দলীয় পরিচয়ে সন্ত্রাস, কঠোর অবস্থানে সরকার

জাতীয় শোক দিবসের জন্য প্রস্তুতি চলছিল যখন তার আগের রাতে রাজধানীর বাড্ডায় গুলিতে মারা যায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দুই কর্মীসহ তিন জন। দলের কর্মীরাই এই খুনে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ, তারা এর দায়ও স্বীকার করেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীটির কাছে।

এই খুনাখুনির রেশ কাটতে না কাটতেই কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে গোলাগুলিতে মারা যায় এক দলীয় কর্মী। বেআইন অস্ত্রের পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলে নেয়া লাইসেন্স করা অস্ত্রও ব্যবহার হয়েছে এই সংঘর্ষে।

২৩ জুলাই মাগুরায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষে মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ হয় একটি শিশু। সারা দেশের মানুষকে উৎকণ্ঠায় রেখে জীবন-মরনের টানাটানিতে চিকিৎসকদের অক্লান্ত চেষ্টায় বেঁচে গেছে শিশুটি। সব শেষ সোমবার রাতে রাজধানীর হাজারীবাগে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। একের পর এক নানা সহিংসতায় সরকার যখন চাপের মুখে তখন মন্ত্রিসভার বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই, ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় যেন কোনো প্রভাবক না হয়।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, নানা সময় সন্ত্রাস বা অন্য কোন অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের কাউকে গ্রেপ্তার করলেই দলের পক্ষ থেকে সুপারিশ বা অনুরোধ এসেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এমন অবস্থানের পর এসব সুপারিশ বা অনুরোধ অগ্রাহ্য করা সহজ হবে। তা ছাড়া এখন আর অনৈতিক কোন সুপারিশ করার ক্ষেত্রে আগেভাগে ভাববেন নেতারা।

সম্প্রতি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনেও বিভিন্ন জেলা প্রশাসক বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।

সরকার প্রধানের নির্দেশনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্ত্রাস এবং খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন ‘বন্দুকযুদ্ধে’।

মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে হাজারীবাগে রাজা নামে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া। রাতে আটকের পর ভোরে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, আরজু মিয়া হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থান করছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালায়। এ সময় আরজু র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পাল্টা গুলি ছুঁড়লে গুলিবিদ্ধ হন আরজু।

একই রাতে র‌্যাবের গুলিকে মারা যান মাগুরায় মাতৃগর্ভে শিশু গুলিবিদ্ধ মামলার আসামি মেহেদী হাসান আজিবর।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের পরিচয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের অপতৎপরতায় ক্ষুব্ধ সরকার এবং আওয়ামী লীগ। এই দুটি ঘটনায় সরকার দলীয় কর্মীদের এক কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

‘সামাজিক অস্থিরতার কারণে সমাজে অপকর্ম ঘটছে। দল এবং সরকার এ সকল বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছে। দৃষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে সকল সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সমাজের অবক্ষয় হয়েছে। অপকর্মের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সব সময়ে কঠোর অবস্থানে। নেতাকর্মীরা অন্যায়-অপকর্ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর