বিএনপির খালেকের অনীহা মনির প্রতিদ্বন্দ্বী মনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের এখনো বেশ কিছুদিন বাকি। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে।

আগামী নির্বাচনে কে হতে পারেন খুলনার নগরপিতা—তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও চলছে আলোচনা-গুঞ্জন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক কেসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না, এমন ঘোষণা দেওয়ায় আলোচনা আরো গতি পেয়েছে। আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন বাগাতে মাঠে নেমেছেন নবীন নেতারা। অন্তত হাফ ডজন নতুন মুখ দলীয় মনোনয়ন পেতে নেতাদের মনোযোগ কাড়তে চাইছেন। বিএনপিতেও একাধিক ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন বা কে হবেন আগামী মেয়র, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর এ অস্পষ্টতাই আলোচনা-গুঞ্জনের পালে হাওয়া দিচ্ছে।

২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কেসিসির সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি তৎকালীন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেককে পরাজিত করে জয়ী

হয়েছিলেন। আবার তার আগের নির্বাচনে তখনকার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনিরুজ্জামানকে হারিয়ে দিয়েছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক।

ফলে এবারও শুরুতে আলোচনা ছিল এ দুই প্রার্থীকে নিয়েই। বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আবারও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তালুকদার আব্দুল খালেকের নামই বেশি উচ্চারিত হচ্ছিল। তবে দলীয় সূত্র মতে, গতবার কেসিসির মেয়র নির্বাচনে হেরে গিয়ে খালেক বেশ হতাশ। ঘনিষ্ঠ লোকজন, এমনকি দলীয় আলোচনায়ও তিনি বলেছেন, কেসিসিতে নির্বাচন করতে চান না। তিনি তাঁর সংসদীয় এলাকা বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মংলা) এলাকার মানুষ ও সেখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে থাকতে চান। তাঁর এমন ঘোষণায় আওয়ামী লীগের নবীন নেতারা দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।



এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নবীন নেতাদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন যুবলীগের খুলনা মহানগর শাখার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু; খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম; দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী এবং সোনাডাঙ্গা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বিশ্বাস ওরফে বুলু বিশ্বাস। এ ছাড়া প্রবীণ নেতা কেসিসির প্রথম মেয়র, খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি কাজী আমিনুল হকও দলীয় মনোনয়ন পেলে মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। শোনা যাচ্ছে, ব্যবসায়ী শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলও প্রার্থী হতে চান। তিনি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই।

তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এদের নাম শোনা গেলেও এখনো মূল আলোচনা ঘুরছে তালুকদার আব্দুল খালেককে ঘিরেই। সমর্থকরা মনে করে, বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান বা অন্য কাউকে টেক্কা দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনার মতো কারিশমা খালেকের আছে। খুলনা বরাবরই মুসলিম লীগ প্রভাবাধীন এলাকা। তাদের সমর্থক-অনুসারীদের সংখ্যাই বেশি। ভোটের ফলে কেসিসি বা সংসদ নির্বাচনে এ কারণে বরাবরই বিএনপি প্রার্থীরা ভালো করেন। তাই এবারে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় চাইলে তালুকদার আব্দুল খালেককে প্রার্থী করার বিকল্প নেই।

নবীন প্রার্থীদের মধ্যে আনিসুর রহমান পপলু ও সাইফুল ইসলামকে নিয়ে তুলনামূলক বেশি আলোচনা হচ্ছে। এই দুজনই সাবেক ছাত্রনেতা। সাইফুল ইসলাম হাওর বার্তাকে বলেন, ‘খালেক ভাই প্রার্থী না হলে আমি মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী। অনেক দিন ধরে নগরবাসীর দাবি আদায়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। নগরবাসীর সেবা করতে আমি এ পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে আশাবাদী। ’

আনিসুর রহমান পপলু বলেন, ‘খুলনা সিটিতে যোগ্য মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। তবে তিনি যদি প্রার্থী না হন সেক্ষেত্রে আমি দলের মনোনয়ন চাই। ’

বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলিও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান। তিনি একাধিকবার খুলনা পৌরসভার কমিশনার ছিলেন। খালেক প্রার্থী না হলে তিনিও এই পদের অন্যতম জোরালো প্রার্থী। মনোনয়নপ্রত্যাশী সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বুলু বিশ্বাসও পরিচিত মুখ, প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার।

ব্যবসায়ী নেতা কাজী আমিনুল হক ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র। ঘনিষ্ঠজনের কাছে তিনি বলেছেন, তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচন না করলে এবং দল যদি তাঁকে মনোনয়ন দেয় তবে তিনি নির্বাচন করবেন।

জানতে চাইলে তালুকদার আব্দুল খালেক হাওর বার্তাকে বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নই। আমার সংসদীয় এলাকায় এখন অবকাঠামো উন্নয়নে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, আমি তাই নিয়ে ব্যস্ত আছি। তার পরও দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তাই মেনে নেওয়া হবে। ’

অন্যদিকে বিএনপি সূত্রগুলো বলছে, এবারেও কেসিসি মেয়র নির্বাচনে দলের প্রার্থী হবেন বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি। দীর্ঘদিন ধরে কেসিসি প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত মনিরুজ্জামান বিএনপির খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক। একসময় ছিলেন ওয়ার্ডের কমিশনার। মইন-ফখরুদ্দীন আহমদের সরকারের সময় তিনি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হন। সর্বশেষ নির্বাচনে খালেককে পরাজিত করে বিএনপি খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি জয়লাভ করেন। নাশকতার দুটি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর মনিরুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। উচ্চ আদালতে রিট করে এক বছর ১৯ দিন পর ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব ফিরে পান।

এবারও মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে মনিরুজ্জামানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে বিএনপির খুলনা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাকে। গতবারও মনা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। এবার তাঁর মনোনয়ন বা প্রার্থিতা প্রসঙ্গে তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, ‘গতবার আমাকে দল বলেছিল, এবারে নয়, পরেরবার আমার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। ফলে আমি এবার চাই আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। দলীয় রাজনীতিতে জেলা শাখার সভাপতি হলেও আমার রাজনীতি এই শহরকে ঘিরে। আমি একাধিকবার খুলনা পৌরসভার কমিশনার ছিলাম। ’

মনিরুজ্জামান ও মনার পাশাপাশি কেউ কেউ খুলনা শহরের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নামও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছে। তারা বলার চেষ্টা করছে, বিএনপি রাজনীতির বিরোধ মীমাংসার শর্ত হিসেবে সাবেক এমপি আলী আসগর লবী আবার খুলনা-২ সংসদীয় আসনে প্রার্থী হলে মঞ্জু সিটি মেয়র পদে নির্বাচন করতে পারেন। অবশ্য, বিএনপি নেতা মঞ্জু এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, ‘মনিরুজ্জামান মনি ভাই আমাদের পছন্দের প্রার্থী। গত নির্বাচনে তিনি ৬২ হাজার ভোটের ব্যবধানে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছিলেন। নির্বাচন কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপি প্রস্তুতি শুরু করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ কেসিসির মেয়র পদে মুশফিকুর রহমানের নাম ঘোষণা করেছেন। মুশফিকুর রহমান সদ্য জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর তিনি প্রকাশ্যে এলেন এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। জাতীয় পার্টির নেতা শেখ আবুল কাশেম হত্যা মামলায় আসামি হিসেবে তাঁর নাম রয়েছে।

এ ছাড়া চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম কেসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে তাঁদের দলের নগর সভাপতি মুজ্জাম্মিল হকের নাম ঘোষণা করেছেন।

প্রসঙ্গত, আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর প্রথম সভা থেকে করপোরেশনের মেয়াদ শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে যেকোনো দিন ভোট গ্রহণ করা যায়। সেই হিসাবে ৩০ মার্চ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেসিসির নির্বাচন হবে। তবে শোনা যাচ্ছে, আগামী বছরের মে-জুন মাসে নির্বাচন হতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর