সবজির চারা বিক্রি করে লাখপতি কৃষক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জয়পুরহাট সদর উপজেলার গনকবাড়ী এলাকার হারুন অর রশিদ শীতকালীন সবজি চাষ না করে চারা উৎপাদন করেন। তিনি শুধু শীতকালীন সবজির বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটায়ে সেখান থেকে চারা বিক্রি করে হয়েছেন লাখপতি। গড়ে তুলেছেন সবজির চারার নার্সারি।

২ নভেম্বর সরেজমিন গনকবাড়ী এলাকায় গিয়ে হারুনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সবজির চারার ব্যবসা শুরু করার আগে হারুন ফেরি করে মুরগি ও কলার ব্যবসা করতেন। এতে করে তার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। এর ব্যবসা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা করেন সবজির চারা উৎপাদন করবেন। সেই চিন্তা থেকে হারুন ২০১০ সালে সবজির চারা ব্যবসায়ী তার শ্বশুর ইসমাঈল হোসেনের কাছ থেকে চারার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নেন।

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু করেছেন চারা উৎপাদনের কাজ, নার্সারির নাম দিয়েছেন ‘শাহনাজ নার্সারি’। এর থেকে আয়ের মাধ্যমে সফল হয়ে তিনি তার তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, মেঝ ছেলে টেঙ্গামারা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিবে এবং ছোট মেয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ছে।

এছাড়াও তার নার্সারিতে বর্তমানে ১০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। প্রথম অবস্থায় ৪ শতক জায়গা লিজ নিয়ে তার ওপর সবজির চারা ব্যবসা শুরু করেন। এখন তার নিজের জমি ও লিজসহ ৩ বিঘা জায়গার ওপর সবজির চারা উৎপাদন করছেন।

তিনি জানান, অসময়ে বৃষ্টির কারণে চারার ব্যবসার ক্ষতি হলেও এ মৌসুমে তিনি বীজ ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে ৭-৮ লক্ষ টাকা লাভ করবেন। মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে শুরু হওয়া চারা উৎপাদন চলতি জ্যেষ্ঠ মাস অবধি চলবে। এতে একই জমিতে তিন থেকে চার বার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হবে বলে জানান হারুন।

আষাঢ় মাস থেকে বীজতলা প্রস্তত করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মরিচ, টমেটো, বেগুন, পেঁপের বীজ বপন করা হয়। ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে ২৫-৩০ দিন বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়।

হারুনের এখানে বিভিন্ন চারা উৎপাদনের জাতের মধ্যে আছে মরিচের জাত-১৭০১, পিলিয়াম, সনি। টমেটোর জাত মিন্টু, সুরক্ষা, ডেলটার, সালামত, বিউটি, মিন্টু সুপার, কামরাঙ্গা, ব্র্যাক ১৭৩৩। ফুলকপির জাত সিলভার, মার্বেল, সনোস্টার, ৭৭৭, ৭৭০, হোয়াইট বস, সুনো হোয়াইট, সুনো গ্যাস কেন্ডেড, ইনফেন। বাঁধাকপির কপির জাত  কেকে, ৭০, আটাম নরেশ, সাসার ডায়মন্ড। বেগুনের জাত গ্রিন বল, লাইট আলতাফন, রাবার বেগুন, লরি বেগুন, চোখরি লেদা, সবুজ বেগুন, সাদা গোল্ড রাবার, হাজারি। পেঁপের রয়েছে হাইব্রিড জাত।

বর্তমানে বাজারে প্রতিটি ভালো মানের চারা মানভেদে ১০০০ পিস মরিচের চারা চারশত থেকে হাজার টাকা, টমেটোর চারা পাঁচশত থেকে সাতশত টাকা, ফুলকপির চারা সাতশত থেকে নয়শত টাকা, বাঁধাকপির চারা ছয়শত থেকে আটশত টাকা, বেগুনের চারা তিনশত থেকে চারশত টাকা, পেঁপের চারা পাঁচশত থেকে ছয়শত টাকা বিক্রি করেন।

হারুনের চারা উৎপাদনের ব্যবসা থেকে উদ্বদ্ধু হয়ে এই গ্রামেরই জীবন দেবনাথ, আব্দুল ওহাব ও মাসুদ রানাসহ আরও অনেকে এই চারা উৎপাদনের ব্যবসা শুরু করেছেন।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার বিল্লাহ্ গ্রামের ৪০০টি বাঁধাকপির চারা নিতে আসা অখিল চন্দ্র, ক্ষেতলাল উপজেলার জালিয়াপাড়া গ্রামের ২ হাজার বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা নিতে আসা আব্দুস সামাদ ও বিজন দেবনাথ জানান, আমরা প্রতিবছরই হারুনের নার্সারি থেকে সবজির চারা সংগ্রহ করে থাকি এবং এই নার্সারি থেকে চারা নিলে ফলনও ভালো হয়।

জয়পুরহাট জেলা ছাড়াও সৈয়দপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার কৃষক ও সবজি চারার পাইকারি ব্যবসায়ীরা তার এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

হারুন অর রশিদ জানান, দিন-দিন আমার নিজ উদ্যোগে ব্যবসার প্রসার হচ্ছে, কিন্ত সরকার বা কৃষি অফিস থেকে কোনো সহযোগিতা দেওয়া হয় না। এই কারণে আমাকে ভালো বীজের জন্য জয়পুরহাটের বিভিন্ন বীজের দোকানসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্র নাথ জানান, হারুনসহ যে কোনো চারা ব্যবসায়ী আমাদের কৃষি অফিসে আসলে তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর