মিল্ক ভিটার সাবেক চেয়ারম্যানের দুর্নীতি অনুসন্ধানের নির্দেশ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মিল্ক ভিটার সাবেক চেয়ারম্যান হাসিব খান তরুণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে।
এক বছরের অধিক সময় পার হলেও অনুসন্ধানকাজ শেষ না হওয়ায় কমিশন থেকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে নোটিশ করা হয়েছে। নোটিশে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধানকাজ শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুদক সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মিল্ক ভিটা পরিচালনাকারী বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান হাসিব খান তরুণের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এ সব অভিযোগ আমলে নিয়ে ২০১৪ সালের জুন মাসে অনুসন্ধানে নামে দুদক। দীর্ঘ সময়েও অনুসন্ধান শেষ না হওয়ায় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিনকে কমিশন থেকে দ্রুত অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ, এক বিল দু’বার পরিশোধ করে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে মিল্ক ভিটার সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ
মিল্ক ভিটার সাবেক চেয়ারম্যান হাসিব খান তরুণের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। সমবায় অধিদফতরের তদন্তে এ আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। ভেজিটেবল ফ্যাট (পাম কার্নেল অয়েল), দুটি ট্রাক্টর ও ওডেড স্পুন কেনাকাটায় এ দুর্নীতি হয়েছে বলে সমবায় অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সমবায় অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক সরদার জয়নুল আবেদীন স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভেজিটেবল ফ্যাট কেনার জন্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে ওই কার্যাদেশ পায় মেসার্স মোজাম্মেল হোসেন নামক প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ জারি করা হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০ মেট্রিক টন ভেজিটেবল ফ্যাট সরবরাহের কথা। সে অনুযায়ী বিলও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু ওই বছরের ২২ জানুয়ারি ৫ মেট্রিক টন ভেজিটেবল ফ্যাট সরবরাহ করা হয়। এর পর আর কোনো মালামাল সরবরাহ করা হয়নি।
মিল্ক ভিটার ক্রয় বিভাগ থেকে মেসার্স মোজাম্মেল হোসেনকে জরুরী ভিত্তিতে ভেজিটেবল ফ্যাট সরবরাহ করতে ২০১১ সালের ২৯ মে থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত পর পর তিনটি চিঠি দেওয়া হয়। এতেও কোনো কাজ হয়নি। মিল্ক ভিটার তৎকালনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাকি মালামাল সরবরাহ করেনি। একই ভাবে দুটি ট্রাক্টর ও ৯০ লাখ পিস উডেড স্পুন কেনার ক্ষেত্রেও অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, ভেজিটেবল ফ্যাট কেনার ক্ষেত্রে ১৬ লাখ ৮০ হাজার এবং ট্রাক্টর ও উডেড স্পুন কেনার ক্ষেত্রে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
৯১ খাতে দুর্নীতি
২০১৪ সালের ২ মার্চ প্রকাশিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত চার দশকে প্রতিষ্ঠানটির ৯১টি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ভুয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে বেতন-ভাতা উত্তোলন, গাড়ি ক্রয়, কনডেন্সড মিল্ক প্লান্ট ও শীতলীকরণ যন্ত্রপাতি স্থাপন, ঘুষের বিনিময়ে চাকরি প্রদান, উৎপাদন মূল্য থেকে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি ও বিক্রির টাকা ফান্ডে জমা না করে মিল্ক ভিটার কোটি কোটি টাকা অনিয়ম ও লুটপাট করা হয়েছে। এ সব অনিয়ম ও দুর্নীতির মূল হোতা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান হাসিব খান তরুণকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে হাসিব খান তরুণের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক।
এক বিল দু’বার পরিশোধ
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে মিল্ক ভিটার চারটি গাড়ির জন্য চার জোড়া টায়ার-টিউব কিনতে রহিম আফরোজকে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৪০ টাকা পরিশোধ করা হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে ওই বিলের অর্থ আবারও পরিশোধ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, নথি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মিল্ক ভিটার সাবেক চেয়ারম্যান ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
পণ্য ক্রয়ে দুর্নীতি
মিল্ক ভিটার জন্য নাইট্রিক এ্যাসিড, ইথাইল এ্যালকোহল ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে কিনে অতিরিক্ত টাকা যোগাসাজশে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে মিল্ক ভিটার সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
নিয়োগ বাণিজ্য
অর্থের বিনিময়ে বিধিবহির্ভূতভাবে মিল্ক ভিটায় লোকবল নিয়োগ দিয়ে মিল্ক ভিটার সাবেক চেয়ারম্যান কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়ই তিনি মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা কমিটিকে উপেক্ষা করতেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর