আওয়ামী লীগে কোন্দল জাপার পোয়াবারো

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধা-১ আসন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নানাভাবে আলোচিত। ২৮শে ফেব্রুয়ারি জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব, শিশু সৌরভের গুলিবিদ্ধ হওয়া, পরবর্তীকালে এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি ঘটনা রাতারাতি সুন্দরগঞ্জকে দেশব্যাপী পরিচিতি এনে দেয়। ক্ষমতাসীন দলের এমপি লিটনের মৃত্যুর পর এ আসনে আওয়ামী লীগে নতুন করে অন্তঃকলহ, দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য শুরু হয়।
উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের আগেই সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগের হাফ ডজন নেতা প্রার্থী মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠে নামেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সুন্দরগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে দলের কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে থাকেন। সামনে আসেন ভাইয়ের স্মৃতিকে ধরে রাখতে প্রয়াত এমপি লিটনের বড় বোন আফরোজা বারী, স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি, আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা। শেষমেশ মনোনয়ন পেয়ে লড়াইয়ে নামেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ।

তিনি উপজেলা জাপা সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সেই সময় থেকেই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা প্রত্যাশী হিসেবে এমপি লিটনের বড় বোন আফরোজা বারী, স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি, পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অনেকের নাম উঠে আসে। উপ-নির্বাচনে গোলাম মোস্তফা প্রার্র্থিতা পেলেও আগামী নির্বাচনে তাকে প্রার্থী হতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পথ পাড়ি দিতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকলে সেক্ষেত্রে জাপার শামীম হায়দার পাটোয়ারী দলের পক্ষে মনোনয়নের বড় দাবিদার হবেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী তালিকা তেমন দীর্ঘ নয়। এই এলাকায় জামায়াতের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। জোটগত নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থিতা প্রত্যাশীদের টপকে শেষ পর্যন্ত জামায়াত নেতা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান প্রার্থী হতে পারেন। আর জামায়াত এই আসনটিকে কোনোভাবেই ছাড়তে নারাজ বলে দলের একাধিক সূত্র জানায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও এক বছরেরও বেশি সময় বাকি। তার পরও রাজনৈতিক সমীকরণ-মেরুকরণ ভাবনাকে পেছনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দলীয় সদস্য সংগ্রহ ও সদস্যপদ নবায়নের কার্যক্রম শুরু করেছে। নির্বাচন ঘিরে সেই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নানা কৌশলে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-১ আসনে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঘন ঘন এলাকায় এসে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা শিবির, সৌজন্য সাক্ষাৎকালে উন্নয়ন ভাবনা জানিয়ে দোয়া প্রার্থনা করছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। নিজেদের প্রার্থীদের মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিচ্ছেন তাদের সমর্থকরা।
১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটি। বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকার টিকেট চাইবেন অন্তত হাফ ডজন আওয়ামী লীগ নেতা।
এদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ, প্রয়াত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সহধর্মিণী ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি, বড় বোন আনন্দ গ্রুপ অব কোম্পানিজ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আফরোজা বারী, পৌর মেয়র ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ আবুল হোসেন খাজার স্ত্রী সৈয়দা মাসুদা খাজা, জেলা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম।
লিটনের দেখানো পথে সুন্দরগঞ্জকে সুন্দর করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করতে চান তার বড় বোন আফরোজা বারী। নির্বাচনকে ঘিরে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। বলছেন তিনি দলের মনোনয়ন পেলে তার ভাই প্রয়াত এমপি লিটনের অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে চান। সাধারণ ভোটারদের কাছে আফরোজা বারী একটা জায়গা করে নিয়েছেন।
অন্যদিকে উপনির্বাচনে নির্বাচিত প্রবীণ নেতা গোলাম মোস্তফা আহমেদ বলেন, এমপি নির্বাচিত হয়ে বিদ্যুৎ লাইন সমপ্রসারণ, ব্রিজ কালভার্ট, রাস্তা পাকাকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও সংস্কার নদী শাসন এবং তিস্তা ব্রিজ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে হাত দিয়েছি। ফলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সুতরাং দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।
পৌর মেয়র ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রয়াত লিটনের বড়বোন আফরোজা বারী এই আসনে মনোনয়ন প্রার্থী। তারাও মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিভিত্তিক ব্যাপক জনসংযোগ করছেন।
ওদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে ছাত্রদলের সুন্দরগঞ্জ থানা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম জিন্নাহ ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও হরিপুর ইউনিয়নের তিনবারের চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম ব্যাপক জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। মোজাহারুল ইসলাম জানান, হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি’র নেতাকর্মীরা কাজ করবেন।
জামায়াতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী বলেন, এই আসনটিতে এর আগে দুই বার জামায়াতের প্রার্থী বিজয়ী হন। জোটগত নির্বাচন হলেও জামায়াত এই আসনের ব্যাপারে অনড় থাকবে। জামায়াত নেতা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী।
জাতীয় পার্টি (এ)’র প্রার্থী হিসেবে গত উপ-নির্বাচনে দলের মনোনয়ন লাভকারী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও দলীয় চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের আইন ও বিচারবিষয়ক উপদেষ্টা ও উপজেলা জাপা সভাপতি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নামই শোনা যাচ্ছে। তরুণ এই আইনজীবী ইতিমধ্যে জাপার মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন টকশোতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেকজন হলেন ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা মহসিন।

মানব জমিন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর