রাজনৈতিক দলগুলো সিটি করপোশন নির্বাচন নিয়ে দৌঁড়ঝাপ শুরু

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় নির্বাচনের বছরখানেক আগেই সিটি করপোশন নির্বাচন নিয়ে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাইকমান্ডের নজর এখন আগামী ছয় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য অন্তত ছয়টি সিটি নির্বাচনের দিকে। এই লক্ষে নিজ দলের মেয়র প্রার্থী নির্ধারণ করতে বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা সংশ্লিষ্ট সিটিতে সাংগঠনিক কাজের কথা বলেও সফর করছেন। সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে মাঠের প্রকৃত চিত্র জানার চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর সিলেটে কর্মীসভা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি সভায় বলেছেন, সিলেট সিটি আওয়ামী লীগের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাই মেয়র পদে দলের মনোয়ন পাবেন। এ সময় কোন্দল মিটিয়ে সবাইকে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান। তবে সিলেট আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদের কর্মীসভা শেষে নগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন। পত্র-পত্রিকার কাটিংগুলোও সংগ্রহ করেন। নগরীতে কোন নেতার ইমেজ কেমন তা যাচাই করতে তিনি নাগরিক সমাজের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথেও কথা বলেন। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলোর সার্বিক অবস্থারও খোঁজ নেন। এ সময় তিনি এক মাসের ব্যবধানে ছাত্রলীগের কোন্দলে ছাত্রলীগের দুই কর্মী হত্যার ঘটনার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সাথে এ রকম ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্যে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নগর নেতাকে সতর্ক করে দেন ওবায়দুল কাদের।

অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাস খানেক আগে সদস্য সংগ্রহের নামে ঘুরে গেছেন সিটি করপোরেশনগুলো। সিলেটে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ওই সময় নগরীর সব পক্ষের নেতাদের সাথে কথা বলেন। মাস খানেক আগে রংপুরে নিজ দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অংশ হিসেবে কর্মীসভা করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। অবশ্য কর্মীসভার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পর্যবেক্ষক মহলের মত, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ নিয়ে আসছে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও গাজীপুর এই ছয় সিটির নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে এর একটা প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে থাকবে। তাই বড় দলগুলো ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এটা একটা ভালো লক্ষণ এবং ইতিবাচক। সব পক্ষ মাঠে থাকলে দ্রুতই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ শেষে আগামী বছরের প্রথম ভাগে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। এর ঠিক আগেই হবে রংপুর সিটি নির্বাচন। রংপুর : ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনে প্রথম নির্বাচন হয়। মেয়র পদে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু জয়লাভ করেন। নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ কারণে ইতিমধ্যে শুভেচ্ছার নগরীতে পরিণত হয়েছে রংপুর। জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বর্তমান মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুসহ দলটির ১০ নেতা দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন।

সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর জাপার সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন জাতীয় পাটি। দলীয় চেয়ারম্যানের ঘোষণা আসার পরদিনই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন জাপার আরেক নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র এ কে এম আব্দুর রউফ মানিক। তিনি নাগরিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সভা-সমাবেশ করছেন। বিএনপি থেকে মহানগর বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান সামু, শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি কাওসার জামান বাবলার নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। রাজশাহী : ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে হারিয়ে মেয়র হন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। বুলবুল পলাতক ও কারাবন্দি থেকে কাটিয়েছেন প্রায় দুই বছর। সামনে আওয়ামী লীগের প্রাার্থী করা হতে পারে খায়রুজ্জামান লিটনকেই।

তবে মনোনয়ন পেতে তৎপর আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও সদস্য আহসানুল হক পিন্টু। বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র বুলবুল প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খুলনা : ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টিতে সদ্য যোগদানকারী মুশফিকুর রহমান মুশফেককে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। বর্তমান মেয়র বিএনপি মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক। সিলেট: মহানগর আওয়াম লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন মহানগর বিএনপির নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব পালনের অর্ধেকের বেশি সময় ছিলেন কারাগারে। আগামী বছরের প্রথম দিকে নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে সিলেটে কামরান, আরিফসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ডজনখানেক নেতা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

বরিশাল: আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র শওকত হিসেন হিরণকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির আহসান হাবিব কামাল। আগামী সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে তৎপর আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে চান মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার ও বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল। মজিবুর অনুসারিদের অনেকে অবশ্য বলছেন, সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেলে মজিবর মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন না। গাজীপুর: নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি মনোনীত প্রাথী এম এ মান্নান। তাঁকে তৃতীয়বারের মতো বরখাস্ত করা হয়েছে গত ৬ জুলাই। আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র প্রার্থী হতে সবচেয়ে বেশি সরব মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে তিন মাস ধরে তিনি সভা করে চলেছেন। আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেলও তৎপর। অন্যদিকে এম. এ মান্নান আবারও দলের মনোয়ান চান বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। এবচার জনবিচ্ছিন্ন কাউকে মনোয়ন দেয়া হবে না। সত্যিকারেই জনপ্রিয় নেতারাই মনোয়ন পাবেন। সঠিক সময়ে দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে তিনি জানান। আর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বড় বড় মহানগরীর মেয়র পদে আমাদের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। নির্বাচনের জন্য এসব মহানগরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে এসব মহানগরীর সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা যোগাযোগ শুরু করেছেন। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি শুরু করেছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর