ্নের ফসল আমন ধানে বিভিন্ন প্রকার পোকার আক্রমণ ও ইঁদুরের উপদ্রবে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে পোকা দমনে কার্যকরী ঔষধ পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আমন ক্ষেতে বাদামি গাছ ফড়িং (বিপিএইচ), ঘাষ ফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এছাড়া বি,আর ধানে ইদুঁরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। ভয়ানক এ পোকার আক্রমণে ক্ষেতের পর ক্ষেতে সৃষ্টি হচ্ছে হপার বার্ন। হঠাৎ করেই এ সব পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। পোকার আক্রমণের কারণে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে এ বছর আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সর্বত্রই দেখা দিয়েছে ভয়ানক এসব পোকার সংক্রমণ।

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কেবল উপজেলাতেই ১৮ হাজার ৫শ হেক্টর কৃষিজমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ বছর যে পরিমাণ পোকার আক্রমণ ঘটেছে তাতে ফলন অর্ধেকেরও নিচে নেমে যেতে পারে। এদিকে এসব পোকা নিধনের জন্য বাজারে কার্যকরী প্লেনাম, কোটান জাতীয় কীটনাশক পাওয়া যাচ্ছে না। ইমিস্টাম্ফ, টিঠো, এডমায়ার ও বিলঠো জাতীয় কীটনাশকের মারাত্মক অভাব লক্ষ্য করা গেছে। অনেক কৃষকেরই এই পোকা সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় কী করণীয় তা ঠিক করতে পারছেন না।

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বহরমপুর, বাঁশবাড়িয়া, রনগোপলদি, আলীপুর, চরবোরহান, বেতাগী-সানকিপুর ও দশমিনা সদর ইউনিয়নে ধানের ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, ধানের পাতার রং সবুজের পরিবর্তে হলদে হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ক্ষেতজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে হপার বার্ন। কীটনাশক প্রয়োগ করেও তেমন সুফল মিলছে না। এই পোকা এক মাঠ থেকে আরেক মাঠে অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। খুব অল্পসময়ের ব্যবধানে পুরো ক্ষেতের ফসল মরে যাওয়ার কারণে কৃষকরা এসব পোকার নাম দিয়েছেন কারেন্ট পোকা।

এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান বলেন, কৃষকদের সচেতন করার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে পাঠানো হয়েছে।  তিনি আরও বলেন, একটি স্ত্রী ফড়িং থেকে ৭শ থেকে ৮শ বাচ্চা বের হয়। এই পোকাগুলো ধান গাছের নিচের অংশে আক্রমণ করে। এ পোকা দমনে ধানক্ষেতে আলোক ফাঁদ তৈরির পাশাপাশি গ্লামার, কোটান ও পাইরাজিন নামক কীটনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। আমাদের সব অফিসার মাঠপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উঠান বৈঠক করছেন, প্রায় ২ হাজার লিফলেট তৈরি করেছি সেগুলোও কৃষকদের মাঝে বিতরণ করছি। যেখানেই এই পোকার আক্রমণের খবর পাচ্ছি সেখানেই ছুটে যাচ্ছি এবং এই পোকা দমনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন শওকত বলেন, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কৃষি কর্মকর্তাকে যথাযথ ব্যববস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদের উদ্যোগেও আমরা ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর