আন্তর্জাতিক গণ আদালতের রায় গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত মিয়ানমার সরকার

রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আন্তর্জাতিক গণ আদালত। আজ শুক্রবার আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্তে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত সাত সদস্যের বিচারক প্যানেল প্রতীকী এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পূর্বে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ২০০ মানুষের জবানবন্দি, বিভিন্ন তথ্যচিত্র ও বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনা করা হয়। ১৮ই সেপ্টেম্বর মালয়শিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) নামে এই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। মালয় ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদে ট্রাইব্যুনালের সভাপতি আর্জেন্টিনার সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা দানিয়েল ফিয়েরেস্তেইন এই রায় পড়ে শোনান। এর আগে পাঁচ দিন ধরে সেখানে শুনানি চলে। এসময় দানিয়েল ফিয়েরেস্তেইন বলেন, মিয়ানমার সরকার গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে করা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। মিয়ানমারে থাকা কাচিন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অপরাধে সে দেশের সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এদিকে প্রতীকী বিচারের রায় মানার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত আইনবিদ, অধিকারকর্মী ও গবেষকরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান দমনাভিযান বন্ধের দাবি নিয়ে মিলিত হয়েছিলেন। রায় ঘোষণার পাশাপাশি মিয়ানমারে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে ১৭ দফা সুপারিশ ঘোষণা করেছে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মেকুইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক প্রধান বিচারক গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার কয়েকটি সুপারিশ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার অনুসন্ধানের জন্য জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান দলকে অবশ্যই সে দেশে ভিসা এবং সহজে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করতে হবে। নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কার করতে হবে। তাদের অধিকার ও নাগরিকত্ব দিতে হবে। বিচারক গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশ যেমন বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়াকে অবশ্যই আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্য, বিচার এবং সুপারিশ অবশ্যই আন্তর্জাতিক মহল এবং মানবাধিকার দলকে জানানো হবে যাতে সেগুলো মেনে চলার জন্য তারা মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে পারে। উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে ইতালিতে ৬৬ জন আন্তর্জাতিক সদস্য নিয়ে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানবাধিকার এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত অনেক মামলা নিয়ে ৪৩টি অধিবেশন হয়েছে এই ট্রাইব্যুনালে।

সূত্র: দ্য স্টার অনলাইন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর