ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি

আমদানি বিকল্প ফসল চাষে রেয়াতি সুদহারে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। বিদায়ী (২০১৪-১৫) অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মসলা চাষে রেয়াতি সুদহারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৮২ দশমিক ২৪ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। এ সময়ে ব্যাংকগুলো মোট ৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোকে এ খাতে ঋণ বিতরণের জন্য বার বার তাগাদা দেয়ার ফলে প্রতিমাসেই ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী স্বল্প সুদের এই ঋণের বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে ব্যাপক প্রচার চালানোর কথা থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে কাজটি করছে না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ বিতরণে অনীহা প্রকাশ করছে বলেও কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক মানবকণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবেই কৃষকরা এ খাতে খুব বেশি ঋণ নিতে চায়নি। বিগত অর্থবছরগুলোতে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় কৃষকরা এসব পণ্যে খুব কম উৎপাদন করেছেন। ফলে তারা খুব কমই ব্যাংকমুখী হয়েছেন। তাছাড়া, হরতাল আর অবরোধের কারণে গত অর্থবছর ব্যাংকগুলো সময়মতো এ খাতে ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ বিতরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকির ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর যেসব ব্যাংক একেবারেই ঋণ বিতরণ করেনি তাদের নিয়ে আলাদা বৈঠক করা হয়েছে। আগামীতে তারাও এ খাতে ঋণ বিতরণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে আগামীতে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলো ৯৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছর মসলা চাষে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে মাত্র ৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা কম। আগের অর্থবছরে এ খাতে ৯০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বিতরণ হয়েছিল ৮০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছর শেষে রাষ্ট্রীয় ও বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলো একত্রে ঋণ বিতরণ করেছে ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো থেকে মসলা চাষে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ বিতরণ করেছে ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যা তাদের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৮০ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর নতুন অনুমোদন পাওয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে মাত্র ৫৯ লাখ টাকা। যা তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে মসলা চাষে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এসব পণ্যে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এছাড়া ভুট্টা চাষে ৮ কোটি ৯১ লাখ, তেল বীজে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ও ডাল চাষে ২ কোটি ১২ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমিয়ে দেশেই এর উৎপাদন বাড়াতে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে সরকারের সুদ ভর্তুকির আওতায় কম সুদের এ ঋণ চালু করা হয়। শুরুতে রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের ঋণ বিতরণ ও প্রচার চালানোর নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী সময় বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর জন্যও এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ, জিরা, সব ধরনের ডাল, তেল বীজ এবং ভুট্টা চাষে এ ধরনের ঋণ দেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থায় যেন কোনো প্রকার ক্ষতি না হয় এ জন্য সরকার ৬ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর