রোহিঙ্গাদের ফেরানোর দায়িত্ব মিয়ানমারের : মার্কিন মন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মনোযোগ রয়েছে জানিয়ে ঢাকা সফররত দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বলেছেন, এ সংকটের শিকড় মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনই যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন আগামী ১৫ই নভেম্বর মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মূল্যায়নে মিয়ানমার হয়ে ঢাকায় আসা মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা স্টেট ডিপার্টমেন্টের জনসংখ্যা, উদ্বাস্তু ও অভিবাসন ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রীও প্রায় অভিন্ন সুরে এ সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ ও আকাঙ্ক্ষার কথা জানান।

মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সায়মন হ্যান্স বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দায়-দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের। তাদের ফেরতের প্রক্রিয়াও মিয়ানমারকেই শুরু করতে হবে।

রাখাইনে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যাতে বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো স্বেচ্ছায় নিজ নিজ বসতভিটায় ফিরতে পারে। রাখাইনে তাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার বিষয়টিও মিয়ানমারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

বর্মীদের বর্বর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশ দেরি করছে মর্মে মিয়ানমার সমপ্রতি অভিযোগ তুলেছে। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মার্কিন মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

আমেরিকান ক্লাবে গতকাল দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের কাছে প্রশ্ন ছিল- রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো মুখ খুলছেন না কেন?

জবাবে মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বলেন, কেবল স্টেট ডিপার্টমেন্ট নয়, হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটাল হিলও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। সবাই নিজ নিজ এরিয়াতে এ নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ‘টপ প্রায়োরিটি’তে রয়েছে।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের ওপর ‘কার্যকর চাপ অর্থাৎ অর্থনৈতিক অবরোধসহ কড়া কোনো ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে কিনা- জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে সহকারী মন্ত্রী সাইমন হ্যান্স বলেন, বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেস গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে। রাখাইন থেকে এখনো বিরক্তিকর নিপীড়নের তথ্য আসছে জানিয়ে তিনি বলেন আমরা অভিযোগগুলোর পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।

মন্ত্রী বলেন, সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর জন্য যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, রাখাইনে নির্যাতন বন্ধে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে আইন প্রণেতারা গত বৃহস্পতিবার দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু নিষেধাজ্ঞা ও ভ্রমণ-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব করেছেন।

এ ইস্যুতে ক্যাপিটাল হিল তথা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ‘কঠোর’ পদক্ষেপ হচ্ছে এই বিল। মিয়ানমার অবশ্য তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া দেখিয়েছে। দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির দপ্তর বলছে, এমন পদক্ষেপ মিয়ানমারের বেসামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সেনা নেতৃত্বের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বাড়বে, এমনকি চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াও ব্যাহত হতে পারে!

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকারের সফর বিনিময় এবং বৈঠকাদির বিষয়েও কথা বলেন মার্কিন সহকারী মন্ত্রী। চলমান দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগে উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে আলোচনায় গতি আনতে হবে। সংকটের সমাধান হতে হবে।

রাখাইন পরিস্থিতি জটিল ও মারাত্মক উল্লেখ করে তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের নির্দেশনায় আমরা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বার্মা সফর করেছি। এটি একটি চোখ খুলে যাওয়ার মতো সফর। রাখাইনে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে ‘পলিটিক্যাল রিকনসিলিয়েশন’-এর কথা আমরা বলেছি।

রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া সফল করতে এটি জরুরি। আমরা সেখানে অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছি। আক্রান্ত এলাকায় গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যাতায়াত অবাধ করতে বলেছি।

মার্কিন মন্ত্রী বলেন, আমরা কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোও ঘুরে দেখেছি। সামগ্রিকভাবে সংকটটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পর্যালোচনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষের একসঙ্গে পালিয়ে আসা নিঃসন্দেহে একটি গুরুতর বিষয়। আমরা একাধিকবার এ নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলেছি।

সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে। বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আমরা আলোচনা করছি। শরণার্থী শিবিরগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি বেদনাদায়ক।

ব্যক্তিগতভাবে বহু শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তার রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী হ্যান্স বলেন, এখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। শরণার্থীদের খাবার ও আশ্রয়ের সমস্যা রয়েছে। তবে রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা অভূতপূর্ব। সেখানে অনেক সংস্থা শরণার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এতো বিপুল সংখ্যক মানুষকে আমরা বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি না।

এই জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের আরো কাজ করে যেতে হবে। এ সময় মানবিক সহায়তা হিসেবে রোহিঙ্গাদের জন্য ২৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা (৩২ মিলিয়ন ডলার) দেয়ার মার্কিন প্রতিশ্রুতির বিষয়টি পুনরুল্লেখ করেন তিনি। বলেন, সংকট উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এর আগে শুক্রবার দুপুরে তিনি কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি স্কট বাসবি, দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি টম ভাজদা, পূর্ব-এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ডিরেক্টর প্যাট্রিসিয়া মাহোনি এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র হিদার নোয়ার্ট। সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ প্রতিনিধি দলের সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। এমজমিন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর