জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিষয়ে আনা আপিল মামলা শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চে এ আপিল মামলাটি কাল মঙ্গলবার ২৫ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের কার্যতালিকার ৭ নম্বর আইটেম হিসেবে রয়েছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর আপিল দায়ের করা হয়েছে। ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট পেশ করে তাতে ১৬৮টি কারণ উল্লেখ করে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এ আপিলটি দাখিল করেন।
নিজামীর পক্ষে আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ১২১ পৃষ্ঠায় মূল আপিল আবেদনের সঙ্গে ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্র দাখিল করা হয়েছে। মূল আপিলে ১৬৮ টি গ্রাউণ্ড পেশ করে দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাসস’কে বলেন, ট্রাইব্যুনাল নিজামীর সর্বোচ্চ সাজার যে রায় দিয়েছে, তাতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। আসামির আপিলের বিপরিতে শুনানিতে অংশ নেবে রাস্ট্রপক্ষ। ট্রাইব্যুনালে দেয়া দণ্ডের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করে তা বহাল রাখতে আর্জি পেশ করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালনাল-১এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল জনাকীর্ণ ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
রায়ে বলা হয়, নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন আনীত ১৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে নিজামীকে ফাঁসির (মৃত্যুদণ্ড) আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ১, ৩,৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫, ৯, ১০ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি (খালাস) দেয়া হয়।
রায়ে বলা হয়, জামায়াতের আমীর নিজামী চার দশক আগে ছিলেন জামায়াতেরই ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীরও নেতা। তার নেতৃত্বে ও প্ররোচণায় মানবাধীকারের চরম লংঘন, স্বাধীনতাকামীদের দমন-পীড়ন, গনহত্যা, দেশের মেধাবী নাগরিক বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
নিজামীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি সুনির্দিস্ট অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২৮ মে তার বিচার শুরু“ হয়।
নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ৪ জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়। সাক্ষিদের জেরা করে প্রসিকিউশন। নিজামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সাক্ষী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদসহ মোট ২৬ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামীপক্ষ এসব সাক্ষিদের জেরা করেছে।
একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের আদেশে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায গ্রেফতার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। – বাসস।