মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার বয়স আরও ৬ মাস কমছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বয়স ১৩ বছর থেকে কমিয়ে সাড়ে ১২ বছর করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।

১৯ অক্টোবর জামুকার ৫০তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সম্মানী ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে বৈঠকে জানানো হয়।

তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন জামুকার চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়াসাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে জামুকার সদস্যরা প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ৬ মাস কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার সদ্ধিান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া গেলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সদ্ধিান্ত গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বয়স ছিল ১৫ বছর। ২০১৫ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত জামুকার ৩০তম বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনম্নি বয়স ১৩ বছর করার সদ্ধিান্ত হয়। গত বছরের ৮ নভেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১৯ অক্টোবর জামুকার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে ৫০তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স প্রমার্জনের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আবেদন উপস্থাপন করা হয়।

বৈঠকে জানানো হয়, বয়স প্রমার্জন না করায় সারা দেশের প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতা বন্ধ রয়েছে। এমনকি তাদের সন্তানদের সরকারি চাকরিও আটকে রয়েছে। যে কারণে প্রায় প্রতিটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে একাধিক আবেদন উপস্থাপন করা হচ্ছে।

এ সময় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার বয়স ১৩ বছর থেকে কমিয়ে সাড়ে ১২ বছর করার প্রস্তাব করেন একজন সদস্য। বিষয়টি সমর্থন করে একাধিক সদস্য বলেন, যারা আমাদের পর্যন্ত আসতে পারেন তারাই শুধু আবেদন করছেন। কিন্তু যারা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন তারা এ পর্যন্ত আসতে পারেন না।

তাদের হয়রানির ব্যাপারে আমরা অবহিত নই। আর অধিকাংশ আবেদনেই দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত প্রমার্জন চাওয়া হয়েছে। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত একজন সদস্য ছাড়া বাকি সবাই বয়স ৬ মাস কমানোর ব্যাপারে একমত হন। আপত্তি জানানো ওই সদস্যকে (সাবেক সচিব) সবাই যুক্তি তুলে ধরে বোঝানোর ফলে তিনিও সদ্ধিান্ত মেনে নেন। পরে এ বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সদ্ধিান্ত হয়, এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ পাঠানোর আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মেৌখিক আলোচনা করবেন জামুকা প্রধান। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে অনুমোদনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সারসংক্ষেপ পাঠাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তারপরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
জামুকার আগের সদ্ধিান্ত ছিল, ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১৫ বছরের কম ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন এ বিষয়ে আপত্তি তোলেন।

তাদের যুক্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের নূ্যনতম বয়স যখন ১৫ বছর করা হয়েছিল, তখন ১৩ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম লালু, ১৪ বছর বয়সী তারামন বিবি ও আবু সালেকের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির কি হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এছাড়া কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্য লালু মিয়া ১৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেন এবং বীরপ্রতীক খেতাবও পান। অনেক মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের বয়স ১৫ বছরের বেশি থাকলেও এসএসসির সনদে বয়স কম দেখানো হয়েছে।

এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ৩১ মে অনুষ্ঠিত জামুকার ৩০তম বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনম্নি বয়স ১৩ বছর করার সদ্ধিান্ত হয়। এতে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধার সর্বনম্নি বয়স ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে ১৩ বছরের কম কোনোভাবে বিবেচনার সুযোগ নেই।

তবে ওই তারিখে ১৩ বছরের ২/৩ মাস কম বয়সী কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভারতীয় তালিকা/লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকলে আবেদনভিত্তিক বাস্তবতা যাচাই করে বয়স কমানোর বিষয়টি জামুকা সভায় উপস্থাপনপূর্বক বিবেচনা করা যেতে পারে।’

একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামুকার ৩২তম সভায় ১১টি আবেদন উপস্থাপন করা হলে তাদের বয়স প্রমার্জনের ক্ষমতা জামুকার চেয়ারম্যান ও মুক্তিযদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রীকে দেয়া হয়।

পাশাপাশি লাল মুক্তিবার্তায় উলি্লখিত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স প্রমার্জনের জন্য সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের সাব-কমিটি করা হয়। কমিটির প্রথম বৈঠকে বয়স প্রমার্জনের মোট ৩২টি আবেদন উপস্থাপন করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ প্রায় দুই বছর পর্যন্ত ২৪ জনের বয়স কমানোর সুপারিশ করে কমিটি।

এ ২৪ জনের বিষয়টি জামুকার ৩৩তম বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে ১৩ জনের বয়স কমানো হয়। এরপর থেকেই প্রায় প্রতিটি বৈঠকে উলে্লখযোগ্য হারে বয়স প্রমার্জনের আবেদন আসতে থাকে। এ অবস্থার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির বয়স আরও ৬ মাস কমানোর উদ্যোগ নিল জামুকা।

প্রসঙ্গত, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য এখন বীরশ্রেষ্ঠ ৩০ হাজার, বীরউত্তম ২৫ হাজার, বীরবিক্রম ২০ হাজার ও বীরপ্রতীক মুক্তিযোদ্ধারা ১৫ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পান। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা পান ১০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এক বছর বাড়তি চাকরির সুবিধা পেয়ে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যরা চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটার সুযোগ পান। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পোষ্যরা কোটার সুবিধা পান। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারি আবাসন প্রকল্পে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা আছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর