সৌন্দর্য্য আর শুভ্রতার উপস্থাপন পদ্ম ফুল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  ফুলের রানী পদ্ম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘কেউ কথা রাখে নি’ কবিতায় বলেছিলেন ১০৮টি নীল পদ্মের কথা! নীল নয়, তবে গোলাপী পদ্মে ঢাকা বিলের দেখা কিন্তু পাবেন! প্রিয়াকে দেওয়া কথামতো ১০৮টি কেন, পারবেন অগুণতি পদ্ম তুলে দিতে তার হাতে।
মানুষ। শরতের ফুল হলেও বর্ষাতেই তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয় ‘পদ্ম’। প্রকৃতিতে নিজের রূপ বৈচিত্র অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে জলাভূমি ও বিলেঝিলে ফুটে থাকা এ জলজ ফুলের রাণী।


প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া জলজ ফুলের রানী এই পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বিলের চিত্র। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা!

ভালোবাসার জন্য পৃথিবী তন্ন তন্ন করে নীল পদ্ম খুঁজে আনতে পারেন কবি। ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে দেবী সন্তুষ্টিতে সেই পদ্ম। সেই পদ্ম আপনি আপনার নিজের বাগানে ফোটাতে পারেন। জলাশয়ে পদ্মচাষের কথা তেমনি বাড়িতে কীভাবে পদ্ম লাগাতে পারেন।

বিস্তৃর্ণ জলাভূমি। চারদিকে লতা-গুল্ম কোথাও কচুরিপানা। এরই মাঝে ভেসে রয়েছে অগণিত পদ্ম। স্নিগ্ধতার রং আর আকাশে মেঘের ভেলা এই দুইয়ে মিলে যেন একাকার প্রকৃতি। গ্রাম-বাংলার যেখানেই পুকুর, খাল-বিল রয়েছে সেখানেই দেখা মিলবে অপরূপ এই ফুলটির। তেমনি বিভিন্ন বিলে ফুটে থাকা এই পদ্ম তৃষ্ণা মেটায় প্রকৃতিপ্রেমীদের।


মূলত পদ্ম (Lotus) Nymphaeaceae গোত্রের ভাসমান জলজ উদ্ভিদ Nelumbo nucifera। সারা বছর পানি থাকে এমন জায়গায় পদ্ম ভাল জন্মে। তবে খাল-বিল, হাওর, বাঁওড় ইত্যাদিতেও এ উদ্ভিদ জন্মে। পাতা বড় এবং গোলাকৃতি, কোন কোন পাতা পানিতে লেপটে থাকে, কোনটা উঁচানো। বর্ষাকালে ফুল ফোটে। ফুল বৃহৎ এবং বহু পাপড়িযুক্ত। সাধারণত বোঁটার উপর খাড়া, ৮-১৫ সেমি চওড়া। ফুলের রং লাল, গোলাপি ও সাদা, সুগন্ধিযুক্ত। হিন্দুদের দুর্গাপূজার প্রিয় ফুল। ফুল ও ফলের ভেষজগুণ আছে। পদ্মের মূল, কান্ড, ফুলের বৃন্ত ও বীজ খাওয়া যায়। পুরাতন গাছের কন্দ এবং বীজের সাহায্যে এদের বংশবিস্তার হয়।

বর্ষার পর শরতেও এখন পদ্মের সমাহার। দেশের কোথাও ফুটেছে কোথাও আবার ফোঁটার অপেক্ষা। পদ্ম ফুলের পাতায় জমে থাকা পানিটিও রঙিন করে মানুষের মনকে।

শুধু সৌন্দর্যই নয় বর্ষা মৌসুমে কোনো কাজ না থাকায় এ বিলে জন্ম নেওয়া পদ্ম ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত পরিবার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় পদ্ম ফুলের চাহিদা থাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিল থেকে পদ্মফুল তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। বিল এলাকায় মূল্য কম থাকলেও শহরে এক একটি ফুল ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া এ বিলের পদ্ম ফুল ঢাকা, খুলনা, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা। কাজ না থাকা স্থানীয়দের আয়েরও একটা পথ হয়েছে।

বর্তমানে পদ্মফুল ও ফুল বিক্রি করে অনেক দরিদ্র পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। তারা বিল থেকে পদ্মফুল ও ফল তুলে বিক্রি করে দৈনিক ৫ থেকে ৬’শ টাকা উপার্জন করছেন। এ দিয়ে ভালোভাবে তাদের সংসার চলছে।

বর্ষা মৌসুমে চারিদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপি রং এর পদ্ম দেখলে মন ও জুড়িয়ে যায়। চোখ যত দূর যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। এমন অপরূপ দৃশ্য ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছে শতশত

জলের উপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হেসে ওঠে লাল-সাদা হাজারো পদ্ম। জলাভূমি ও বিলেঝিলে ফুটে থাকা পদ্মফুল যে কোন মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে অন্যরকম এক অনুভূতি। ভাসমান একেকটি পদ্মের রূপশোভা অভিভূত করে যে কোন বয়সকে। ছবির মতো সাজানো, হৃদয়কাড়া দৃশ্য আটকে রাখতে পারে না দুরন্ত শৈশবকে।

বিলে-ঝিলে সবুজ প্রান্তর আর পদ্ম ফুলের সৌরভ বিমোহিত কওে মনকে। এখানে এলে বাতাসেও ছুঁয়ে যায় ফুলের ঘ্রাণ। নয়নাভিরাম এমন দৃশ্য গ্রামীণ জীবনে ডেকে আনে একটু প্রশান্তি আর কারো কারো জীবনে পদ্ম নিয়ে জড়িয়ে আছে কতই না স্মৃতি।

কেবল পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে নয়, ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ এই পদ্ম সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে আমরা এর যে কান্ডটি আছে সেটাকে যদি এনে পুকুরে লাগাই তাহলে এখান থেকে প্রচুর উৎপাদন করা সম্ভব।’

লালপদ্ম বা রক্তপদ্ম, শ্বেতপদ্ম কিংবা নীল পদ্ম চোখে পড়ে প্রকৃতির রূপ তবে আগের মতে পানির প্রাচুর্যতা না থাকায় দিনের পর দিন জৌলুস হারিয়ে ফেলছে বিলঝিল গুলো। তাইতো আগের মতো আর পদ্ম কিংবা শাপলার সৌন্দর্য চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে পদ্ম কাটার সাথে যুদ্ধ করে পদ্মফুল সংগ্রহের এমন চিত্র সত্যিই মুগ্ধ করে। সারা বছর পানি থাকে এমন জায়গায় পদ্ম ভাল জন্মে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর