অভিজাত আসনে ভিআইপিদের আনাগোনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারা। পরিকল্পিত এ আবাসিক এলাকার পাশাপাশি ক্যান্টনমেন্টের সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকা। দেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি ‘কী পয়েন্ট ইনফ্রাস্টাকচার-কেপিআই’ এরিয়া কূটনৈতিক জোন ও ক্যান্টনমেন্টের অবস্থান এ আসনটিকে করে তুলেছে গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পিত আবাসিক হলেও মোটেই শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশ নেই বনানী-গুলশানে। রাজনৈতিক প্রভাব আর অর্থবিত্তের জোরের কাছে উপেক্ষিত হয়েছে আবাসিকের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিয়ে সরকারি নীতি-নির্দেশনা। দূষণের শিকার হয়েছে গুলশান লেক। বিস্তৃত হয়েছে মাদক বাণিজ্যের নেটওয়ার্ক। রাস্তাঘাটের
সংস্কারসহ নানাখাতে উন্নয়ন হলেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আধিক্য ও যানজটসহ নানা সমস্যা ম্লান করছে অভিজাত এলাকার মহিমা। অন্যদিকে এই আসনের অন্তর্গত সাততলা বস্তি, কড়াইল বস্তি, ভাষানটেকের মতো এলাকায় রয়েছে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের বসবাস। আগামীতে গুলশান-বনানী-বারিধারার আবাসিক চেহারা ফিরিয়ে আনা এবং দরিদ্র এলাকাগুলোর উন্নয়নই হবে এ আসনের প্রার্থীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক হেভিওয়েট নেতা।
পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন থেকে এ আসনের এমপি হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ, বিএনপি’র মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের একেএম রহমতউল্লাহ। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাসের কারণে ঢাকা-৫ ভেঙে পরিণত হয় তিনটি আসনে। দশম জাতীয় নির্বাচনে গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাষানটেকের একাংশের সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রার্থী হন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি ও বিএনএফ-এর দুই শীর্ষ নেতা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এরশাদের মনোনয়ন জটিলতা তৈরি হলে আওয়ামী লীগের সমর্থন পান বিএনএফ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ এবং তিনি বিজয়ী হন।
আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অভিজাত এ আসন থেকে ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ। অন্যদিকে দ্বিতীয়বারের মতো মহাজোটের সমর্থন চাইবেন বর্তমান এমপি ও বিএনএফ’র চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল এলায়েন্স-বিএনএ তথা জাতীয় জোট ও তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) ফারুক খান। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকে ভোটের লড়াইয়ের নামার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের অর্থ সম্পাদক মো. ওয়াকিল উদ্দিন। নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে কৌশলে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বিগত দুই নির্বাচনে এ আসনে জোটের শরিক দলের প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আগামী একাদশ নির্বাচনেও এ আসনটি চাইছেন শরিক দলের নেতারা। পাশাপাশি বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের মনস্থির করেছেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা চাইছেন নিজ দলের প্রার্থী। দলটির মহানগর নেতা ওয়াকিল উদ্দিন প্রকাশ্যে তৎপরতা শুরু করলেও আলোচনায় রয়েছে নীতি-নির্ধারক ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নাম। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, একাদশ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহেনা। তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচন করলে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হবেন ফারুক খান। এদিকে বর্তমান এমপি বিএনএফ-এর আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, কূটনৈতিক জোনের অবস্থান এ আসনে হওয়ায় কূটনীতিকদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে ঢাকা-১৭ আসনের এমপি’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু দেশ-বিদেশ তো দূরের কথা সরকারের উন্নয়নের প্রচারণা চালিয়ে গুলশানেই একটি ফেস্টুন ওঠেনি তার নামে। ভিন্ন দলের হওয়ায় আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি-কর্মকাণ্ডে স্থানীয় এমপিকে পাওয়া যায় না। গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মশিবুর রহমান মুকুল বলেন, দল ক্ষমতায় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ভিন্ন দলের এমপি হওয়ায় এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। দলের কাছে একটাই প্রত্যাশা যেন, জোটের নামে ভিন্ন দলের কাউকে এখানে মনোনয়ন না দেয়া হয়। অন্যদিকে বিএনএ ও তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন লব্ধ প্রতিষ্ঠিত চরিত্র। গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সবসময় সরব তিনি। জাতীয় সংসদে বহুবার প্রতিনিধিত্বকারী এ নেতা একাধিক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েকবার। বিএনপি’র রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার পর নতুন দল জোট গড়েন তিনি। বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-১ ও ঢাকা-১৭ আসন নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারিখাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ. রহমান এবং জাতীয় জোট ও তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ও মহানগরের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, কূটনৈতিক জোন ও ক্যান্টনমেন্টের ভোটারদের কথা বিবেচনায় রেখেই এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হয়। ধানের শীষের প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী মে. জে. (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মাড কোরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘ চাকরিজীবনে তিনি সেনাবাহিনীর জিওসিসহ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপিতে অবশ্য গুঞ্জন রয়েছে ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিগত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী তাবিথ আওয়াল।
রাজধানীর অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার মতো ঢাকা-১৭ আসনেও রয়েছে নানা ধরনের নাগরিক সমস্যা। বারিধারার বাসিন্দা সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের এমপির নাম শুনেছি, কোনদিন চোখে দেখিনি। শুনেছি তিনি একটি রাজনৈতিক দলেরও প্রধান। তবে এলাকার সাধারণ মানুষ দূরের কথা সরকারি দলের নেতাকর্মীরাই বলেন তাকে দেখা যায় না। গুলশান-১ এর বাসিন্দা হাবিব খান বলেন, কূটনৈতিক জোন হলেও গুলশান-বারিধারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। হলি আর্টিজান হামলার ঘটনা সেটা সবাইকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। গুলশান এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরে সাবেক এমপি মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম বলেন, গুলশানের এখন প্রধান সমস্যা যানজট। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনার কারণে এ যানজটের সমস্যা প্রকট হয়েছে। মূল সড়কের পাশাপাশি দুইপাশে ভেতরের দিকে অন্তত একটি করে রাস্তা ২-৩ ফিট করে সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। গুলশান-বনানী থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস সরিয়ে নিতে হবে। সেই সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। ঢাকা-১৭ আসনের অন্তর্গত ভাষানটেক, ধামালকোট, মাটিকাটা, মানিকদী, বালুরঘাট, লালসরাই, বাইগারটেক ও আলবদীরটেক এলাকায় প্রায় দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। কিন্তু নানা নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত এসব এলাকা। গ্যাস ও সুপেয় পানির সংকট লেগে থাকে সবসময়। সড়কগুলো ভাঙাচোরা হওয়ায় চলাফেরায় ভোগান্তি পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। ভাষানটেক এলাকায় বেশকিছু বস্তি থাকলেও সেগুলোর উন্নয়নের নেই কোন কার্যকর পদক্ষেপ।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ঢাকা-১৭ সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আসন। তিনি এ আসনের সাবেক এমপি। এটা শতভাগ সত্য এবং নিশ্চিত যে, আগামী নির্বাচনেও তিনি ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচন করবেন। সে জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়াও তিনি রংপুর সদরসহ অন্য আরেকটি আসনেও নির্বাচন করবেন। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে আমরা সম্মিলিত জাতীয় জোট নামে একটি জোট গঠন করেছি। এই জোট থেকে আমরা তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেবো, নির্বাচন করবো। আমরা একটি কর্মসূচিও দিয়েছি। কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা দলকে সংগঠিত ও জোটকে শক্তিশালী করবো।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, কে কোথায় নির্বাচন করবেন সেটা দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড নির্ধারণ করবে। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় রাজনৈতিক দল। দেশের প্রতিটি নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। এ জন্য দলের তরফে জরিপ চলছে। আগামী নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা নিয়ে ফারুক খান বলেন, এখনও তো নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়নি। দল তো এখনও মনোনয়ন চূড়ান্ত করেনি। আমি গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচন করি। আগামীতেও সেখান থেকেই নির্বাচন করতে চাই। এখন যদি দলের প্রয়োজনে আমাকে অন্য কোথাও মনোনয়ন দেন, সেটা ভিন্ন কথা। আমি চাইব এবং আশা করব দল আমাকে গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকেই মনোনয়ন দেবেন। গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্যের নির্বাচনে অংশগ্রহণের গুঞ্জনের ব্যাপারে দলটির নীতিনির্ধারক ফোরামের এ সদস্য বলেন, এখন পর্যন্ত এসব রিউমার। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় নির্বাচন করবেন এখনও আলোচনা হয়নি। প্রতিবারই নির্বাচনের আগে কিছু আলাপ-আলোচনা হয়। গুজব-গুঞ্জন ছড়ায়। তবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনো সদস্য যদি গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে চান তাহলে আমি এবং এলাকার জনগণ তাকে স্বাগত জানাবে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল এলায়েন্স-বিএনএ তথা জাতীয় জোট ও তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। মহাজোটের শীর্ষ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে যদিও এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দেননি। তবে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের তরফে এ ব্যাপারে সবুজ সংকেত পেয়েছি। কিছুদিন পর গুলশানে আমার নিজস্ব ভবন থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবো। তিনি বলেন, আমার চাচা সালমান এফ. রহমান এবার আমারই বিগত নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) থেকে প্রার্থী হবেন। আসনটি আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। আগামী নির্বাচনে দু’জন একসঙ্গে কাজ করবো। ঢাকা-১ আসনে তাকে বিজয়ী করতে আমি আমার প্রয়োজনীয় সবধরনের সমর্থন দেবো। আশা করি আমিও ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনের জন্য তার কাছে প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা পাব। নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দল ও জোটের নেতাকর্মীরা নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। কয়েকদিন আগে আমি ‘ভিশন-২০২৪’ প্রকাশ করেছি। সেখানে আমাদের এলায়েন্সের চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং কর্মপদ্ধতিগুলো তুলে ধরেছি। রাষ্ট্রক্ষমতার মালিক দেশের জনগণ এবং সেটা তাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করব। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন কাজে বিশ্বাসী মানুষ এবং এ পর্যন্ত যা ঘোষণা করছেন তাই বাস্তবায়ন করছেন। আমাদের ধ্যান-ধারণাগুলো যদি প্রধানমন্ত্রীকে ভালোভাবে বুঝানো যায় তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সংসদে তিনিই তা বাস্তবায়ন করতে পারেন। এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কে প্রধানমন্ত্রী বা কারা কমিশনে থাকছে সেটা প্রধান বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের। আমাদের বিশ্বাস রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনা। নাজমুল হুদা বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আগামী নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনটি আমি নৌকা প্রতীকে জাতীয় জোটের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব। তিনি বলেন, নগরজীবনে নানা ধরনের সমস্যা ও সংকট আছে, থাকবে এবং সেটাই স্বাভাবিক। নাগরিক সমস্যাগুলোর সমাধান এবং উন্নয়নের প্রধান দায়িত্ব মেয়রের। নির্বাচিত হলে যে কাজগুলো মেয়রের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে পড়ে সেগুলো বাস্তবায়নে তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করবো।
বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি আদায়ই এখন পর্যন্ত আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা সেটা আদায় করতেই আন্দোলন-সংগ্রাম ও জনমত তৈরি করছি। সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকার সরকারের তরফে তা সৃষ্টির ন্যূনতম লক্ষণও নেই। কিন্তু নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবশ্যই আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তিনি বলেন, আমি দলের তরফে নির্দেশনা পাওয়ার পর ঢাকা-১৭ আসনের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। প্রতিদিনই নানা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে যাচ্ছি।
বিএনএফ চেয়ারম্যান ও বর্তমান এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিগত জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনের জনগণ আমাকে ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য স্বাভাবিকভাবেই আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি। একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং মহাজোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে আমার একটি অবস্থান রয়েছে। নিজ দলের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীসহ নির্বাচনী এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক চমৎকার।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ওয়াকিল উদ্দিন বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এ আসনের এমপি ভিন্ন দলের। ফলে তখন থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গদলের সমস্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছি এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রতিটি অঙ্গদলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আস্থার এবং আত্মার। প্রত্যাশা করি, দীর্ঘদিনের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন এবার পাবো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর