জীবনের মুহূর্তগুলো কাজে লাগান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবী পরীক্ষা ও ধ্বংসের স্থান। পরকাল প্রতিদান ও অমরত্বের স্থান। দুনিয়া ধোঁকার সামগ্রী। দুনিয়া শুধু কিছু ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর ও যুগের সমষ্টিমাত্র। বছর ফুরিয়ে যায়, যুগ আবর্তিত হয়। দিন চলে যায়, মাস অতিবাহিত হয়। ‘আল্লাহ দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান। নিশ্চয়ই তাতে দৃষ্টিমানদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।’ (সূরা নুর : ৪৪)।
প্রজন্ম ধ্বংস হয়, আশার অবসান ঘটে, সময়সীমা শেষ হয়। ‘ভ‚পৃষ্ঠের সবকিছু ধ্বংসশীল। আপনার মহিমান্বিত ও মহানুভব প্রতিপালকের সত্তা অমর থাকবে।’ (সূরা রহমান : ২৭-২৮)। মানুষের বয়সের পার্থক্য থাকলেও মৃত্যুর সময় দীর্ঘ-ক্ষুদ্র জীবন সব সমান হয়ে যায়। তাই জ্ঞানীর কাছে কবর ও প্রাসাদ দুইটিই সমান।
একটি বছর শেষ হয়ে গেল। পৃথিবীর বয়স হ্রাস পেল। মৃত্যুর সময়সীমা ঘনিয়ে এলো। বছরটির কার্যকলাপ শেষ হয়ে তার আমলনামা গুটানো হয়েছে। ওই লোকের জন্য সৌভাগ্য, যে তার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে, সময়কে লাভজনক বানিয়েছে এবং নিজের কর্ম সংশোধন করেছে। জেনে রাখুন, আমরা একটি নতুন বছরে প্রবেশ করলাম, যা আমাদের কবরের কাছে নিয়ে যাবে, আমাদের পুনরুত্থান দিবসের দিকে ধাবিত করবে। তাই অনুশোচনা করার আগেই এবং চোখের কোটর শুকিয়ে যাওয়া ও অশ্রæতে প্লাবিত হওয়ার আগেই হৃদয়ের অধিকারী শ্রবণশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির জীবনের সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত। যখন ব্যক্তি আফসোস করে বলবে, ‘হায়, হায়, আমি তো আল্লাহর সামনে অবহেলা করেছি, নিশ্চয়ই আমি বিদ্রƒপকারীদের দলভুক্ত ছিলাম। অথবা বলবে, আল্লাহ আমাকে পথ দেখালে আমি পরহেজগারদের দলে হতাম। অথবা আজাব দেখে বলবে, আমাকে আবার ফেরত পাঠালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সূরা জুমার : ৫৬-৫৮)।
সময় গড়াচ্ছে, জীবন চলছে। জীবনের মুহূর্তগুলো ক্ষুদ্রসীমায় আবদ্ধ। হক, দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভিড় অনেক বেশি। মানুষ তার জীবন কোথায় ব্যয় করেছে, যৌবন কীসে শেষ করেছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। তাকে নষ্ট জীবন ও অবহেলিত সময়ের হিসাব দিতে হবে। জীবন যতই দীর্ঘ হোক তার পরিসর সীমিতই। ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে? তারা বলবে, একদিন অথবা দিনের কিছু সময়।’ (সূরা মোমিনুন : ১১২-১১৩)।
আল্লাহ তোমাদের অহেতুক সৃষ্টি করেননি। এমনি এমনি তোমাদের তিনি ছেড়ে দেবেন না।
তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে উত্তম আমল করে, তা পরীক্ষা করার জন্য। সাবধান! সবচেয়ে বড় বিপদ, জঘন্যতম সংকট ও নিকৃষ্টতর ভয়ের বিষয় হলো, সময় নষ্ট হওয়া, মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ও কোনো আমল ছাড়াই জীবনের মুহূর্তগুলো শেষ হওয়ার কারণে অনুশোচনা করা। এ অনুশোচনা ও অনুতাপ শুরু হয় মৃত্যুকালীন থেকেই। ‘তাদের কারও কাছে মৃত্যু চলে এলে সে বলে, হে রব, আমাকে ফিরিয়ে দিন, যেন আমি ভালো কাজ করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনও না, এটা তো মুখের একটি কথা মাত্র।’ (সূরা মোমিনুন : ৯৯-১০০)। ‘মৃত্যুর নির্ধারিত সময় চলে এলে আল্লাহ কিছুতেই কোনো ব্যক্তিকে সময় দেবেন না।’ (সূরা মুনাফিকুন : ১১)।
তাই জীবনের মুহূর্তগুলো হলো আমল করার সুযোগ। তা একটি নেয়ামত, যার শোকর আদায় করতে হবে। ‘আর যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করো তবে তা গুনে শেষ করতে পারবে না।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৪)। ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যার জীবন দীর্ঘ হয়েছে, আমল সুন্দর হয়েছে। আর তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সে, যার জীবন দীর্ঘ হয়েছে আর তার কর্ম মন্দ হয়েছে।’
নেয়ামতের শোকর আদায়ের একটি পন্থা হলো আল্লাহর ইবাদতের মাঝে তাঁর নবীর বর্ণিত শরিয়ত অনুসরণ করে জীবন ও সময়ের নেয়ামতকে কাজে লাগানো। এর বিপরীতে নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা ও বিপদাপদ, দুর্ভাগ্য, আফসোস ও অনুশোচনার অনত্যম কারণ হলো আল্লাহর অবধ্যতায় জীবন ও সময়ের নেয়ামতকে ব্যয় করা, যা আল্লাহর শরিয়তে নেই। ‘যে অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে, সে তার ফল দেখতে পাবে। আর যে অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে, সে তার কুফল দেখতে পাবে।’ (সূরা জিলজাল : ৭-৮)।
হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমÐলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি। তার মধ্যে চারটি পবিত্র মাস। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করো না।’ (সূরা তওবা : ৩৬)।
আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান-জমিন সৃষ্টি করেন, সেদিন থেকেই সময় নিজ অবস্থায় আবর্তিত হচ্ছে। বছরে ১২টি মাস। তার মধ্যে চারটি পবিত্র মাস আছে। তিনটি হলো ধারাবাহিকÑ জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। আর জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী রজব মাসটি।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) এর সুন্নত হলো মহররমের ১০ তারিখে আশুরার রোজা রাখা। এর দ্বারা পাপ মোচন হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) যখন মদিনায় এলেন, দেখলেন ইহুদিরা আশুরার রোজা রাখে। তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলল, এ দিনে আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের বিপক্ষে বিজয়ী করেন। আমরা তাই এদিনের সম্মানে রোজা রাখি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমরা তো মুসা (আ.) এর প্রতি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। তারপর তিনি এ দিন রোজা রাখার নির্দেশ দেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
জীবনের শেষ দিকে যখন নবী করিম (সা.) এর কাছে সংবাদ এলো ইহুদিরা আশুরার দিনটিকে তাদের ঈদ হিসেবে গ্রহণ করছে, তখন তিনি ইচ্ছে করলেন আগামী বছর থেকে নবম ও দশম দুই দিন রোজা রাখবেন। কিন্তু এর আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তাই উত্তম হলো আশুরার আগের দিনও রোজা রাখা, যেন ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়।
২ মহররম ১৪৩৯ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার
সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর