আওয়ামী লীগে স্নায়ুযুদ্ধ বিএনপি’র শেখ সুজাত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১ আসন। আগামী নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। কর্ম-কৌশলে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে ওই এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। নির্বাচন এলে সেখান থেকে দলে দলে লোক এসে তাদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেন। আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ২০১১ সালের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি প্রার্থী আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া চমক দেখান। ১৯৯১ সাল থেকে নবীগঞ্জে বিএনপিকে সংগঠিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছিলেন তিনি। এর সুফল পান সেই উপনির্বাচনে। আগামী নির্বাচনেও শেখ সুজাত সম্ভাব্য প্রার্থী। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিএনপি নেতা শাহ মুজাম্মেল নান্টু লবিং করছেন। অন্যদিকে নির্বাচনী এলাকার বাহুবল উপজেলায় একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে চমক দেখাচ্ছেন তিনি। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন ওই এলাকার লোকজন। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনা প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর কন্যা হিসেবে এলাকায় তার পারিবারিক ইমেজ রয়েছে। নারীজাগরণে তার অবদান মহিলা ভোটারদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) নির্বাচনী এলাকায় একাধিকবার বিজয়ী হন তৃণমূল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ দেওয়ান ফরিদ গাজী। নবম জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী ফরিদ গাজী ২০১১ সালে ইন্তেকাল করেন। ওই বছরই অনুষ্ঠিতব্য উপ-নির্বাচনে চমক দেখিয়ে বিজয়ী হন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ শেখ সুজাত মিয়া। সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। দেশব্যাপী আলোচিত ওই উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েক ডজন জাতীয় নেতা প্রচারণায় অংশ নেন। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সঙ্গে নিয়ে একাধিকবার লাঙল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। এতকিছুর পরও জাপা মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু নির্বাচনে জামানত হারান। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুশফিক হোসেন চৌধুরী ব্যাপক লবিং করছেন। দলীয় ত্যাগ ও তৃণমূল অবস্থান বিবেচনায় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মনোনীত করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজী তন্বয় শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী পিতার গড়া মাঠে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গত নির্বাচনে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও জোটের স্বার্থে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। দলের হাইকমান্ড সেই ত্যাগ বিবেচনায় তাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি আশাবাদী। একইভাবে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকার অভিলাষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে যান। সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রজন্মের ভোটারকে জাগিয়ে তোলায় তার বিশেষ গুণ রয়েছে। তৃণমূলের নেতা হিসেবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মুকিত চৌধুরীও নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। এছাড়াও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরেছেন দশম জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী জাপা দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। জোটগত নির্বাচন হলে তিনিই মনোনয়ন পাবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় নানামুখী গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলে পরীক্ষিত আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া একক প্রার্থী হিসেবেই আলোচনায় রয়েছেন। তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগের এ ঘাঁটিতে বিএনপি শক্তিশালী হয়। গত পৌর নির্বাচনে শেখ সুজাতের ইমেজ এবং সরব প্রচারণায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ ছাবির আহমদ চৌধুরী বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ধরাশায়ী হন তিনবারের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিএনপি নেতা শাহ মোজাম্মেল নান্টুর নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক বিচরণ নেই। এলাকাভিত্তিক দলীয় কর্মকাণ্ডে কখনও তাকে দেখা যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সরব। তার লবিংকে কাজে লাগিয়ে বিগত ইউপি নির্বাচনে ৫ প্রার্থী দলের মনোনয়ন পান। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পাঁচজনই জামানত হারান। এ নিয়ে বিএনপির তৃণমূলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত অনেকেই স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। জাতীয় পার্টি থেকে আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লবিং করছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাপা নেতা আব্দুল হামিদ চৌধুরী। বিগত নির্বাচনে মাঠে সরব ছিলেন তিনি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মোকাবিলায় পৃথক কার্যালয়ে স্থাপন করে গণসংযোগে অংশও নেন। সবচেয়ে আলোচনার বিষয় বাহুবলবাসী এবার তাদের নিজ উপজেলার একজন প্রার্থী চান। সে হিসেবে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন তারা। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী কে হন তা দেখার বিষয়। আর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর