মাতা-পিতাকে ভরণপোষণ না করার সন্তানকে শাস্তি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অনেক পিতা-মাতা নিজের সর্বস্ব উজাড় করে সন্তানকে স্বনির্ভর করলেও শেষ বয়সে দেখা যায় সেসকল পিতা-মাতার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানের হাতে পিতা-মাতাকে নিগৃত হওয়ার ঘটনা অহরহ-ই ঘটছে। এছাড়া পিতা-মাতার ভরণপোষণ করে না এমন সন্তান রয়েছে সমাজজুড়েই। ফলে, শেষ বয়সে বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়- যা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ সব বন্ধে সরকার অবাধ্য সন্তান এবং যারা সামর্থ্য থাকার পরও পিতা-মাতার ভরণপোষণ করেন না তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে আইন প্রণয়ন করেছে। যাতে করে পিতা-মাতা ভরণপোষণের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে পারে।

মা-বাবার ভরণপোষণ আইন: মা-বাবার ভরণপোষণের বিধানটি একটি জনকল্যাণকর আইন। বাংলায় প্রণীত এ আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘যেহেতু সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়, সেহেতু আইনটি প্রণয়ন করা হলো। অর্থাৎ কোনো সন্তান যদি কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া পিতা-মাতার ভরণপোষণ না করে, তাহলে তাঁরা ভরণপোষণের জন্য এ আইনের অধীনে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে তাঁদের অধিকার আদায় করতে পারবেন।’

যাদের ওপর ভরণপোষণের দায়িত্ব: আইনে ভরণপোষণ প্রদানের দায়িত্ব বলতে শুধু পুত্রকেই বোঝানো হয়নি, বরং কন্যাকেও বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব শুধু ছেলের একার নয়, বরং মেয়েকেও নিতে হবে। এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা আনা হয়েছে।

আর ভরণপোষণ শুধু কোনো বিশেষ সন্তান নেবে তা নয়, বরং সবাইকে নিতে হবে। তবে একাধিক সন্তান থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মা-বাবার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। কোনো সন্তান মা-বাবাকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোথাও একত্রে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। প্রত্যেক সন্তানকেই তাদের মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে এবং চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। মা-বাবা একত্রে বা আলাদা থাকলে প্রত্যেক সন্তানকে সাধ্যমতো তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।

ভরণপোষণের পরিমাণ: মা-বাবা যদি সন্তানের সঙ্গে বসবাস না করেন, তবে তাদের প্রত্যেক সন্তান নিজ নিজ উপার্জন থেকে যুক্তিসংগত পরিমাণ অর্থ দেবে।

শাস্তি: মা-বাবার ভরণপোষণ কেউ যদি না দেয় বা কেউ যদি এই বিধানাবলি লঙ্ঘন করে, তবে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে। অনাদায়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড দিতে পারে আদালত।এ ছাড়া কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী কিংবা ছেলেমেয়ে বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয় যদি মা-বাবা বা দাদা-দাদি বা নানা-নানির ভরণপোষণ দিতে বাধা দেয় বা অসহযোগিতা করে, তবে তার সাজাও উল্লিখিত দণ্ডের মতোই হবে। এ অপরাধ আমলযোগ্য। এই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলায় জামিনও পাওয়া যেতে পারে। মামলায় আপস-মীমাংসারও সুযোগ রয়েছে।

আশা করবো, আইন দিয়ে নয়, নৈতিকতা থেকে আমাদের দেশ তথা প্রতিটি রাষ্ট্রের সন্তানেরা তাদের পিতা-মাতার ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করবে। মনে রাখতে হবে, একদিন আমিও হবো মা-বাবার মত। আমরা যদি আমাদের পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ববান হই, তাহলে আমাদের সন্তানেরাও আমাদের প্রতি দায়িত্ববান হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর